1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১৭ নভেম্বর ২০১৩

ভারতে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে উদ্বিগ্ন পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ৷ কিন্তু এর স্থায়ী প্রতিকারের উপায় বের না করে শুরু হয়েছে একে অপরকে দোষারোপের পালা৷

https://p.dw.com/p/1AIoM
People walk past the hanging carcass of an elephant on a railway bridge in Khunia range in Jalpaiguri district in the eastern Indian state of West Bengal November 14, 2013. At least seven elephants were killed after a passenger train hit a herd of elephants while they were crossing a railway track near a bridge on Wednesday evening, local media reported. REUTERS/Stringer (INDIA - Tags: DISASTER ANIMALS TPX IMAGES OF THE DAY TRANSPORT)
ছবি: Reuters

হাতি ঘাতকের বদনাম যেন ভারতীয় রেল বিভাগের পিছু ছাড়ছে না৷ এই সপ্তাহে উত্তরবঙ্গের ‘এলিফ্যান্ট করিডর' যেন হাতির পালের বধ্যভূমি হয়ে উঠেছে৷ ডুয়ার্স এলাকার বিভিন্ন জঙ্গলের বুক চিরে যাওয়া রেললাইনে চলতি সপ্তাহে ডিব্রুগড়গামী কবিগুরু এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে অন্তত ৬টি হাতি৷ জখম হয়েছে আরো ১০-১২টি৷ এই ধরণের ঘটনা হয়ে থাকে সন্ধ্যার অন্ধকারের সময়৷

উত্তরবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি এবং আলিপুর দুয়ারের মধ্যকার ১৬৮ কিলোমিটার রেললাইনে ২০০৪ সাল থেকে মারা গেছে ৫২টি হাতি৷ তারমধ্যে এবছরেই ১৬টি৷ অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে অন্তত ৫টি হাতির মৃত্যু হয়ে থাকে ট্রেনের ধাক্কায়৷

ট্র্যাজিডির পর বন ও পরিবেশ বিভাগ আসামির কাঠগোড়ায় দাঁড় করায় রেল বিভাগকে৷ অভিযোগ – হাতির মৃত্যু ঠেকাতে যে নির্দেশিকা দেয়া আছে ট্রেন চালক তা মানেন না৷ যেমন রেললাইনের যেসব জায়গা হাতির পালের পারাপারের জন্য চিহ্নিত সেসব এলাকায় ট্রেনের গতি কমিয়ে ২০ কিলোমিটারের বেশি না করার কথা বলা হয়েছে৷ পরিতাপের বিষয় ট্রেন চালক তথা রেল কর্তৃপক্ষ তাতে কান দেয় না৷ তার পরিণামে হাতির মৃত্যু সংখ্যা বছর বছর বেড়েই চলেছে৷

রেল কর্তৃপক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ – চিহ্নিত ‘এলিফেন্ট করিডর' এলাকায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেয়া হয়ে থাকে৷ তবে সদ্য দুর্ঘটনাস্থলটি সম্ভবত ‘এলিফেন্ট করিডর' বলে চিহ্নিত ছিল না৷ এছাড়া হাতির পালের গতিবিধি সম্পর্কে বন বিভাগ থেকে রেল বিভাগকে আগাম খবর দেয়া হয় না৷

এর প্রতিকারের উপায় কী ? গ্রীন সক্রিয়বাদীদের মতে, দ্রুতগামী সব ট্রেন বনভূমি থেকে সরিয়ে অন্য লাইন দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়া উচিত৷ ভারতে ৮৮টি চিহ্নিত ‘এলিফেন্ট করিডর' আছে৷ তারমধ্যে ৪০টি জাতীয় মহাসড়কে, ২১টি রেল লাইনে এবং ১৮টি রেল-কাম-সড়কে৷ অন্যত্র শত শত কিলোমিটার রেললাইন এবং সড়ক চলে গেছে বন্যপ্রাণীর আবাসভূমির মধ্য দিয়ে৷ ভারতের বিশাল রেল নেটওয়ার্কে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হলে গতি কম করাটা কোনো কাজের কথা নয়৷ রেলের আর্থিক দিকের সঙ্গে তাহলে আপোষ করতে হয়৷ সেটা কী মেনে নেয়া যায়? দুর্ঘটনা শুধু গতির জন্য হয় না৷ অন্যান্য কারণও থাকে৷

সমাধান

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেললাইন ও সড়কগুলির অভিমুখ ঘুরিয়ে দেয়া যেতে পারে যেন বন্য প্রাণীকুলের আবাসভূমিকে যতটা সম্ভব বাঁচিয়ে চলা যায়৷ যেমন আলিপুর দুয়ার ও শিলিগুড়ির মধ্যে ৮০ কি:মি: পথ ফালাকাটা দিয়ে ঘুরিয়ে দেয়া যেতে পারে৷ এক কথায় সড়ক ও রেলপথের নক্সা পালটাতে হবে৷ ভারতের শীর্ষ আদালত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, রেল ও সড়কের ওপর বা নীচে দিয়ে হাতি পারাপারের আলাদা রুট করা হলে হাতিরা সেটা দিয়ে যাবে কিনা৷ উত্তরে ইনস্টিটিউটের কর্তা ব্যক্তি বলেন, ‘‘সেটা হাতিরাই বলতে পারে''!

কেনিয়ার জাতীয় উদ্যানে কিন্তু হাতি পারাপারের জন্য এই ধরণের ব্যবস্থা আছে৷ হাতির পালকে সেই পথেই যেতে বাধ্য করা হয়৷ আসামের মানস জাতীয় বন্যপ্রাণী পার্কেও আছে এই ধরণের ব্যবস্থা৷ মোট কথা, উন্নয়নের হাত ধরে বেড়ে চলেছে রেল ও সড়ক নেটওয়ার্ক৷ শোনা যাচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ ভারতীয় ট্রেনের গতিবেগ দাঁড়াতে পারে ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ৩৫০ কি:মি:৷ তার অনেকটা পড়বে অরণ্যভূমিতে৷ এখন পরিকল্পনাকারীদের ঠিক করতে হবে কে অগ্রাধিকার পাবে? উন্নয়ন, নাকি বন্য প্রাণী সংরক্ষণ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য