1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাওসার বেগম

হোসাইন আব্দুল হাই৫ ডিসেম্বর ২০১২

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে বিহারি এবং পাঞ্জাবিরা কীভাবে চট্টগ্রামের বাঙালিদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে জবাই করেছে তার নিরব সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা কাওসার বেগম৷ তাদের রক্তচক্ষু থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/16vuy
Mukti Bahini soldiers hold their hands out in prayer to Allah before the torture and execution of four men suspected of collaborating with Pakistani militiamen accused of murder, rape and looting during months of civil war. (AP Photo/Horst Faas, Michel Laurent)
ছবি: AP

চট্টগ্রামে ১৯৫৪ সালের ৩১শে মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন কাওসার বেগম৷ বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান মাওলানা মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান এবং মা নূরুন্নেসা৷ ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন কাওসার বেগম৷ কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁদের ছয় ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের সামনের সারির নেতা ছিলেন৷ তাঁর এক ভাই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আর আরেক ভাই ছিলেন ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক৷

সে কারণে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই পাকিস্তানি দোসর এবং বিহারিদের কুদৃষ্টিতে পড়ে যায় সিদ্দিকুর রহমানের পরিবার৷ তাছাড়া তাদের বাড়িটিও ছিল বিহারি পল্লির পাশেই৷ আর যুদ্ধ শুরুর পরপরই কাওসারের দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ভারত চলে যান৷ এদিকে, চট্টগ্রামের বিহারি ও পাঞ্জাবিরা ঐ অঞ্চলের বাঙালিদের হত্যা করা শুরু করে৷ নারীদের উপর চালায় অকথ্য নির্যাতন এবং বাঙালিদের সব বাড়িঘরে পরিকল্পনামাফিক ঠান্ডা মাথায় আগুন দিতে থাকে৷

Week 49/12 Women 1: Kawser Begum (Part 1) - MP3-Mono

এসময়ের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিডাব্লিউ'কে কাওসার বেগম জানান, ‘‘আমাদের এলাকার বাঙালিদের বাড়িঘরে তারা প্রতিদিনই আগুন দিচ্ছে আর পুরুষদের জবাই করে হত্যা করছে৷ কিন্তু আমরা পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবার আগেই একরকম আটকা পড়ে গেছি৷ এসময় বিহারিরা বাঙালিদের বাজার করতে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছে৷ ফলে বাজার করতে না পেরে আমাদেরকে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে৷ এ অবস্থায় আমাদের এক প্রতিবেশী পাঞ্জাবি সরকারি কর্মকর্তা আমার বাবাকে জানালেন যে, পরদিন রাতেই বিহারিরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে৷ তিনি দয়াপরবশ হয়ে আমার বাবাকে বললেন যে, আপনার এখন পালানোর আর কোন উপায় যেহেতু নেই, আপনারা নিজের বাড়ির মায়া ছেড়ে চুপচাপ আমার বাসায় চলে আসেন এবং আমার একটি ঘরে কয়েকটা দিন থাকেন৷ তাঁর কথা মতো, আমরা চুপ করে তাঁর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলাম এবং ঠিক সেই রাতেই আমাদের বাসায় লুটপাট করা হলো এবং হামলা হলো৷ কিন্তু আমাদেরকে না পেয়ে বাসায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল৷ তবে সেই বাড়িতেও আমাদের বেশিদিন থাকা হলো না৷ চার-পাঁচ দিন পরেই সেই পাঞ্জাবি প্রতিবেশী জানালেন যে, তিনি আমাদেরকে আর সেখানে রাখতে পারছেন না৷ কারণ কীভাবে যেন বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেছে এবং এখন আমরা সেই বাড়ি না ছাড়লে তিনিও চরম বিপদে পড়ে যাবেন৷ এ অবস্থায় বাবার অনুরোধে তিনি আমাদেরকে রাতের আঁধারে তাঁর অনুগত কয়েকজন বিহারি মাস্তানকে দিয়ে আমাদেরকে ফেনি পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন৷''

কাওসার বেগম জানান, তারা পাঁচ বোন, চার ভাই এবং তাদের বাবা মাঝরাতের দিকে বাসা থেকে বের হয়ে পায়ে হেটে ফেনির দিকে যেতে থাকেন৷ এসময় পথের ধারে প্রায় সর্বত্রই দেখেছেন লাশ আর লাশ৷ কোথাও মরদেহ কুকুরে খাচ্ছে৷ আবার কোথাও মরদেহ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে৷ এর মধ্যে মাঝেমাঝেই গুলির আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে দৌড়ে পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদেরকে৷ এরপর এক গ্রামে প্রবেশ করে দেখেন যে, সেই রাতের অন্ধকারে গ্রামের মানুষ পথের পাশে পানি, গুড়, মুড়ি-মুড়কি এসব হাল্কা খাবার সামগ্রী নিয়ে বসে আছে৷ তারা কাওসার বেগমদের মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসা অসহায় মানুষদের একটু জল-খাবার দেওয়ার জন্যেই সেখানে বসেছিলেন বলে জানান তিনি৷

এভাবে সারারাত পথ চলে ভোরের দিকে ফেনিতে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান তারা৷ কিন্তু সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি৷ কারণ শত্রুরা তাদের খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে বলে তারা খবর পান৷ ফলে সেখানেও থাকা নিরাপদ নয় বলে ভারতে গিয়ে যুদ্ধে যোগদানকারী কাওসার বেগমের ভাইদের কাছে খবর পাঠানো হয়৷ তখন তাঁর ভাইয়েরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় কওসার বেগম এবং তাঁর ভাই-বোনদের ভারত নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন৷ ভারতে পৌঁছে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ শুরু করেন কাওসার বেগম৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য