1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভিক্ষা করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা!

১৬ মে ২০১৭

সেনানিবাসের রাস্তায় ভিক্ষা করলে ভিক্ষুককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে৷ এমন আইন আসছে বাংলাদেশে৷ খবরটি পড়ে বিস্মিত হলাম৷ ভিক্ষুক দেবে ২০ হাজার টাকা জরিমানা! কিভাবে? ভিক্ষা করে? নাকি চুরি-ডাকাতি করে?

https://p.dw.com/p/2d3JN
Bangladesch Dhaka Bettler
ছবি: Farjana K. Godhuly/AFP/Getty Images

বছর দুয়েক ধরে দেশেরবিভিন্ন অঞ্চলকে ভিক্ষুকমুক্ত করার কিছু উদ্যোগ লক্ষ্য করছি৷ এর মধ্যে ভিক্ষুকদের সমাবেশেই এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত করার ঘোষণা দিতে দেখেছি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তাকে৷ 

দেখেছি খুলনা বিভাগকে ভিক্ষুকমুক্তকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৮২জন ভিক্ষুককে ১৯টি সেলাই মেশিন, ১০টি করে মুরগিসহ ১৬টি মুরগির ঘর, ১০৫টি ছাগল, দু'টি গরু ও ২২টি ভ্যান তুলে দেয়ার খবর৷ এ সব পেয়ে ভিক্ষুকরাও হাত তুলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা কোনোদিনই আর ভিক্ষা করবেন না৷

এ সব উদ্যোগের পরও বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তি আছে৷ সব এলাকাতেই আছে ভিক্ষুক৷ কোথাও কম, কোথাও হয়ত বেশি৷

ভিক্ষাবৃত্তির পেছনে অর্থনৈতিক দুরবস্থা ছাড়াও বিভৎস, মর্মান্তিক কিছু বাস্তবতাও থাকে৷ কিছু কিছু আবার সংবাদমাধ্যমের খবর হয়ে আমাদের নজর কাড়ে৷ কিছুদিন আগে সেরকম একটি খবর আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল৷ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র রবিউল ভিক্ষা করতো৷ তার ভিক্ষুক হওয়ার পেছনের কাহিনি জানাতে গিয়ে প্রথম আলো লিখেছিল, ‘‘গুলশানের কড়াইলবস্তিতে পরিবারের সঙ্গে থাকত শিশু রবিউল৷ ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সে নিখোঁজ হয়৷ কয়েক দিন পর দুই হাত কাটা অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে পাওয়া যায়৷ পরে ওই শিশুকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে চিকিৎসা করান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নারী কর্মকর্তা রুকসানা কামার৷ সেখানে রবিউলের কৃত্রিম হাত সংযোজন করা হয়৷ অথচ ওই রবিউলকে দিয়ে এখন রাজধানীর কাফরুল এলাকায় ভিক্ষা করাচ্ছেন তাঁর মা নাসিমা বেগম৷ রবিউলের কৃত্রিম হাতও খুলে ফেলা হয়েছে৷'' প্রতিবেদন প্রকাশের পর রবিউলকে দিয়ে আর ভিক্ষা না করানোর জন্য তার পরিবারকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত৷

সেই আদেশে ছিল ভিক্ষাবৃত্তি মেনে নিতে বাধ্য হওয়া এক শিশুর প্রতি সহানুভূতি, সমবেদনা৷ কিন্তু  সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় বৈঠকে যে ‘সেনানিবাস আইন- ২০১৭' এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেন, তাতে ভিক্ষুকদের জন্য রয়েছে ২০ হাজার টাকা জরিমানার ব্যবস্থা৷ এটা কি জরিমানার নামে এক ধরনের প্রহসন?

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনে বলা হয়েছে, ‘দেশের যে কোনো ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রাস্তাঘাটে মলমূত্র ত্যাগ, মাতলামি, ভিক্ষাবৃত্তি বা জুয়া খেলার শাস্তি হিসেবে ২০ হাজার টাকা জরিমানা' দিতে হবে৷ আরো কিছু অপরাধের জন্যও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে৷ খোলা অবস্থায় মাংস বহন, অনবৃত করে বিকলাঙ্গতা ও ব্যাধি প্রদর্শন, সেনানিবাস এলাকায় অবৈধ নির্মাণ, বেসরকারি বাজার বা কসাইখানা স্থাপন, লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করা, সড়কের সরকারি ভূমি খনন, মাতলামি, আতশবাজি বা গুলি ছোড়াসহ অনেকগুলো কাজকেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে মোট ২১৮টি ধারায় শাস্তিও ঘোষণা করা হয়েছে৷ 

আইনটি অবশ্য নতুন নয়৷ ২৯২টি ধারা নিয়ে এ আইন ৯০ বছর আগেই প্রণীত হয়েছিল৷ ৯০ বছর পরে শুধু ধারা কমিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রা বা জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো হয়েছে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ হাজার ‍গুণও বেড়েছে জরিমানা৷ বিস্মিত হলাম জেনে যে, ভিক্ষুকদের ওপরও নামতে চলেছে ২০ হাজার টাকার জরিমানা!

আশীষ চক্রবর্ত্তী
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

অথচ সড়কের সরকারি ভূমি খনন, বেসরকারি বাজার বা কসাইখানা স্থাপন, লাইসেন্স ছাড়া বাজার বা কসাইখানা খোলা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা – এমন অনেক শাস্তিযোগ্য অপরাধের জরিমানা ভিক্ষুকের চেয়ে কম!

ভিক্ষাবৃত্তি অনেক দেশেই নিষিদ্ধ৷ এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ভিক্ষা দেয়াও সমালোচনাযোগ্য কাজ৷ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টার্নবুলকে তো গত বছরই ভিক্ষা দিয়ে তোপের মুখে পড়তে দেখেছি৷

 

বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তি এখনো অনস্বীকার্য বাস্তবতা৷ মোটা অঙ্কের জরিমানা করলেও এ বাস্তবতাকে রাতারাতি মুছে ফেলা যাবে না৷ বরং ভিক্ষুক হয়ত জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে ভিক্ষাকর্মে আরো বেশি করে নিজেকে নিয়োজিত করবেন৷ কেউ কেউ হয়ত ভিক্ষার টাকা ঘুসে ব্যয় করবেন৷ ঘুসেও জরিমানা থেকে রেহাই না পেলে অন্যপথে রোজগারের কথাও হয়ত ভাববেন কেউ কেউ৷ বাংলাদেশ ধীরে ধীরে মধ্যম আয়ের দেশ হবে, আর ভিক্ষুকরা কি চোর-ডাকাত হবে?

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান