1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্ল্যাকবেরি, আইফোন, ল্যাপটপে আসক্ত এই প্রজন্ম

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১

কর্মক্ষেত্রকে অফিসের বাইরে নিয়ে এসেছেন জার্মানরা৷ অফিসের কথা তারা ভুলতে পারেন না৷ সবসময়ই ল্যাপটপ, ব্ল্যাকবেরি তাদের চোখের সামনে থাকছে৷

https://p.dw.com/p/10Gjp
ছবি: dpa

প্রযুক্তির দিকে থেকে জার্মানি এগিয়ে রয়েছে, এগিয়ে রয়েছে জার্মানরাও৷ কিন্তু এই সাফল্য সবসময়ই কিন্তু ইতিবাচক হয়ে ধরা পড়ছে না৷ জার্মানির তথ্য প্রযুক্তি সংগঠন বিটকম সম্প্রতি একটি জরিপে জানিয়েছে, দুই তৃতীয়াংশ কর্মজীবী জার্মান নাগরিক অফিসের বাইরেও অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন৷ এমনকি ছুটিতে গেলেও অফিসের প্রয়োজনীয় ফাইলপত্র সঙ্গে নিয়ে যান৷ সবসময়ই অফিসকে সঙ্গে রাখা অফিস বা নিজের পেশার প্রতি নিষ্ঠা নয়, বরং আসক্তিই প্রমাণ করে –জানিয়েছে বিটকম৷ একটি সুস্থ মানুষের জন্য তা কি কোন সুখবর?

অফিস কোন কোন দিন হতে পারে অত্যন্ত ক্লান্তিকর৷ প্রতিটি কর্মজীবী মানুষের বেলাতেই এই কথা খাটে৷ কিন্তু তাই বলে সবাই অফিসের টেবিল-চেয়ারের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন না বা অন্য সহকর্মীর ওপর আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়েন না৷ অথচ ব্রিটেনে সম্প্রতি তাই ঘটেছে৷ সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এ ধরণের চিত্র৷

আর ঠিক এদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে জার্মানি৷ এই মুহূর্তে প্রায় প্রতিটি জার্মানের হাতে রয়েছে আইফোন বা ব্ল্যাকবেরি৷ ক্ষণে ক্ষণে তারা দেখছেন অফিসের কেউ খোঁজ করছে কিনা৷ এই মনোভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে যারা প্রচারমাধ্যম, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করছে, তাদের মধ্যে৷ কথাগুলো স্বীকার করেন বেনইয়ামিন রুট৷ তিনি কাজ করছেন বার্লিনের একটি প্রচারমাধ্যম সংস্থায়৷ রুট জানান,‘‘অফিসে সাধারণত প্রতিদিন অন্তত দশ ঘণ্টা থাকতে হয়৷ তবে কোন কোন সময় ১২ বা ১৪ ঘন্টাও কেটে যায়৷ আমার অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করি, ইমেল তার মধ্যে অন্যতম৷ এছাড়া রয়েছে আইচ্যাট, স্কাইপ, ইন্সট্যান্ট মেসেজিং৷ আমাদের প্রায় সবার কাছেই ব্ল্যাকবেরি রয়েছে৷ এর পাশাপাশি রয়েছে নিজস্ব টেলিফোন এবং ফ্যাক্স৷ আমি রাত বারোটার পর একবার শেষবারের মত ইমেল চেক করি, তারপর ঘুমাতে যাই৷ আর ভোর সাতটার মধ্যে উঠে পড়ি৷ সবার আগে যা করি, তাহল ইমেল চেক করা৷ উইকএন্ড বা ছুটিতেও এই রুটিনের কোন পরিবর্তন হয় না৷ আমার মন হয় এর মূল কারণ হল যে ধরণের পেশায় আমি রয়েছি, তাতে তা খুবই স্বাভাবিক৷''

Apple Macintosh iPod Shuffle new generation Flash-Galerie
ছবি: Apple

বেনইয়ামিন অন্যান্য জার্মানদের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়৷ গড়ে প্রায় প্রতি জার্মানই অফিসে প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা সময় বেশি কাটান, বাড়িতে বসে প্রায়ই অফিসের কাজ সারেন, ইমেল চেক করেন৷ মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতাও আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে৷ বিশেষ করে ব্ল্যাকবেরি বা স্মার্টফোন জনপ্রিয়তার শিখর ছাড়িয়ে এখন প্রয়োজনীয়তার পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে৷ আর একারণেই ব্ল্যাকবেরি হাতে মানুষ চলে যাচ্ছে বাসে, ট্রামে, বাড়িতে, বাথটাবে এমনকি সুইমিংপুলের কিনারে৷ আর ব্ল্যাকবেরি ছাড়া ছুটি কাটানো কল্পনাই করা যাচ্ছে না ইদানিং৷

তবে সব কোম্পানিই কর্মীদের ওপর সবসময় চাপ দিতে নারাজ৷ কিছুটা অবসর সময়ের প্রয়োজন তাদেরও রয়েছে৷ ডয়চে টেলেকম সম্প্রতি জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে কর্মীরা তাদের সেল ফোন পুরোপুরি বন্ধ রাখতে পারে৷ তবে বাস্তব সত্য হল জার্মানিতে কোন কর্মীই অফিসের কাজের বাইরে অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য নয়৷

কাজের প্রতি নিষ্ঠা নাকি আসক্তি? – এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী ড. ইসাবেলা হয়সার জানান,‘‘ব্ল্যাকবেরি যারা ব্যবহার করেন, তারা ব্ল্যাকবেরিতে আসক্ত৷ কিন্তু তারা কোন অবস্থাতেই তা স্বীকার করবে না৷ অনেক মানুষ আছে, যারা প্রযুক্তি ছাড়া এক ইঞ্চিও নড়তে পারেনা৷ আমরা সবাই কোন না কোনভাবে ইমেল, এসএমএস, সেল ফোনের ওপর নির্ভরশীল৷ কিন্তু কখনোই কেউ কম্পিউটার বা সেল ফোন বন্ধ করি না৷ সমস্যা এখানেই৷ আমার কিছু রোগী আছে, যাদের আমি ‘বার্ন আউট' রোগী বলে আখ্যায়িত করেছি৷ তাদের একমাত্র চিকিৎসা হল সেল ফোন, ইমেল এবং কম্পিউটার থেকে দূরে থাকা৷ অন্তত সপ্তাহে তিন দিন৷ মানুষ সামাজিক জীব৷ আমরা সবাই সবসময়ই অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই, কথা বলতে চাই৷ এখানে কোন পরিবর্তন হয়নি৷ পরিবর্তন যা হয়েছে তা হল, আজকাল আমাদের ধৈর্য অনেক কমে গেছে – এখনই কথা বলতে হবে, এখনই ইমেলের উত্তর দিতে হবে – এই মনোভাবই হল সর্বনাশের গোড়া৷ ধৈর্যহারা হয়ে যাচ্ছে মানুষ এবং নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছে৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন