1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের পরমাণু চুল্লিগুলি কতটা নিরাপদ?

১৪ মার্চ ২০১১

ভূমিকম্প এবং সুনামির ফলে জাপানে পরমাণু তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণের প্রেক্ষিতে ভারতের পরমাণু চুল্লিগুলির নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানীদের৷

https://p.dw.com/p/10Yqm
ভারতের একটি পরমাণু স্থাপনা (ফাইল ছবি)ছবি: AP

অবিলম্বে ভারতের পরমাণু রিয়্যাক্টরগুলির নিরাপত্তার সবদিক পর্যালোচনার আদেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং৷

ভূমিকম্প ও সুনামি বিধ্বস্ত জাপানের পরমাণু চুল্লিগুলি থেকে তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণের ফলে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তার ঘটনাক্রম পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখবেন কোথায় ত্রুটি ছিল৷ তার প্রেক্ষিতে ভারতের পরমাণু চুল্লিগুলির সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আপদকালীন পরিস্থিতিতে চলতি ব্যবস্থার অতিরিক্ত আর কী কী ব্যবস্থা থাকা দরকার তা পর্যালোচনার আদেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং৷ আজ সংসদে তিনি বলেন, নিরাপত্তার মানদণ্ডে ভারতের পরমাণু চুল্লিগুলি সুরক্ষিত৷ অতীতে ২০০২-এ গুজরাট ভূমিকম্প এবং ২০০৪-এ সুনামির ধাক্কা তা সামলে নিতে পেরেছে৷ জাপানে ২৫ হাজার ভারতীয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাইরে থাকায় কেউ হতাহত হয়নি৷ ৭০ জন রয়েছে বিশেষ ত্রাণ শিবিরে৷ এই বিপর্যয়ে দুঃখপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উদ্ধার কাজে ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ বিমানযোগে পাঠানো হয়েছে ২৫ হাজার কম্বল ও উদ্ধার কর্মীদের একটি দল৷

ভারতের পরমাণু শক্তি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এস.কে জৈন বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুর্ঘটনা আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে না দিলেও ভারতে পরমাণু কেন্দ্রগুলির ভৌগলিক অবস্থান এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিক থেকে বলা যায় জাপানের মত অনুরূপ দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই৷ প্রথমত, ভারতের পরমাণু কেন্দ্রগুলি উপকূলভাগে অবস্থিত নয় এবং উত্তর প্রদেশের নারোরা পরমাণু কেন্দ্র ছাড়া সবকটি কেন্দ্র ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার বাইরে৷ ভারতের পরমাণু কেন্দ্রগুলি এমনভাবে তৈরি যা ভূমিকম্পের তীব্রতা রিশটার স্কেলে সাত পর্যন্ত সহ্য করতে পারে৷ এর বেশি হলে কোন নির্মাণই অক্ষত থাকতে পারেনা৷ ভারতে সাম্প্রতিককালের সবথেকে বড় ভূমিকম্প হয় গুজরাটের ভুজে ২০০১ সালে৷ তীব্রতা ছিল ৭.২ রিশটার স্কেলে৷

পরমাণু বিজ্ঞানী এ কাকোদকর বলেন, তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার তারতম্য হয় স্থানবিশেষে৷ তবে জাপানে তেজস্ক্রিয়তা এত বেশি নয় যে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু দুর্ঘটনার মাপকাঠিতে জাপানের পরমাণু বিস্ফোরণের মাত্রা ছিল পাঁচ, যেখানে রাশিয়ার চেরনোবিল পরমাণু বিস্ফোরণে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ছিল সাত৷ পরমাণু শক্তি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বলেন, ভারতের ২০টি পরমাণু চুল্লির মধ্যে ১৮টিতে ব্যবহার করা হয় ভারী জল এবং দুটিতে বয়েলিং ওয়াটার৷ ইন্ডিয়ান সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য হলো এতে আছে সব পরমাণু কেন্দ্রগুলির জন্য কেন্দ্রীয় অন-লাইন নিরীক্ষণ ব্যবস্থা৷ আছে সব রকম এমারজেন্সি কন্ট্রোল সেন্টার যেখানে পরমাণু কেন্দ্রগুলির মাপকাঠি ও তথ্যউপাত্ত উপগ্রহের মাধ্যমে অন-লাইনে নিরীক্ষণ করা যায়৷ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সঙ্গে সঙ্গে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন৷

আণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রক পর্ষদের চেয়ারম্যান এস.এস বাজাজ বলেন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব জরুরি ব্যবস্থা নেয়া নাহলে রিয়্যাক্টর চালাবার অনুমতি দেয়া হয় না৷ তবে জাপানের ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো নিখুঁত করার দিকে মনোযোগ দেয়া হবে৷ বিরল থেকে বিরলতম পরিস্থিতিতে উদ্ধার ও স্থানান্তরিত করার যথেষ্ট সময় ও সুযোগ আছে. বলেন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রক পর্ষদের চেয়ারম্যান৷

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পরিবেশের দূষণরোধে পরমাণু বিদ্যুৎকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেয়া হয়, কিন্তু দুর্ঘটনাজনিত তেজস্ক্রিয়তার বিপদ সামনে আসায় মানবজাতিকে আবার বিকল্পের কথা ভাবতে হবে৷

প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন