1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মঙ্গোলিয়ার প্রতিভাধর পরিচালক বিয়ামবাসুরেন দাভা

২০ জুন ২০১০

মঙ্গোলিয়ার চলচ্চিত্র পরিচালক বিয়ামবাসুরেন দাভা’র নতুন ছবি ‘টু হর্সেস অফ চেঙ্গিস খান’৷ মহিলা পরিচালক হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যেই সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/NxoO
‘টু হর্সেস অফ চেঙ্গিস খান’ ছবির একটি দৃশ্যছবি: Polyband

বিয়ামবাসুরেন দাভার প্রথম ছবি ‘দ্য স্টোরি অফ দ্য উইপিং ক্যামেল'৷ ছবির শুরুতেই উট নিয়ে একটি গল্প বলা হয়৷ গল্পটি এরকম: এক সময় উটের মাথায়ও শিং ছিল৷ ঈশ্বর খুশি হয়ে তাদের শিং উপহার দেন৷ একবার হরিণ এল উটের কাছে৷ ধার চাইল শিং৷ বললো, পরের দিনই ফেরত দিয়ে যাবে৷ সরল উট বিশ্বাস করল হরিণের কথা৷ শিং ধার দিল৷ কিন্তু হরিণ আর কখনোই শিং নিয়ে ফিরে এল না৷ উট এখনো অপেক্ষা করছে হরিণ কবে শিং ফেরত দিয়ে যাবে – আর কখনো শিং ফেরত পাওয়া যাবে কি? উট তার হারিয়ে যাওয়া শিং-এর জন্য এখনো কাঁদছে৷

‘দ্য স্টোরি অফ দ্য উইপিং ক্যামেল' ছবিতে মূলত গোবি মরুভূমির মানুষদের জীবন, তাদের বেঁচে থাকা, ভালবাসা, আশা-আকাঙ্খাকে তুলে ধরা হয়েছে৷

Mode in der Mongolei
মঙ্গোলিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নারীরাছবি: Jens Roetzsch

বিয়ামবাসুরেনের নতুন ছবি ‘টু হর্সেস অফ চেঙ্গিস খান'৷ এই ছবিতেও রয়েছে মঙ্গোলিয়ার মানুষদের জীবনচিত্র৷ তবে এই ছবিতে আঞ্চলিক ভাষায় গাওয়া বেশ কিছু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন মঙ্গোলিয় গায়িকা উর্না চাহার তুগচী৷ ছবিতে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে মঙ্গোলিয়ার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য৷ তবে ছবির মূল চরিত্র যিনি অভিনয় করেছেন, তাঁকে খুঁজে পেতে বিয়ামবাসুরেনের অনেক সময় লেগেছে৷ অভিনেত্রী খুঁজে পাওয়া প্রসঙ্গে বিয়ামবাসুরেন জানান, ‘‘ঠিক যেই মুহূর্তে আমি আমার ছবির মূল অভিনেত্রীকে খুঁজে পেলাম, সেই মুহূর্ত ছিল ম্যাজিকের মতো৷ ছোটো-খাটো এই মহিলাকে দূর থেকে একটি পাথরের মত মনে হয়েছিল৷ তাঁর মুখের সব বলিরেখা তাঁর অতীত অভিজ্ঞতা, জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ, পাথরের মত বয়স বেড়ে যাওয়া – সব কিছুকেই মনে করিয়ে দিচ্ছিল৷ তাঁর মুখচ্ছবি সত্যিই আমাদের কাছে ছিল এক বিস্ময়৷ সবাই তাঁকে সম্মান করছিল৷ তাঁর সঙ্গে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছিল৷ অন্য সবার সঙ্গে যেভাবে সহজ হয়ে কথা বলা যায় – এই মহিলার সঙ্গে সেভাবে কেউই কথা বলতে পারছিল না৷''

মূল অভিনেত্রীকে খুঁজে পাওয়া

এই বৃদ্ধ মহিলাই হলেন বিয়ামবাসুরেনের ছবি ‘টু হর্সেস অফ চেঙ্গিস খান' এর মূল অভিনেত্রী৷ এই মহিলাও ছবির শেষ দৃশ্যে একটি গান গেয়েছেন৷ এমন একটি গান, যে গান শুধুমাত্র মঙ্গোলিয়ার কয়েকটি গোষ্ঠীই জানে৷ সেসব গোষ্ঠী, যারা ঘোড়া পালন করে, যাদের ঘোড়ার খামার রয়েছে৷ এ ধরণের গান শুধুমাত্র তাদেরই জানা৷ বিয়ামবাসুরেনের উৎকন্ঠাপূর্ণ কন্ঠ, ‘‘আমার প্রথমে মনে হয়েছিল, মহিলার সময়ের প্রয়োজন৷ তাঁকে শান্ত হয়ে পুরো ব্যাপারটি বুঝতে হবে৷ সম্পূর্ণ গানটি মনে করতে হবে৷ যখনই তাঁর গানটি মনে এসেছে, ঠিক ততবারই তিনি প্রচণ্ডভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে বার বার বলেছেন, ‘নাহ্, হচ্ছে না, গানটি আসছে না, সুরে ভুল হচ্ছে৷' এবং ততবারই আমি মনে মনে প্রার্থনা করেছি – এবার যেন হয়, এবার যেন সুর-তাল-লয় সবকিছু ঠিক থাকে৷''

Filmszene Das Lied von den zwei Pferden
গায়িকা উর্না চাহার তুগচীছবি: Polyband

ছবির গায়িক উর্না চাহার তুগচী

গায়িকা উর্না চাহার তুগচীকে নিয়েও গোটা মঙ্গোলিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছেন বিয়ামবাসুরেন৷ উর্নাকে খুঁজে পাওয়াও ছিল কাকতালীয় ঘটনা৷ দু'জনের প্রথম পরিচয় জার্মানির বার্লিন শহরে, একটি দোকানে৷ দু'জনেই মঙ্গোলিয়ার নাগরিক৷ একজন এসেছেন চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া প্রদেশ থেকে, আরেকজন মঙ্গোলিয়া থেকে৷

উর্নার নানী বেহালা বাজাতেন৷ তিনি তাঁর বেহালার ছড়াটি হারিয়ে ফেলেন৷ উর্না বেহালাটি নিয়ে সারা দেশে ঘুরে বেড়ান৷ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন বেহালা নির্মাতাকে৷ নিজ এলাকা, পরিধি, গোষ্ঠী ছাড়িয়ে রাজধানী পর্যন্ত যেতে হয় উর্নাকে৷ চেষ্টা চলে হারিয়ে যাওয়া বেহালা, হারিয়ে যাওয়া সুরকে খোঁজার৷ ছবির গল্পও এটি৷ কিন্তু সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়নি৷ বিয়ামবাসুরেন বললেন, ‘‘আমাদের কোন চিত্রনাট্য ছিল না৷ আমাদের রাজধানী উলান বাটার পর্যন্ত যেতে হয়েছিল৷ সেখানে রাজনৈতিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছিলাম আমরা৷ আমাদের বলা হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব রাজধানী ছেড়ে চলে যেতে৷ আমাদের পালিয়ে যেতে হয়েছিল হাঁটু পর্যন্ত কাদা ভর্তি রাস্তার মধ্যে দিয়ে৷ আমরা আটকে গিয়েছিলেম৷ এভাবেই আমি ছবিটি তৈরি করেছি৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন