1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভিয়েনার এইডস সম্মেলন

২৬ জুলাই ২০১০

সম্মেলনে একটি কথা বেশ জোর দিয়েই বলা হয় এবং তা হল – মাদকাসক্ত মানুষদের মধ্যে এইডসের সংখ্যা বাড়ছে৷ এর মূল কারণ হল একই সুঁই-এর পুনর্ব্যবহার৷

https://p.dw.com/p/OUZV
মাদকাসক্ত মানুষদের মধ্যে এইডসের সংখ্যা বাড়ছেছবি: UNI

গত সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার চিকিৎসক, গবেষক, বিশেষজ্ঞ এবং কর্মী ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত এইডস সম্মেলনে সমবেত হয়েছিলেন৷ যে বিষয়টি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হল – ব্যবহৃত সুঁই-এর পুনর্ব্যবহার৷ এর মধ্যে দিয়ে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত৷ অথচ এদিকে নজরই দেওয়া হচ্ছে না৷ আসলেই কী তাই ?

এইডস প্রতিরোধে মেয়েদের জন্য সম্প্রতি উদ্ভাবিত হয়েছে এক ধরণের জেল৷ এই জেল ব্যবহারের ফলে এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন মিলনের পরও কোন মেয়ে এইডসে আক্রান্ত হবে না৷ এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রামণ থেকে রক্ষা পাবে সঙ্গিনী৷ এই সাফল্যের পাশাপাশি ভিয়েনার এই সম্মেলনে বেশ জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে মদ্যপানে আসক্ত মানুষদের মধ্যে এইডস রোগ বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি৷ এই বিষয়টির দিকে পশ্চিম বিশ্ব নজর দিলেও পূর্ব ইউরোপ এবং এশিয়ায় এনিয়ে কোন উচ্চবাচ্য নেই৷ অথচ শরীরে মাদক ঢোকানোর সময় একই সুঁই বারবার ব্যবহার করে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ৷

উন্নত দেশে সচেতনতা বেশি

ভিয়েনায় রয়েছে ব্যবহৃত সুঁই ফেলে দেওয়ার জন্য বিশেষ একটি জায়গা৷ সেখানে সুঁইগুলো পরিষ্কার করা হয়৷ ধুয়ে আবার তা ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়৷ হেরোয়েন ছাড়াও আরো অন্য ধরণের মাদক আছে যা ব্যবহার করতে সুঁই প্রয়োজন৷ কোন মাদকাসক্ত ব্যক্তি কিন্তু ব্যবহৃত সুঁইতে হাত দেবে না৷ ২০ বছর বয়স্ক স্টেফান জানাল, কেন এই সাবধানতা৷ স্টেফান বলল, ‘‘সুঁই বদলে ফেলা আমার জন্য খুবই জরুরি৷ এজন্য আমি এখানে নিয়মিত আসি৷ এছাড়া আমি আমার অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে তাদের ব্যবহৃত সুঁই নিতে পারি৷ কিন্তু তা আমার জন্য হবে অত্যন্ত বিপজ্জনক৷''

Flash-Galerie AIDS Projekte
মাদকাসক্ত মানুষ, যৌন কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষদের মধ্যেও এইচআইভি ছড়িয়ে পড়েছেছবি: AP

আসলেই তাই৷ এই সাবধানতার কারণেই ভিয়েনায় রয়েছে সুঁই বদল করার থেরাপি৷ একে হার্ম রিডাকশনও বলা হচ্ছে৷ আর ঠিক এভাবেই অস্ট্রিয়ার মত উন্নত দেশে এইচআইভির বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়েছে৷ গত ২০ বছর ধরেই অস্ট্রিয়ায় এই রোগের বিস্তার ঘটেনি৷ কিন্তু যে দেশগুলো এত উন্নত নয় সে দেশগুলোর কী অবস্থা ? ইউরোপের বাইরের দেশগুলোতে দেখা যাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র৷

ডন ডেস জার্লে বললেন,‘‘এই মুহূর্তে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলে যত এইডসের রোগী রয়েছে তার এক তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রেই এইডস রোগীর ব্যবহৃত সুঁই-এর মাধ্যেমেই ভাইরাস সংক্রামিত হয়েছে৷ মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা একে অপরকে সুঁই এগিয়ে দেয়, মাদকের ঘোরে সেটাই বারবার ব্যবহার করা হয়৷ আর এভাবেই মাদকাসক্ত মানুষ, যৌন কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষদের মধ্যেও এইচআইভি ছড়িয়ে পড়েছে৷''

ডঃ ডন ডেস জার্লে নিউ ইয়র্কের ব্যারন এডমন্ড দ্য রথশিল্ড কেমিক্যাল ডিপেন্ডেন্সি ইন্সটিটিউটে কাজ করছেন৷ একই সঙ্গে তিনি ভিয়েনা ঘোষণাপত্রের সহপ্রণেতা৷ এই ঘোষণাপত্র এইডস সম্মেলনেই ঘোষিত হয়৷ সেখানে বিভিন্ন সরকারকে মাদক বিক্রি নিয়ে নানা ধরণের নীতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে নজর রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়৷ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্যও মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ঘোষণাপত্রে৷

মাদকনির্ভরতা এক ধরনের অসুখ

এনিয়া সারাং জানান, ‘‘একদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বাস করে যে, মাদকের ওপর নির্ভরশীলতা হচ্ছে এক ধরণের অসুখ৷ অন্যদিকে প্রশ্ন করা হয়েছে মাদকব্যবহারকারীর নৈতিক দায়-দায়িত্বকে৷ আমাদের প্রশ্ন, কারা মাদক ব্যবহার করে ? তারা কী সবাই অপরাধী নাকি তারা গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি, যাদের সুস্থ থাকার জন্য একটি বিশেষ মাদকের প্রয়োজন৷''

এনিয়া সারাং মস্কোর আন্দ্রে রিলকভ ফাউন্ডেশন ফর হেল্থ এ্যান্ড সোশ্যাল জাস্টিসের সভানেত্রী ৷ রাশিয়া সহ পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এইচআইভির দ্রুত বিস্তার ঘটছে৷ আশংকা করা হচ্ছে রাশিয়ায় প্রায় দেড় কোটি মাদকাসক্ত মানুষের মধ্যে অন্তত ৩৭ শতাংশই এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত৷ রাশিয়ার আশপাশের দেশেও একই চিত্র৷ এর জন্য অবশ্য সে সব দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণের কড়া আইনকে দায়ী করা হয়৷ এইচআইভি ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছেন যে সব বিশেষজ্ঞ, তারা জানিয়েছেন, এই কঠোর নিয়মকানুনের জন্য ভাইরাসটি আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷

এনিয়া আরো জানালেন, ‘‘ যে সব জনস্বাসাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে সেখানে মানুষ যেতে ভয় পায়৷ তারা হাসপাতালেও যায় না কারণ যদি কোনভাবে পুলিশ খবর পেয়ে যায় তাহলে তো সঙ্গে সঙ্গেই কারাবন্দি হতে হবে৷ ঠিক এ রকম পরিস্থিতিতে ঝুঁকিও বেড়ে যায় অনেক বেশি৷ যেখানে ঝুঁকি থাকে, ভয় থাকে, সেখানে এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে বা বিস্তার রোধে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা সম্ভব নয়৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক