1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সামাজিক বাধা ভাঙতে হবে'

সমীর কুমার দে, ঢাকা১০ নভেম্বর ২০১৫

‘‘আমাদের সমাজ রক্ষণশীল৷ কিন্তু তারপরও ঐ পরিবারকেই বয়ঃসন্ধি সংক্রান্ত শিক্ষা দিতে হবে৷ গল্পের ছলে বাবা-মা সন্তানদের যৌন সচেতনতা সম্পর্কে অবহিত করবেন৷ এই শিক্ষার একটি হলো যৌনশিক্ষা৷ এখানে জড়তা দেখালে বাচ্চাদের ক্ষতি হবে৷’’

https://p.dw.com/p/1H3ck
Bangladesch Sexual-Aufklärerin Farhana Mannan
ছবি: privat

ডয়চে ভেলের সঙ্গে একটি একান্ত সাক্ষৎকারে এমন কথা বলেছেন লেখক ও শিক্ষা গবেষক ফারহানা মান্নান৷ ‘বয়ঃসন্ধিকাল ও শিক্ষা' নামে একটি বইও প্রকাশ হয়েছে তাঁর৷ গত ফেব্রুয়ারিতে একুশের বইমেলায় বইটি বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে৷ ডিডাব্লিউ-র সঙ্গে আলাপচারিতার কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো৷

ডিডাব্লিউ: শিশুদের যৌন শিক্ষার প্রধান বাধা কী?

ফারহানা মান্নান: আমাদের রীতি রেওয়াজ৷ এখানে একটা সামাজিক ব্যারিয়ার তৈরি হয়ে আছে৷ কিন্তু এই ব্যারিয়ার দূর করতে হবে৷ কথা শুরু করতে হবে৷ আর এই দায়িত্ব পরিবারকেই নিতে হবে৷ বাবা-মা শিশুদের যৌন শিক্ষা সম্পর্কে অবহিত করবেন৷ খুব আনুষ্ঠানিকভাবে বলবেন, এমনটি নয়৷ বরং গল্পের ছলে, পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে তারা শিশুদের ধারণা দেবেন৷

Bangladesch Sexual-Aufklärerin Farhana Mannan
ফারহানা মান্নানছবি: privat

শিশুরা তো এই বিষয়গুলো বলতে লজ্জা পায়?

হ্যাঁ, কারণ তাদের বয়সটাই এমন৷ ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে শিশুদের শারীরিক পরিবর্তন হয়৷ এই সময়টাতে তাদের মধ্যে এক ধরনের লাজুকতা কাজ করে৷ তাই অভিভাবকদের কাছে বলার চেয়ে বন্ধু-বান্ধবের কাছে শেয়ার করতেই তারা বেশি পছন্দ করে৷ মেয়েরা অবশ্য মায়ের কাছে অনেক কিছুই অকপটে বলে ফেলে৷ কিন্তু ছেলে শিশুরা এগুলো নিয়ে বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে৷ ফলে বাবাদের দায়িত্ব নিয়ে ছেলের সঙ্গে বন্ধুর মতো হয়ে উঠতে হবে৷

কীভাবে কথাগুলো বলবেন অভিভাবকরা?

কীভাবে বলবেন সেটা বাবা-মা'ই ঠিক করবেন৷ বিষয়টা শিশুদের কাছে প্রথমে তাঁদেরই বলতে হবে৷ শিশুদের বোঝাতে হবে যে, এই সময়টাতে তাদের বাইরে ও ভেতরে দুই ধরনের পরিবর্তন আসবে৷ কেন এই পরিবর্তন আসছে, তাও তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে৷ তিনি যখন ছোট ছিলেন তাঁরও যে এই ধরনের একটা সময় পার করতে হয়েছে, সেগুলো গল্প করেই তাদের বোঝাতে হবে৷ তা না হলে শিশুদের বড়ধরনের ক্ষতি হতে পারে৷ তখন তারা বুঝবেই না তার সঙ্গে কী হচ্ছে৷ আর যেটা হচ্ছে সেটা ঠিক না বেঠিক৷

এ বিষয়ে নিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কি পর্যাপ্ত?

না, একেবারেই না৷ বায়োলজিতে এ সব বিষয়ে কিছু কিছু শেখানো হয়৷ কিন্তু বিষয়গুলো পরিষ্কার হয় না৷ যেমন ধরুন, সেক্স, এনাটমি, ইমোশনাল রিলেশনশিপ, জন্মনিয়ন্ত্রণসহ আরো অনেক কিছুই এখানে নেই৷ একটা মেয়ে বয়ঃসন্ধিকাল পার করলেই তাকে সচেতনভাবে চলতে হয়৷ এখানে সে ভুল করলে গর্ভবতী হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে৷ অবাঞ্ছিত এই ‘পেগনেন্সি' তাকে চরম বিপদে ফেলে দিতে পারে৷ তাই এগুলো সম্পর্কে তাকে জানতে হবে৷

আমাদের ধর্ম কি এক্ষেত্রে কোনো বাধা?

না, ধর্মীয়ভাবে আমরা রক্ষণশীল৷ তবে শিশুদের পরিবার থেকে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এই ধরনের শিক্ষা দিলে তো আর কেউ বাধা দিচ্ছে না৷ স্কুলে শিক্ষকরা ছেলে-মেয়েদের আলাদা করে নাটক বা অন্য কোনোভাবে এই শিক্ষা দিতে পারেন৷

শিক্ষা ব্যবস্থায় কি এটা নিয়ে পরিবর্তন আনা দরকার?

না, বইয়ে সব কিছু রাখা সম্ভব নয়৷ তবে পাঠ্যসূচিতে কিছু কিছু বিষয় আনতে হবে৷ এক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের ধর্মীয় বাধা ও সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে৷ আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি, তখন আমাদের এক ম্যাডাম সেক্সপিয়ার পড়াচ্ছিলেন৷ সেখানে একটি ‘কিস' বা চুমু খাওয়ার কথা আসতেই ম্যাডাম এমন লাজুক হয়ে গেলেন যে, মনে হলো এটা যেন বিরাট কোনো খারাপ কথা৷ এমন কথা, যেটা আমাদের সামনে বলা যাবে না৷ আসলে সাবলিলভাবে বিষয়টা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে৷

সরকার কি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে?

সরকার তো অনেক ভূমিকা রাখতে পারে৷ টেলিভিশন বা রেডিও-র মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে পারে৷ নাটক-সিনেমায় বিষয়টা তুলে আনতে পারে৷ আমাদের বর্তমান সরকার কিছু যে করছে না, তা নয়৷ কিন্তু আরো অনেক কিছু করা দরকার৷ আসলে সবচেয়ে বেশি এবং বড় ভূমিকা রাখতে পারে রাষ্ট্রই৷ ফলে পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে৷

আপনি কি ফারহানা মান্নানের সঙ্গে একমত? জানিয়ে দিন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান