1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জর্ডানে পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটর

১ আগস্ট ২০১৭

জেনিভার স্যার্ন গবেষণাকেন্দ্রের কার্যকলাপ আগ্রহীদের কাছে অজানা নয়৷ কিন্তু জর্ডানে এক প্রকল্পের আওতায় যে পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটর বসানোর বিশাল উদ্যোগ চলছে, সে বিষয়ে অনেকেই খবর রাখেন না৷

https://p.dw.com/p/2hTdg
জর্ডানে পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটর বসানোর উদ্যোগ চলছেছবি: DW

ইনফ্রারেড বিকিরণ বিশেষজ্ঞ জিহান কামেল মন দিয়ে নিজের যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করছেন৷ যেমন এই বিশেষ আলোর স্পেকট্রামে তিনি মানুষের কোষ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন৷ সেইসঙ্গে প্রোটিন, লিপিড ও ডিএনএস বিশ্লেষণ করতে পারেন৷ তাঁর ল্যাব এখনো পরীক্ষামূলক হলের অ্যাক্সিলারেটর রিং-এ যুক্ত হয়নি৷ যখন হবে, তখন তাঁর মাইক্রোস্কোপ হয়ে উঠবে সুপার মাইক্রোস্কোপ৷ তখন তিনি একটি কোষ আরও বিস্তারিতভাবে দেখতে পারবেন৷

দু'বছর ধরে জিহান কামেল সেসেমি-তে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যখন এসেছিলাম, তখন এক্সপেরিমেন্টাল হলে কিছুই ছিল না৷ যন্ত্রেও কিছু ইনস্টল করা হয়নি৷ কিন্তু চোখের সামনে সব কিছু ধাপে ধাপে গড়ে উঠতে দেখলে মনে আস্থা জন্মায়, বিশ্বাস হয় একদিন সব কাজ করবে৷ সেসেমি সম্পর্কে সবাই বলে, এখানে স্বপ্ন বাস্তব হয়ে উঠছে৷’’

পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটর – কী সেটা?

জর্ডানের রাজধানী আম্মান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে আল্লান এলাকায় এই প্রকল্প চলছে৷ চারিদিকে গ্রাম্য পরিবেশ৷ মধ্যপ্রাচ্যে সেসেমি একমাত্র পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটর৷ কংক্রিট সিলিং-এর নীচে চলছে এই প্রকল্প৷ চারিদিক ৩ মিটার উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা৷ অ্যাক্সিলারেটর চলার সময়ে সেখানে কর্মরত মানুষদের বিপজ্জনক বিকিরণ থেকে রক্ষা করতে এই ব্যবস্থা রয়েছে৷

এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায় চলছে৷ প্রায়ই রিং-এ পার্টিকেল ভরা হচ্ছে৷ নির্মাণের কাজে বিলম্ব হয়েছে৷ কখনো আর্থিক সংকটও দেখা গেছে৷ স্থাপনার কিছু অংশ ইউরোপ থেকে আমদানি করা হয়েছে৷ এয়ারহার্ড হুটেল মনে করেন, এখানে সব কাজ কিছুটা ধীরে চলে৷ জার্মানির এই পদার্থবিদ ইলেকট্রন অ্যাক্সিলারেটর বিশেষজ্ঞ এবং এই স্থাপনা গড়ে তোলার কাজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা৷ তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্য হলো, এখানে ইলেকট্রন শুধু আবর্তিত হবে এবং কখনোই হারিয়ে যাবে না৷’’

সেই লক্ষ্যে পার্টিকেল আগে আরেকটি ছোট রিং-এ ভরা হয় এবং রকেটের মতো ধাপে ধাপে তার গতি বাড়ানো হয়৷ যথেষ্ট গতি অর্জন করার পর পার্টিকেল চুম্বকের বড় রিং-এর মধ্যে ধেয়ে যায়৷ এয়ারহার্ড হুটেল বলেন, ‘‘যখনই ইলেকট্রন ডাইপোল ম্যাগনেটের মধ্যে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, তখন আলো সৃষ্টি হয়৷ বিকিরণের গোটা স্পেকট্রাম দেখা যায় – মাইক্রোওয়েভ, ইনফ্রারেড, দৃশ্যমান আলো, আলট্রাভায়োলেট, এক্স-রে – সব কিছু৷ এই আলো পরীক্ষার স্বার্থে বিভিন্ন বিমলাইনে ব্যবহার করা হয়৷’’

এক্স-রে পরিমাপ স্থাপনার জন্য যন্ত্রাংশ বসানো হচ্ছে৷ আরবি ভাষায় তার নাম ‘বাসেমা’ – অর্থাৎ ‘যার মুখে মৃদু হাসি’৷ পার্টিকেল ফিজিক্সের জটিল জগতে এক টুকরো কাব্য জায়গা করে নিয়েছে৷ হেমন্তকালে এই অ্যাক্সিলারেটরের পরীক্ষামূলক পর্যায় শেষ হবার কথা৷ তারপর গবেষকরা এসে তাঁদের পরীক্ষা চালাতে পারেন৷ কোন ধরনের পরীক্ষা এখানে করা যাবে, সেসেমি-র বৈজ্ঞানিক বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ইটালির জর্জো পাওলুচি তা জানালেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা পদার্থ ও বস্তু নিয়ে কাজ করি৷ বিচ্ছিন্ন পরমাণু থেকে গোটা মানুষ – সবই বস্তু৷ তাই পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ন্যানো প্রযুক্তি, বস্তুবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানেরও বিস্তারিত প্রয়োগ হয়৷’’

সেসেমি আশা জাগায়৷ নিষ্ঠাবান বিজ্ঞানীরা এখানে কাজ করছেন৷ সেসেমি শুধু গোটা অঞ্চলে বিজ্ঞান চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না, হয়ত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকেও চাঙ্গা করে তুলবে৷

মাবেল গুন্ডলাখ/এসবি