1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মঙ্গলগ্রহের গভীরে কি লুকিয়ে রয়েছে প্রাণের স্পন্দন?

১৮ অক্টোবর ২০১০

মঙ্গলগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনার আশা নতুন নয়৷ টেলিস্কোপ ও বিভিন্ন মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমে তার সন্ধানও চলছে৷ তবে এবার জমির উপরে নয়, মাটির গভীরে প্রাণের স্পন্দন পাওয়ার আশা করছেন বিজ্ঞানীরা৷

https://p.dw.com/p/PgXN
Mars, মঙ্গলগ্রহ, প্রাণ, বিজ্ঞান, Science
ফাইল ছবিছবি: AP

উল্কাপাতের কল্যাণ

যে কোনো মঙ্গলগ্রহ অভিযানের আওতায় মহাকাশযান পাঠানো হলে তা হয় বায়ুমণ্ডল থেকে অথবা জমিতে নেমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়৷ আশেপাশে যা পায়, যান্ত্রিক হাত বা সেন্সর তা বিশ্লেষণ করে৷ কিন্তু মাটি খুঁড়ে গভীরে গিয়ে পরীক্ষা করার মতো ক্ষমতা এখনো আসে নি মানুষের হাতে৷ এবার সেই কাজে মানুষকে সহায়তা করছে প্রাকৃতিক শক্তি৷ মঙ্গলগ্রহের বুকে আছড়ে পরা উল্কার কারণে একটি এলাকায় যে বিশাল গহ্বর সৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যে উঁকি দিয়ে মানুষ অনেক অজানা তথ্য জানতে পাচ্ছে৷

আজকের মঙ্গলগ্রহের বুকে প্রাণ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে৷ পরিবেশ প্রচণ্ড শীতল ও শুষ্ক, রয়েছে অতি-বেগুনী রশ্মির দাপট৷ ফলে এমনকি ব্যাকটেরিয়ার পক্ষেও সেখানে জন্ম নেওয়া বা টিকে থাকা কঠিন৷ অতীতে কিন্তু মঙ্গলগ্রহের পরিবেশ সম্ভবত অন্যরকম ছিল৷ বাতাসে ছিল বেশ আর্দ্রতা, আবহাওয়া ছিল বেশ মনোরম৷ মোটকথা প্রাণের বিকাশের জন্য এই পরিবেশ ছিল বেশ উপযুক্ত৷

প্রাণের সন্ধানে বিজ্ঞানীরা

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা ‘নাসা'র জনসন স্পেস সেন্টারের দুই বিজ্ঞানী – জোসেফ মিশালস্কি ও পল নাইলস মঙ্গলগ্রহের একটি এলাকা বেশ খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ উল্কাপাতের ফলে সেখানে এক গহ্বর রয়েছে৷ শুধু তাই নয়, উল্কার আঘাতের ফলে মঙ্গলগ্রহের গভীরের মাটি ও পাথর উপরে উঠে এসেছে৷ এই টিলায় কার্বনের অংশই বেশি৷ সাধারণত মঙ্গলপৃষ্ঠের ১ কিলোমিটার গভীরে কালো বাসল্ট স্তরের নিচে এই পাথর চাপা থাকে৷ প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি বছর আগে মঙ্গলগ্রহের বুক জুড়ে অসংখ্য অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এই কালো পাথর সৃষ্টি হয়েছিল৷

মঙ্গলপৃষ্ঠের উপর জেগে ওঠা এই পাথর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যে জলের কারণেও এই পাথরে পরিবর্তন ঘটেছে৷ সেখানে কার্বন ভিত্তিক ধাতুর পাশাপাশি সিলিকেটের অস্তিত্বের প্রমাণও পাওয়া গেছে৷ ‘নেচার জিওসাইন্স' পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মিশালস্কি ও নাইলস এই দাবি করেছেন৷ নাসা'র ‘মার্স রিকনোসেন্স অরবিটার' যান এই পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছিল৷ সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দুই বিজ্ঞানী এই চমকপ্রদ ফল খুঁজে পেয়েছেন৷

পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা

আপাতদৃষ্টিতে এই আবিষ্কারের তেমন কোনো বড় তাৎপর্য নেই৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে কার্বোনেট তৈরি হয় মহাসাগর বা সমুদ্রের নিচে৷ ফলে কোনোকালে মঙ্গলগ্রহেও এমন সমুদ্র ছিল, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ আর জলের আরেক নাম জীবন, একথা তো আমরা সবাই জানি৷ এটা ঠিক, যে মঙ্গলগ্রহে এর আগেও কার্বোনেট পাওয়া গেছে৷ কিন্তু এবারের আবিষ্কারের ফলে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে কার্বোনেট শুধু কোনো সীমিত এলাকায় নয়, মঙ্গলগ্রহের একটা বড় অংশ জুড়েই পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ অতীতে কোনো এক সময়ে মঙ্গলগ্রহের বুকে হয়তো উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের তাণ্ডব দেখা যেত৷ পরে আগ্নেয়গিরির দাপটের ফলে সেই সমুদ্র চাপা পড়ে গিয়েছিল৷

প্রশ্ন হলো, একি শুধু অতীতের কোনো ঘটনা, নাকি আজও মঙ্গলের গভীরে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে? আবার তুলনা করতে হয় পৃথিবীর সঙ্গে৷ পৃথিবীর সমুদ্রের গভীরে মাটিকে কেন্দ্র করে রয়েছে হাইড্রো-থার্মাল জীবজগত৷ সেখানে অনেক প্রাণী জীবনে কখনো সূর্যের আলো না দেখেও দিব্যি টিকে রয়েছে৷ মঙ্গলগ্রহের গভীরেও হয়তো এমন পরিবেশ আজও বজায় রয়েছে, যেখানে এমন প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে এবং রয়েছে৷ মোটকথা আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বাইরে এমন কোনো পরিবেশের সন্ধান পাওয়া যায় নি, যা প্রাণের বিকাশের জন্য এতটা উপযুক্ত৷

তত্ত্ব বনাম বাস্তবতা

প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ না হয় আবিষ্কার করা গেল, কিন্তু প্রাণের অস্তিত্বের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যে কি? কারণ শুধু পৃথিবীর অনুরূপ পরিবেশের সঙ্গে তুলনা করে তাত্ত্বিক ভিত্তিতে একটা আন্দাজ করা যেতে পারে বটে, কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তার মিল নাও থাকতে পারে বলে একদল বিজ্ঞানী মনে করেন৷ তাছাড়া আরও একটি বিষয় নিয়ে তাঁদের মনে সংশয় রয়েছে৷ মঙ্গলগ্রহের টিলার মধ্যে যে কার্বোনেট পাওয়া গেছে, তার উৎস সত্যি মঙ্গলগ্রহের মাটিতেই হয়েছিল, নাকি উল্কার অংশ হিসেবে তা সেখানে উপস্থিত হয়েছে, তাও কেউ জানে না৷

বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে যা হয়, যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির ভিত্তিতে তর্ক-বিতর্ক চলছে৷ উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হল সত্য উদ্ঘাটন করা৷ মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের পক্ষে আরেকটি যুক্তিও রয়েছে৷ তা হলো বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব৷ সেই মিথেন জৈব প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে, নাকি আগ্নেয়গিরির মত কারণে তার সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে৷ কিন্তু দু'টি ক্ষেত্রেই তা প্রাণের সহায়ক হতে পারে৷

বিজ্ঞানীদের মতামত যাই হোক না কেন, মঙ্গলগ্রহে প্রাণের স্পন্দনের খবর পেলে তা হবে মানবজাতির ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা – এবিষয়ে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান