1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিপন্ন জলপাই সবুজ কচ্ছপ, সংরক্ষণে নানা আয়োজন

২৯ মার্চ ২০১০

খোলসের জলপাই সবুজ রঙটাই এর নামের উৎস৷ কি বলুন তো এটা, হ্যাঁ এর নাম জলপাই সবুজ কচ্ছপ৷ সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রজাতিগুলোর একটি হল এটি৷ বিপন্ন প্রাণী৷

https://p.dw.com/p/Mgoq
জলপাই সবুজ কচ্ছপছবি: UNI

হাল্কা গড়নের এই কচ্ছপের গড়পড়তা ওজন প্রায় ৪৬ কিলোগ্রাম৷ খোলস উঁচু গম্বুজের মত, পিঠের খোলসের দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই ফুট৷ খোলসের রঙ পিঠের দিকে গাঢ় জলপাই সবুজ আর বুকের দিকে হলদে সবুজ৷ এই হলো জলপাই সবুজ কচ্ছপ৷

পরিবেশ বিপর্যয় এবং মানুষের নির্মম আচরণের কারণে বাংলাদেশ ভারত এবং শ্রীলংকার সমুদ্র উপকূলে সামুদ্রিক কচ্ছপের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে৷ নিরাপদ আশ্রয়স্থলের অভাবে কচ্ছপ ডিম পাড়তে পারছে না৷ এদিকে জেলেদের জালে আটকা পড়ে এবং সমুদ্র দূষণের ফলে এ প্রাণী মারা যাচ্ছে ব্যাপক হারে৷ এতে ভারতমহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগর উপকূল থেকে কচ্ছপ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

এবার চলুন একটু জেনে নিই এই কচ্ছপের জীবন প্রণালী নিয়ে৷ এই সামুদ্রিক কচ্ছপ উপকূলের পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করে আসছে৷ এরা অনেক বছর বেঁচে থাকে৷ সামুদ্রিক কচ্ছপ পানিতেই থাকে৷ শুধু ডিম পাড়ার সময় স্ত্রী কচ্ছপ বালুচরে উঠে আসে৷ নির্জন-নীরব সৈকতে জোয়ারের সর্বোচ্চ সীমার ওপরে শুকনা বালুচরে স্ত্রী কচ্ছপ ডিম পাড়ে৷ শুকনা বালু সরিয়ে গর্ত করে এক একটি স্ত্রী কচ্ছপ ডিম পাড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি৷ প্রায় ২ মাস পর ডিম ফুটে বাচ্চাগুলো বালির নীচ থেকে ওপরে বেরিয়ে আসে এবং প্রাকৃতির নিয়মেই সমুদ্রে চলে যায়৷

Meeresschildkröte in Australien
ছবি: Susie Bedford, Ningaloo Turtle Program

বাংলাদেশের সামুদ্রিক কচ্ছপ পশ্চিমে সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ-পূর্বের সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যর্ন্ত বঙ্গোপসাগরে বিচরণ করে বলেই জানা যাচ্ছে৷ কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত সৈকত, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের বালুচরে এরা ডিম পাড়তে আসে৷ শীতকাল থেকে বর্ষার শুরু পর্যন্ত এদের ডিম পাড়ার সময়৷

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ হাসিবুর রহমান জানান, কক্সবাজার উপকূল কচ্ছপের প্রজননের জন্য ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে৷ অসংখ্য পর্যটকের উপস্থিতিতে কক্সবাজার সৈকত এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে চলেছে৷ অন্যদিকে সোনাদিয়া দ্বীপে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন কারণে বালিয়াড়ি বিনষ্ট হওয়ায় এখানে কচ্ছপের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ জেলেদের জালে আটকা পড়ে এবং ব্যাপক ভাঙনের শিকার হয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপটিও এখন কচ্ছপের জন্য নিরাপদ নয়৷
প্রতি বছর জেলেদের জালে প্রচুর কচ্ছপ আটকা পড়ে৷ এসব কচ্ছপকে তারা মেরে ফেলে৷ আদিবাসী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম খায়৷ অন্যদিকে উপকূল দূষণের ফলে কচ্ছপের মৃত্যু এবং বংশ বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে৷

এই তো কয়েকদিন আগে জানানো হলো যে প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যের কারণে সমুদ্র দূষন হচ্ছে৷ সেই প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যকে জেলিফিশ মনে করে তা খেয়েও কচ্ছপ মারা যাচ্ছে৷ ডিম পাড়তে এসে কুকুর-শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়েও এদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে৷

সৈকতের বেলাভূমিতে ডিম ছাড়তে আসার সময় নিষিদ্ধ জালে আটকা পড়ে একের পর এক মারা যাচ্ছে মা কচ্ছপ৷ জোয়ারের সময় সাগরজলে ভেসে এসব মরা কচ্ছপ চলে আসছে উপকূলে৷ কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলে প্রায় পাঁচ হাজার নিষিদ্ধ বিহিঙ্গা জাল পেতে রাখা হয়েছে৷ গভীর সাগরে মাছ ধরে আরও প্রায় সাত হাজার ট্রলার৷ এসব পেতে রাখা ও ট্রলারের জালে আটকা পড়েই মা কচ্ছপের মৃত্যু হচ্ছে৷ অনেক সময় জালে পড়া কচ্ছপ পিটিয়ে মেরে ফেলে জেলেরা৷ ওই কর্মকর্তা বলেন, সাগরে গিয়ে এসব জাল জব্দ করার মতো লোকবল ও জলযান আমাদের নেই৷
কক্সবাজারের সামুদ্রিক মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শাহাবুদ্দিন জানান, মূলত শীতের মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস) ডিম ছাড়ার জন্য হাজার মাইল দূর থেকে মা কচ্ছপ উপকূলের দিকে ছুটে আসে৷ এ সময় সাগরে পেতে রাখা জালে আটকা পড়ে অনেক কচ্ছপের মৃত্যু হয়৷ পরে এগুলো জোয়ারের পানিতে তীরে চলে আসে৷ প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ অবস্থা চলছে৷

25.08.2008 DW-TV Global 3000 Turtles
ছবি: DW-TV

পরিবেশ অধিদপ্তরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার উপকূলে কচ্ছপ রক্ষায় ২০০৪ সাল থেকে কাজ শুরু করে৷ এই প্রকল্পের আওতায় সোনাদিয়া দ্বীপে দুটি, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ১টি, ইনানী সৈকতে ১টি ও টেকনাফে ৩টি হ্যাচারি স্থাপন করা হয়েছে৷ সৈকতের প্রাকৃতিক উৎস থেকে কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করে এই হ্যাচারিতে বাচ্চা ফুটানো হয়৷ এই বাচ্চা অবমুক্ত করা হয় সমুদ্রে৷ গত বছর ৪টি হ্যাচারিতে সাড়ে ১২ হাজার ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবে এবার অবস্থা একটু ভিন্ন রকম৷

এদিকে ভারত এবং শ্রীলংকা একই ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে৷ সকলের আশা, পরিবেশ ও প্রাণী সংরক্ষণের এই উদ্যোগ বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করবে জলপাই সবুজ কচ্ছপকে৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পদনা: দেবারতি গুহ