1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেবুনদের জানতে নিরলস গবেষণা

১৪ জুন ২০১৭

কেনিয়ার জঙ্গলে বেবুনরা থাকে দল বেঁধে, কেননা, তারা সামাজিক জীব৷ কিন্তু তাদের পরস্পরের প্রতি আচরণ কেমন তা জানার জন্য গবেষকরা বুনো বেবুনদের গলায় জিপিএস-বসানো ট্রান্সমিটার বেঁধেছেন৷

https://p.dw.com/p/2efde
Pavian
ছবি: Sonja Pauen / CC BY 2.0

আফ্রিকা৷ কেনিয়ার জঙ্গল৷ মাক্স-প্লাংক ইনস্টিটিউটের একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল এখানে একটি বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন৷ তারা মুক্ত প্রকৃতিতে বসবাসকারী বেবুনদের দিন-রাত পর্যবেক্ষণ করতে চান, যা তাদের আগে অন্য কোনো গবেষক করেননি৷ এজন্য তারা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে চান৷ বেবুনরা তাদের জটিল সামাজিক সম্পর্ক কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, তা জীববিজ্ঞানীদের কাছে এখনও অনেকটাই অজানা৷

প্রাইমেট গবেষক মেগ ক্রোফুট বলেন, ‘‘ একদল প্রাণী কীভাবে একটা আপোশে পৌঁছায়, সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, সেটা বোঝা একটা সামাজিক গোষ্ঠীতে বেঁচে থাকার মুখ্য চ্যালেঞ্জ৷''

প্রাইমেট, অর্থাৎ সর্বোচ্চ শ্রেণির স্তন্যপায়ী জীবদের নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাদের অন্যতম মেগ ক্রোফুট৷ তিনি এই বেবুনদের গলায় উচ্চমানের জিপিএস ট্রান্সমিটার বেঁধে দিতে চান, যেটা খুব সহজ কাজ নয়৷ প্রথমে বেবুনগুলোকে মানুষের উপস্থিতি সইয়ে নিতে হবে৷ তারপর তাদের খাবারের লোভ দেখিয়ে কাছে আনতে হবে৷ পরিকল্পনাটা কাজ করবে কিনা, তা ঈশ্বরই জানেন৷ 

মেগ ক্রোফুট বলেন, ‘‘এই প্রথমবার একটি গোটা প্রাইমেট গোষ্ঠীকে ট্র্যাক করা হচ্ছে৷ কিন্তু বেবুনদের গলায় এরকম কলার পরানোর জন্য তো আর তাদের মিষ্টি গলায় জিজ্ঞাসা করা যায় না, তারা কলার পরবে কিনা৷ ওভাবে কাজ হয় না৷ কাজেই আমাদের তাদের ধরতে হবে কিংবা অজ্ঞান করতে হবে৷''

অভিযাত্রী

ভোরবেলায় দলটি বেরোয় জঙ্গল অভিমুখে৷ বেবুনরা এখনও ঘুমোচ্ছে৷ কাজেই বেবুনদের খাবার ঠিক ঠিক জায়গায় রাখার জন্য গবেষকদের হাতে আর বিশেষ সময় নেই৷ বেবুনরা গবেষকদের দেখে ফেললে চলবে না, কেননা, তাহলে ওরা মানুষ দেখলেই ভাববে, এর কাছে খাবার পাওয়া যাবে৷ ফলে বেবুনরা খাবারের খোঁজে গ্রামেও ঢুকতে পারে৷

অনেকটা জায়গা জুড়ে টোপ রাখা হয়েছে৷ বেবুনদের যতটা পরস্পরের থেকে আলাদা রাখা যায়, ততই ভালো৷ সত্যিই বেবুনরা শান্তিতে খেতে শুরু করল৷ কিন্তু তারা কি খাঁচার মধ্যে পা দেবে? মেগ ক্রোফুটের সেটাই চিন্তা৷

মেগ ক্রোফুট বললেন, ‘‘বেবুনরা খুবই সামাজিক৷ তার অর্থ, পুরো দলটা অধিকাংশ সময় খুব কাছাকাছি থাকে, অপেক্ষাকৃত ছোট একটি এলাকা জুড়ে৷ কাজেই একটা সমস্যা ছিল এই যে, একটি বেবুন ফাঁদে পড়লে দলের বাদবাকি বেবুনরা সেটা দেখবে ও শিগগিরই ফাঁদ এড়িয়ে যাওয়ার পন্থাটা শিখে যাবে বা ভয় পেয়ে দৌড় দেবে৷'' 

খাঁচাগুলো জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে ও ভেতরে খাবারের টোপ রাখা হয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত আর কেউ একসঙ্গে এতগুলো বেবুনকে ধরার চেষ্টা করেনি৷ সেটা কি সম্ভব হবে? অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই৷ বেবুনরা কি ফাঁদে পা দেবে? 

বেবুন ধরা

ধীরে ধীরে তৃণভূমি যেন জেগে উঠছে৷ প্রথম বেবুনরা কাছে আসছে৷ গবেষকরা ঘুমপাড়ানোর ওষুধ ভরা সিরিঞ্জ তৈরি করছেন৷ মেগ ক্রোফুট বললেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, বেবুনরা যেসব গাছে ঘুমায়, সেখান থেকে তারা বেরিয়ে আসছে; শুনতে পাচ্ছি, কীভাবে ওরা কচমচ করে দানা খাচ্ছে৷ কাজেই আমরা জানছি যে, ওরা ফাঁদে পড়ার জায়গায় পৌঁছে গেছে৷ আমরা চার-পাঁচটা খাঁচার লোহার দরজা হড়কে নেমে আসার শব্দ শুনতে পেয়েছি৷ মজার কথা, বেবুনরা কোনো চেঁচামেচি করছে না৷ খাঁচার মধ্যে আটকা পড়েও শুধু খেয়েই চলেছে৷ সব কিছু বেশ ঠাণ্ডা, চুপচাপ৷''

অর্থাৎ প্ল্যানটা ঠিকই কাজ করেছে৷ পরের চ্যালেঞ্জ হলো, বেবুনগুলোকে সাবধানে তুলে নিয়ে গিয়ে গলায় জিপিএস ট্রান্সমিটার বসানো কলার পরাতে হবে৷ খানিকক্ষণের মধ্যেই সবগুলো বেবুনকে ছেড়ে দেওয়া হলো৷ এখন তাদের গলার ট্রান্সমিটার আগামী দু'সপ্তাহ ধরে অনবরত তথ্য পাঠাবে৷

সেই তথ্যের প্রাথমিক মূল্যায়নই গবেষকদের চমকে দিয়েছে৷ গোড়ায় মনে হতে পারে যে, দলের ভিতর প্রাধান্যের পরম্পরায় কোনো নড়চড় হতে পারে না, পালের গোদা যা বলে বা করে, বাকিদেরও তাই করতে হবে৷ কিন্তু গবেষকরা অবাক হয়ে দেখছেন যে্, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি শেষমেশ সকলে মিলেই নেওয়া হয়৷ সকলের জন্য যদি পর্যাপ্ত খাবার না থাকে আর শুধু কর্তৃত্বের বিচারে ওপর দিকের প্রাণীগুলিই পেট ভরে খেতে পায়, তাহলে সকলে দল বেঁধে অন্য কোথাও যায়৷

গবেষকরা খুশি যে, তাঁরা বেবুনদের আচার-আচরণ বোঝার পথে আরো এক ধাপ এগোতে পেরেছেন৷ তবুও এটা শুধু একটা সূচনা৷ পরের বছর তাঁরা আবার ফিরবেন ও গবেষণা চালিয়ে যাবেন৷