1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি৫ এপ্রিল ২০১৬

অপরাধ দমনের নামে ভুয়ো সংঘর্ষে ঠান্ডা মাথায় হত্যার অভিযোগ ভারতীয় পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা নতুন কিছু নয়৷ এবার তা উঠে এসেছে উত্তর প্রদেশের তরাই অঞ্চলের পিলভিট জেলায় ১৯৯১ সালে সংঘটিত সাজানো সংঘর্ষের তদন্তের রায়ে৷

https://p.dw.com/p/1IPfd
প্রতীকী ছবি
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Pal Singh

সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ নির্দেশে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই তদন্ত করে দেখেছে যে, ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গি সংঘর্ষের ঘটনাটি ছিল নিতান্তই সাজানো৷ খালিস্তানি জঙ্গি সন্দেহে উত্তর প্রদেশের পুলিশ ১০ জন শিখ ধর্মাবলম্বীকে বাস থেকে নামিয়ে তিনটি দলে ভাগ করে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে রাতের অন্ধকারে গুলি করে হত্যা করেছিল৷ প্রায় ২৫ বছর পর, ঐ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে সিবিআই ৪৭ জন পুলিশকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়৷ মোট ৫৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও, তদন্ত চলাকালীন ১০ জনের মৃত্যু হয়৷

জানা যায়, একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের খবরের ভিত্তিতে পুলিশ এই অভিযান চালিয়েছিল৷ খালিস্তানি জঙ্গিরা একটি বাসে করে তীর্থ দর্শনে যাওয়ার খবরে পুলিশ অভিযান চালায়৷ আমার প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ এটা কেন করেছিল? তাদের আসল উদ্ধেশ্য কী ছিল? দেশের চলতি আইন-কানুন আর ফৌজদারি দণ্ডবিধি মেনে আদালতে তা প্রমাণ করা পুলিশের পক্ষে সময়সাপেক্ষ, জটিল এবং শক্ত প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়ায়৷ মামলা চলতে পারে দীর্ঘকাল৷ তারপর অপরাধীরা শাস্তি পেতেও পারে কিংবা প্রমাণাভাবে ছাড়াও পেতে পারে৷ আর ছাড়া পেলে পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের খাতায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের পেশাগত দক্ষতায় কালো কালির দাগ পড়তে পারে৷ ভুয়ো সংঘর্ষের নামে সেটা করলে কর্তৃপক্ষের কাছে বাহাবা পেতে পারে৷ সেইসঙ্গে পদোন্নতির সম্ভাবনাও বাড়ে৷ দ্বিতীয়ত, সাজানো সংঘর্ষ কিনা সেটা প্রামাণ করতে যাবে কে? গেলেও সেটা প্রমাণ করা আরো বেশি শক্ত৷ পিলভিট হত্যাকাণ্ডে ভুয়ো সংঘর্ষটা হয়েছিল গভীর জঙ্গলে রাতের অন্ধকারে৷ আর এই নিয়ে সরকার নিজেও বেশি মাথা ঘামাতে রাজি নয়৷ ধরে নেওয়া হয়, এটা পুলিশের একটা সহজ হাতিয়ার৷ যতক্ষণ না মানবাধিকার সংস্থাগুলি হৈচৈ করছে৷

অনিল চট্টোপাধ্যায়ের ছবি
অনিল চট্টোপাধ্যায়, ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধিছবি: DW

পাশাপাশি এটাও সত্য যে, ঐ সময়ে নেপাল সীমান্তের লাগোয়া উত্তর প্রদেশের তরাই অঞ্চলে ইন্দিরা গান্ধীর অপারেশন ব্লু-স্টার এবং শিখ নিধনযজ্ঞের উত্তাপ তখনও কমেনি৷ খালিস্তানি জঙ্গি তৎপরতা যথেষ্ট সক্রিয় ছিল ঐ অঞ্চলে৷ তারও অবশ্য কারণ ছিল৷ দেশভাগের পর পাঞ্জাবে জায়গা অকুলান হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার পাঞ্জাবি উদ্বাস্তু শিখদের পুনর্বাসনের জন্য প্রচুর জায়গা জমি দেন ঐ সব এলাকায়৷ সেজন্য ঐ অঞ্চলকে বলা হয় মিনি পাঞ্জাব৷ যেমন দেশভাগের পর সাবেক পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালি হিন্দুদের পশ্চিমবঙ্গে স্থানাভাবের জন্য পাঠানো হয় মধ্যপ্রদেশের দণ্ডকারণ্যে, না হয় আন্দামানে৷

এই প্রেক্ষিতে উঠতেই পারে, ২০০৪ সালে কংগ্রেস-জোট সরকারের আমলে গুজরাট রাজ্যে অনুরূপ ভুয়ো সংঘর্ষের বিশেষ তদন্তের রায়ের প্রসঙ্গ, যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ হ্যাঁ, আমি বলছি ইসরাত জাঁহা ও তাঁর তিন সঙ্গিকে পুলিশের সাজানো সংঘর্ষে হত্যার অভিযোগের কথা৷ সে সময়ে মনমোহন সিং সরকার এই মর্মে হলফনামা দেন আদালতে যে, নিহত সবাই ছিল পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু পরে গুজরাটের মোদী সরকারকে নাকি হেয় করতে কেন্দ্রের মনমোহন সিং সরকার সেই হলফনামায় সংশোধন করেন সম্ভবত রাজনৈতিক কারণে৷ অন্তত বলা হচ্ছে এমনটাই...৷

আপনার কি অপারেশন ব্লু-স্টার ও শিখ নিধনযজ্ঞের কথা মনে আছে? থাকলে জানান আপনার অভিজ্ঞতা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান