1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে দুর্ঘটনার কবলে ট্রেন, মৃতের সংখ্যা বাড়ছে

২৮ মে ২০১০

আবার রেলপথে নাশকতা৷ শুক্রবার রাতভোরে ঝাড়গ্রামের কাছে রেল লাইন ভেঙে রেখে লাইনচ্যুত করা হল মুম্বইগামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস-কে৷ এবারও সন্দেহের নজর মাওবাদীদের দিকে৷

https://p.dw.com/p/Nboa
দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চলছেছবি: AP

রেল লাইন খুলে রাখা ছিল৷ ঝাড়গ্রামের কাছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের সরডিহা ও খেমাশুলি স্টেশনের মধ্যবর্তি রেলপথের আপ ও ডাউন, দুটি লাইনেই অন্তত দুটি জায়গায় প্রায় ফুট দেড়েক অংশ কাটা ছিল৷ খোলা ছিল ফিশ প্লেট এবং পেনড্রোল ক্লিপ, যা দিয়ে রেল লাইন-কে জমিতে পাতা স্লিপারের সঙ্গে আটকে রাখা হয়৷ রাত দেড়টা নাগাদ আপ লাইন ধরে যেতে গিয়ে বেলাইন হয়ে যায় জ্ঞানেশ্বরী সুপার ডিলাক্স এক্সপ্রেস-এর ইঞ্জিনসহ মোট ১৩টি কামরা৷ প্রথম পাঁচটি কামরা গিয়ে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে৷ সেই লাইন ধরে আসছিল একটি মালগাড়ি৷ সেটি সজোরে ধাক্কা মারে যাত্রী কামরায়৷

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১৬৫জন আহত যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷ উদ্ধার করা গেছে ৬৭টি মৃতদেহ৷ তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে৷ কারণ দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া চারটি কামরার ভিতরে এখনও আটকে আছে অন্তত ৪০টি মৃতদেহ৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ৮০, আহত প্রায় ২৫০৷ উদ্ধারের কাজে রেলের রেসকিউ টিম-এর সঙ্গে হাত লাগিয়েছে সি আর পি এফ, বি এস এফ, ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম, রাজ্য পুলিশের বিশেষ দল৷ আহতদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার৷

পুলিশি সন্ত্রাসবিরোধী জনসাধারণের কমিটি-র দুটি পোস্টার পাওয়া গেছে রেলপথের ধারে৷ যে পোস্টারে জঙ্গলমহলে যৌথ বাহিনীর অভিযান বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে৷ পুলিশের সন্দেহ, স্থানীয় মাওবাদীরা নাশকতা ঘটিয়েছে ৷ তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি৷ তবে রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্রেন বেলাইন হওয়ার কারণ হিসেবে রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটার তথ্য দিয়েছেন, যার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ বরং প্রশ্ন উঠছে, মাওবাদী এলাকা দিয়ে রাতের যাত্রী ট্রেন যাওয়ার আগে কেন কোনও পাইলট এঞ্জিন চালানো হয়নি৷ জানা গেছে, একমাত্র রাজধানী এক্সপ্রেস ছাড়া প্রায় কোনও ট্রেনের ক্ষেত্রেই এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না৷

রেলমন্ত্রী যদিও ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন, ওই রেলপথে এদিন রাতেও পেট্রলিং যথারীতি হয়েছিল৷ কিন্তু সেই টহলদারির পর, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস আসার যে সময়ের ব্যবধান, সেই সময়টাই কাজে লাগিয়েছে মাওবাদীরা৷ এমনকী এই ঘটনা যে পুরভোটের আগে তাঁকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্ত, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করার কথা বলেছেন তিনি৷

মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যদিও মনে করছেন, মাওবাদীদরাই এই নাশকতা ঘটিয়েছে৷ এদিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে পূর্ব নির্ধারিত একটি সাংবাদিক সম্মেলন তড়িঘড়ি সেরে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়-ও পুরভোটে প্রচারে এদিন রাজ্যে ছিলেন৷ তিনিও খবর পেয়েই সরডিহা চলে যান৷ কেন্দ্র, রাজ্য ও রেল দফতর থেকে হতাহতদের পরিবারের জন্য এদিন আলাদাভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে৷

প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন