1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট ডিলমা রুসেফ

১৪ নভেম্বর ২০১০

বাষট্টি বছর বয়সি বামপন্থী রাজনীতিক ডিলমা রুসেফ ২০১১ সালের প্রথম দিন থেকে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ব্রাজিলের৷ তিনি হচ্ছেন ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট৷

https://p.dw.com/p/Q8Ck
ডিলমা রুসেফ (ফাইল ফটো)ছবি: picture-alliance/dpa

মার্কিন ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় বিশ্বের ১৬তম ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে উঠে এসেছেন তিনি৷

ডিলমা রুসেফের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর৷ উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে উঠেন তিনি৷ তাঁর বাবা ছিলেন বুলগেরিয়ান বংশোদ্ভূত একজন কবি এবং ব্যবসায়ি৷ মা ব্রাজিলেরই স্কুল শিক্ষিকা৷ ক্যাথলিক স্কুলের কঠোর পরিবেশ তাঁকে ক্ষুব্ধ করে৷ ১৯৬৪ সালে ব্রাজিলে শুরু হয় সামরিক স্বৈরশাহী৷ চলে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত৷ মত্র সতেরো বছর বয়সেই ডিলমা যোগ দেন একটি মার্কসবাদী গ্রুপে৷ গেরিলার প্রশিক্ষণ নেন৷ ফলে নজরদারী পুলিশের চোখ পড়ে তাঁর ওপর৷ ১৯৬৯ সালে আত্মগোপন করেন তিনি৷ এক পর্যায়ে আটক হন ডিলমা এবং ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ দু'বছর তাকে জেল খাটতে হয়৷ সহ্য করতে হয় নির্যাতন৷ এরপর নতুন করে শুরু হয় পড়াশোনা৷ ১৯৭৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি লাভ করেন৷ সেই সময়ই ডেমোক্র্র্যাটিক ওয়ার্কারস পার্টিতে যোগ দেওয়ার মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে আবার প্রবেশ করেন তিনি৷ রাজনীতি আর ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতার পরিচয় দেন ডিলমা রুসেলফ৷ ৮০ এবং ৯০'র দশকে তিনি রিও গ্রান্ডে ডো সুল প্রদেশে অর্থ, শক্তি, জ্বালানি এবং যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান৷

প্রথম বিয়েটা তাঁর টেকেনি৷ বিচ্ছেদের পর তিনি বিয়ে করেন আইনজীবী কার্লোস আরাওজোকে৷ একমাত্র সন্তান পাউলা৷ গত বছর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে ডিলমাকে৷ চারমাস কেমোথেরাপিও নিতে হয়েছে তাকে৷ অদম্য মনোবল এবং চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি৷

Brasilien Dilma Rousseff Kandidatin Slum Rio de Janeiro Flash-Galerie
মার্কিন ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় বিশ্বের ১৬তম ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে উঠে এসেছেন ডিলমাছবি: AP

ক্ষমতাসীন মধ্যবাম দলের প্রার্থী হিসেবে ডিলমা রুসেফ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্বে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন৷ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্যোসাল ডেমোক্র্র্যাট জোসে সেরা পান ৪৪ শতাংশ ভোট৷ ডিলমার নির্বাচিত হওয়াকে দেশটির জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভার নীতিরই পুনরাবৃত্তি হিসেবে দেখছেন সবাই৷ কেননা ডিলমা লুলারই সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী৷ একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কি করবেন ডিলমা? ডিলমা বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে৷ কেবল কতগুলো সংখ্যা বা অবাস্তব কোনো বিষয় নিয়ে আমার বসে থাকা চলবেনা৷ ব্রাজিলের প্রতিটি নাগরিককে নিয়ে ভাবতে হবে আমাকে৷''

আগামী জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতির হাল ধরতে যাচ্ছেন এই নারী৷ নির্বাচনের পর তাঁর প্রথম পনেরো মিনিটের ভাষণে ঐতিহাসিক পটভূমি থেকে ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর অবস্থানকে তুলে ধরেন ডিলমা৷ বলেন, ‘‘আমি আজ মেয়েদের বাবা-মার চেখে চোখ রেখে বলতে চাই আজকাল মেয়েরা সবই পারে৷''

ডিলমা তাঁর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর কথা উল্লেখ করে দারিদ্র্যের মূলোৎপাটন করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করার কথা বলেন৷ তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর জোর দেন৷ বলেন ধনী দেশগুলোর সংরক্ষণনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কথা৷ ডিলমা বলেন, ‘‘সবার রাজনৈতিক বিশ্বাস ও মতপার্থক্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি সকল ব্রাজিলিয়ানের প্রেসিডেন্ট হতে চাই৷ আমাদের দেশের রাজনৈতিক মান ও আচরণের উন্নতি ঘটাতে হবে৷ আমি এমন রাজনৈতিক সংস্কার করতে চাই, যা প্রজাতন্ত্রী মূল্যবোধের উন্নতি ঘটাবে এবং আমাদের তরুণ গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেবে৷ বিশেষ করে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই প্রেসিডেন্ট লুলাকে৷''

লুলা এখনও জনপ্রিয় হলেও দু'দুবার নির্বাচিত হওয়ার ফলে সংবিধানের শর্ত মেনে তৃতীয়বার প্রার্থী হতে পারেননি৷ ফলে তিনি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেন ডিলমার প্রতি৷ অক্টোবরের ৩ তারিখে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় ডিলমা ৪৭ শতাংশ ভোট পান৷ কিন্তু দলের পক্ষে ৫০ শতাংশের কম ভোট আসায় ৩১ অক্টোবর ডিলমা রুসেফ ও তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোসে সেরার মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়৷

প্রেসিডেন্ট লুলা তাঁর মনোনীত প্রার্থী ডিলমা সম্পর্কে বলেন, ‘‘তিনি যে একটা ভালো সরকার নিয়ে আসতে পারবেন সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নাই৷'' অন্যদিকে সমালোচকরা বলে বেড়াচ্ছেন, তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে৷ তবে ডিলমা বলছেন, তিনি লুলার সরকারের নীতিমালা অব্যাহত রেখে সেটাকেই আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চান৷

প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক