বেনিনের ভুডু ফেস্টিভ্যাল

বেনিন ভুডু উৎসবে শুধু ভুডু অনুরাগীরাই নন, বহু পর্যটক ও কৌতূহলীরাও আসেন৷ দশই জানুয়ারি তারিখটিকে ভুডু দিবস ও সরকারি ছুটির দিন বলে ঘোষণা করা হয় ১৯৯৮ সালে৷

বেনিনের বৃহত্তম ভুডু উৎসব উদযাপিত হয় উইদা শহরের পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন স্মৃতিসৌধটির কাছে৷ এই তোরণটি সৃষ্টি করা হয়েছে অতীতের সেই সব ক্রীতদাসের স্মৃতিতে, যারা এই স্থানটি থেকে জাহাজে ওঠার পর আর কোনোদিন দেশে ফিরতে পারেননি৷

ভুডু ফেস্টিভ্যাল চলাকালীন উইদা-কোতোনুর বেলাভূমিতে শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানই নয়, আরো অনেক কিছু দেখতে পাওয়া যায়৷ কিছু স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটাই হলো বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন৷

ভুডু বেনিনের সর্বত্র৷ উপকূল থেকে বহু দূরে, দেশের অভ্যন্তরে ছোট ছোট গ্রামেও মানুষজন ভুডুর অনুষ্ঠান করেন, যেমন পেতেপা গ্রামে৷ গ্রামটি সাবেক ডাহোমি রাজ্যের রাজধানী আবোমির কাছে৷

বেনিনে ভুডুর কতো অনুসারী বাস করেন, তা কারো জানা নেই৷ একটি সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেনিনে ভুডু চর্চাকারীদের সংখ্যা ১২ লাখ, কিন্তু বাস্তবিক হয়ত তার চেয়ে অনেক বেশি৷ বেনিনে যদি কেউ বলেন যে, তিনি খ্রিষ্টান অথচ গোপনে ভুডুর চর্চা করেন, তাহলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷

বেনিনে ভুডু এতই বিস্তৃত যে, গ্রামে-গঞ্জে নানা ধরনের ভুডু দেবতার বেদী দেখতে পাওয়া যায়৷ এটি হলো পৃথিবী ও বসন্ত রোগের দেবতা জাপাটার বেদী৷

শুধুমাত্র বেদী তৈরি করে দেবতাদের খুশি করা যায় না৷ পুজোআচ্চা আর পুজোর উপচারের দিকেও নজর রাখতে হয়৷ বেনিনে যেমন দেবতার ভোগে বিয়ার, মদ বা সিগারেট দেওয়া চলে৷ একটা মুর্গি বা ছাগল হলেও আপত্তি নেই৷ সেটা নির্ভর করে বিশেষ দেবতাটির পছন্দ-অপছন্দের ওপর৷

যারা জানতে চান, ভবিষ্যতে কি ঘটবে বা ঘটতে পারে, তারা ‘ফা’ নামের ভবিষ্যৎদ্রষ্টার কাছে যেতে পারেন৷ তবে সব প্রশ্ন করা চলবে না৷ যেমন ‘আমি কবে মারা যাব?’, এ প্রশ্নটি নিষিদ্ধ৷

শুধু আচার-অনুষ্ঠান আর হাত গোনাই নয়, ওষধি হিসেবে জঙ্গলের জড়িবুটি সম্পর্কে বিপুল জ্ঞান ভুডু ধর্মে সংগৃহীত রয়েছে, তার মধ্যে বহু শতাব্দী থেকে চলে আসা একটি ম্যালেরিয়ার ওষুধও আছে৷

ফেটিশ হলো ভূতপ্রেত ঢুকে আছে, এমন বস্তু; আর টাবু হল, যা কিছু নিষিদ্ধ৷ বেনিনের ফেটিশের বাজারে ভুডু অনুষ্ঠানের জন্য আবশ্যক সব উপচারই পাওয়া যায়, এমনকি চিতাবাঘের মাথা পর্যন্ত৷

টুরিস্টদের জন্য আছে সুভেনির৷ যেমন এই মূর্তি দু’টি কিনলে নাকি প্রেম বা দাম্পত্যে সফল হওয়া যায়৷ সম্ভবত বিদেশি টুরিস্টদের জন্য তৈরি হয়েছিল এ ধরনের সুভেনির৷

বেনিনের রাজনীতিতেও ভুডুর প্রভাব অনুভব করা যায়৷ উইদার সর্বোচ্চ ভুডু প্রতিনিধি ডাগবো হেউনন জানালেন যে, সব প্রার্থীরাই নির্বাচনের আগে তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে যান৷ তিনি স্বয়ং রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা নেন কিনা, হেইনন তা বলতে রাজি নন৷