1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে নিখোঁজ শিশুর হার বাড়ছে

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১২ আগস্ট ২০১৭

শিশু নিখোঁজের হার যেভাবে বাড়ছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন৷ এছাড়া রাজ্যগুলোর যাতে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেয়, তারও সুপারিশ করেছে তারা৷ নিখোঁজদের বিবরণ সম্বলিত একটি ওয়েবসাইট চালু করা এর মধ্যে অন্যতম৷

https://p.dw.com/p/2i4JF
ছবি: imago/UIG

গোটা ভারতে যত সংখ্যক বাচ্চা হারিয়ে যায়, তার আনুমানিক সংখ্যাটা আঁতকে ওঠার মতো৷ বছরে প্রায় লক্ষাধিক৷ এর অর্ধেকেরও বেশির কোনো হদিশই পাওযা যায় না৷ কীভাবে হারায়, কোথায় যায়, কেন হদিশ পাওয়া যায় না? প্রথমত, পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখে না৷ তাই নিখোঁজ বাচ্চাদের প্রায় ৫৫ শতাংশের খোঁজ পাওয়া যায় না৷ সেজন্য জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন বিভিন্ন রাজ্যের কাছে কয়েকটি প্রতিকারমূলক পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে৷ যেমন নিখোঁজ বাচ্চাদের জন্য অবিলম্বে একটি পৃথক ওয়েবসাইট চালু করা৷ এতে থাকবে নিখোঁজ বাচ্চাদের বিবরণ সম্বলিক তথ্য৷ নিখোঁজ হবার সব ঘটনা পুলিশের কাছে এফআইআর করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশকে তদন্ত শুরু করতে হবে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি হদিস পাওয়া না যায়, তাহলে ইলেক্টনিক প্রচার মাধ্যমে নিখোঁজ বাচ্চার ফটোসহ বিস্তারিত বিবরণ প্রচার করতে হবে৷ এছাড়া রাজ্য পুলিশ সদর দপ্তরের শিশু পাচার এবং অপহরণ দমন তথা ক্রাইম সেলের সঙ্গে তথ্যাদি বিনিময় করতে হবে৷ পাশাপাশি হোমে আশ্রয় পাওয়া বাচ্চাদের খাওয়া পরার দিকেও উপযুক্ত নজর দিতে হবে৷ পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ ব্যাংক চালু করারও দাবি উঠেছে৷

বাচ্চারা কেন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়? সমাজ বিজ্ঞানিদের মতে, এর প্রধান কারণ দারিদ্র্য, পরিবারে দৈহিক ও মানসিক উত্পীড়ন৷ ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে তাঁদের প্রথম আশ্রয়স্থল রেলস্টেশন, বাস-স্ট্যান্ড, মন্দির কিংবা মসজিদে৷ গরিব পরিবারের বাচ্চারাই নয়, আছে সচ্ছল সিঙ্গল পরিবারের কিংবা ভেঙে যাওয়া সংসারের নাবালক-নাবালিকারাও৷ এদের আদরযত্ন করার কেউ থাকে না৷ দেখভাল করার কেউ থাকে না৷ ফলে তিলে তিলে মনে জমে ওঠে ক্ষোভ ও অভিমান৷ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে এরা পড়ে পাচারকারীদের খপ্পরে৷ তারপর তাদের নিয়ে চলে নানান ধান্ধাবাজি৷ নাবালকদের কাজে লাগানো হয় সস্তায় শিশু শ্রমিক হিসেবে কল-কারখানায়, কার্পেট বোনায়, আতসবাজি তৈরিতে, চায়ের দোকানে কিংবা বাড়িতে৷ এমনকি এদের চালান করা হয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতেও৷ সেখানে উটের জকি করা হয় আর গরিব ঘরের নাবালিকাদের বড় বড় শহরে ভালো মাইনের কাজের টোপ দিয়ে পাচারকারীরা গ্রামগঞ্জ থেকে নিয়ে আসে শহরে৷ তারপর ক্রমাগত হাতবদল হতে থাকে৷ ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের পর এদের অনেকেরই স্থান হয় যৌনপল্লিতে৷

‘কিশোর-কিশোরী পাচার হয় বেশি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে’

ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত এনজিও ক্রাই-এর পূর্বাঞ্চলীয় ম্যানেজার অভীক ভট্টাচার্যের বক্তব্যেও একই সুর৷ তিনি বলেন, এর প্রধান কারণ দারিদ্র আর জীবিকার অভাব৷ যেমন পশ্চিমবঙ্গে আয়লা ঘূর্ণিঝড়ের পর বহু পরিবার সর্বস্ব হারায়৷ ভিড় করে শহরে৷ তখন আপাত অজানা লোক এসে বাচ্চাদের বাবা মাকে যদি বলে ওদের ভালো টাকায় কাজ পাইয়ে দেবে, তখন ওদের মা-বাবা সহজ বিশ্বাসে ছেলে-মেয়েদের পাচারকারীদের হাতে ছেড়ে দেন৷ তারপর তাদের আর খবর পাওয়া যায় না৷ অশিক্ষিত গ্রামের মানুষ পুলিশ, কোর্ট-কাছারি করতে অক্ষম৷ কিশোর-কিশোরী পাচার হয় বেশি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে৷ পূর্ব ভারতে সবথেকে বেশি বাচ্চা হারিয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে৷ বেশি পাচার হয় সীমান্ত লাগোয়া মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪-পরগণা থেকে৷ আরেকটা বড় কারণ সাজানো বিয়ে৷ ১৫-১৬ বছরের কিশোরীকে সাজানো বিয়ে করে নিয়ে যায় পাচারকারীরা৷ তারপর হাতবদল হতে হতে শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিণতি দেহব্যবসায়৷

‘ট্র্যাফিকিং রুটে ২৪ ঘণ্টা আমাদের টিম মজুত থাকে’

নাবালিকাদের ওপর হিংস্রতার চরম দৃষ্টান্ত দিল্লি লাগোয়া নয়ডায় বছর কয়েক আগে৷ শিউরে ওঠার মতো ঘটনা৷ পশ্চিমবঙ্গ থেকে টাকার লোভ দেখিয়ে কিছু নাবালিকাকে নয়ডার নিঠারিতে একজনের বাড়িতে কাজে লাগানোর নামে গৃহবন্দি রাখা হয়৷ তারপর তারা বাড়ির মালিক এবং তার ভৃত্যের বিকৃতকামের শিকার হয়৷ এখানেই শেষ নয়৷ শেষ পর্যন্ত তাদের হত্যা করে মাংস পর্যন্ত নাকি তারা রান্না করে খেয়েছিল৷ বাড়িক মালিক এবং ভৃত্য এখনও জেলে৷ উচ্চ আদালত দু'জনেরই ফাঁসির আদেশ দিয়েছে, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি এখনও৷

শিশু পাচার বা নিখোঁজ হওয়ার ক্রমবর্ধমান ঘটনা রোধে শিশু কল্যাণ ও সুরক্ষা সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে ডয়চে ভেলের প্রশ্নের উত্তরে চাইল্ড লাইন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রধান সন্দীপ মিত্র বললেন, ‘‘দেখুন, কোনো বাবা-মাই চাইবেন না তাঁদের বাচ্চাকে কোনো বাজে জায়গায় নিয়ে যাক৷ কিন্তু কী কাজ করবে? সেখানকার পরিবেশে কতটা বিপজ্জনক? – এ সব বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই বাচ্চাদের অভিভাবকদের৷ তাই বাবা-মায়েদের উচিত গ্রামে গিয়ে অন্যদের সাবধান করে দেওয়া৷ তবে শিশু পাচার আটকাতে বছর দেড়-দুই আগে চাইল্ড লাইন ফাউন্ডেশন একটা ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে৷ সেটা হলো, রেলওয়ে চাইল্ড লাইন৷ যদি দেখা যায় দল বেঁধে বাচ্চাদের কেউ ট্রেনে নিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে রেল রুটে খবর আসে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে৷ ট্র্যাফিকিং রুটে ২৪ ঘণ্টা আমাদের টিম মজুত থাকে৷ প্রয়োজনে তত্ক্ষণাত আমাদের টিম হস্তক্ষেপ করে৷ বর্তমানে ভারতের বড় বড় ৩৩টি রেলস্টেশনে এই ব্যবস্থা রয়েছে৷

শিশু নিখোঁজ বন্ধে কি করা উচিত? আপনার মতামত জানান নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান