1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মধ্য প্রাচ্যে আধুনিক ক্রীতদাসী

৯ জুলাই ২০১০

ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য, কাজের জন্য, আফ্রিকা এবং এশিয়া থেকে হাজার হাজার মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমায়৷ অনেক মেয়েরই লক্ষ্য মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরবে৷

https://p.dw.com/p/OEja
এশিয়া ও আফ্রিকার মহিলারাই মধ্য প্রাচ্যে আধুনিক ক্রীতদাসে পরিণত হচ্ছেছবি: Mustafiz Mamun

সৌদি আরব ছাড়াও অন্যান্য আরব দেশে কাজের জন্য মেয়েরা যেতে ইচ্ছুক, প্রস্তুত৷ কিন্তু সবকিছুই কী খুব সহজে হয়ে যায় ? দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পেতে কে না চায় ? মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রায় ১৫ লক্ষ মেয়ে বাসা-বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ করছে৷ সেখানে তাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে হাজারো সমস্যার৷ অনেক ধরণের নির্যাতন চালানো হয় এসব মেয়েদের ওপর৷ আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার মেয়ে ফাতমা আতমানের ভাষ্য, ‘‘আমি আমার প্রতিদিনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছিলাম৷ আমি টের পাইনি যে আমার মালিক চারতলা পর্যন্ত আমার পিছু পিছু এসেছে৷ আমি চারতলার বারান্দায় ধোয়া কাপড় নেড়ে দিচ্ছিলাম৷ আমি বুঝিনি যে কেউ আমার পিছু নিতে পারে, আমি তাঁকে দেখিওনি৷ বুঝতে পারছেন ? আমাকে ধাক্কা দেয়া হয়েছিল, তা আমি টের পেয়েছি৷ এর কিছুক্ষণ পরেই আমি নিজেকে একেবারে নীচে আবিষ্কার করি৷ তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল, আমাকে ধাক্কা দেওয়ার পর আমার মালিক ওপর থেকে চিৎকার করছিল, ‘মরে যাও, মরে যাও'৷ শুধু আল্লার কৃপায় আমি বেঁচে গিয়েছি৷ কারণ আমি নীচে সুইমিং পুলের মধ্যে গিয়ে পড়ি৷''

২৬ বছর বয়সি ফাতমা আতমান এই অভিজ্ঞতা কোনদিনই ভুলবে না৷ সেই ধাক্কার ফলে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে ফাতমার৷ সে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে৷ বাকি জীবন তাকে কাটাতে হবে ক্লিনিকে৷ আজ ফাতমার পাশে এসে দাড়িয়েছে তার পরিবার৷ প্রায় দেড় বছর আগে সে কেনিয়া থেকে কাজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে গিয়েছিল৷ পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য৷ সেটা ফাতমা পারেনি বরং এখন প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার টাকা-পয়সাও তাঁর কাছে নেই৷ পরিবারকে আর সাহায্য করতে পারছে না বলে ফাতমা সারাক্ষণই এক ধরণের হীনম্মন্যতায় ভোগে৷ফাতমা জানাল, ‘‘আমি বেশিরভাগ সময়েই ঘুমাতে পারিনা৷ আমি কেনিয়াতে ফিরে আসার পর একেবারে ছোট একটি শিশুর মত হয়ে গেছি৷ আমার নিজেকে এখন একটি বাড়তি ঝামেলা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না৷ আমার দরিদ্র পরিবার, সেখানে আমি সমস্যা বাড়াচ্ছি৷ একারণে আমার খুবই কষ্ট হয়, দুঃখ হয়৷''

Verschleierte Frauen stehen um ein Taxi in Riyad Saudi Arabien
পর্দার আড়ালে লুকিয়ে কার মুখ ?ছবি: AP

অথচ প্রথমে ফাতমা ভেবেছিল সৌদি আরবে সে স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করবে৷ বিদেশে কাজের সুযোগ-সুবিধা করে দেয় এরকম একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে ফাতমা৷ সংস্থাটি জানতো ফাতমা কোথায় যাচ্ছে, কোথায় কাজ করবে কিন্তু ফাতমাকে সংস্থাটি কিছুই জানায়নি৷ সৌদি আরবে নামার পরই এয়ারপোর্ট থেকে সংস্থার একজন এসে ফাতমাকে নিয়ে যায়৷ প্রথমেই ফাতমার পাসপোর্ট তারা নিয়ে নেয়৷ তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সেই বাড়িতে যেখানে ফাতমা গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করে৷ বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই ফাতমা বুঝতে পারে তাকে দিয়ে কোন ধরণের কাজ আদায় করা হবে৷ প্রথমে তাকে দিনে ১৮ ঘন্টা কাজ করতে হত৷ ঘুমানোর জন্য যথেষ্ট সময় ফাতমা পেত না৷ এরপর ফাতমার ওপর শুরু হয় অত্যাচার৷ শারারিক নির্যাতন শুরু করে মালিক এবং তার ছেলে শুরু করে যৌন অত্যাচার৷ ফাতমা বলল, ‘‘যারা দরিদ্র তাদের আসলে কোন ধরণের অধিকারই নেই৷ আমাকে অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল৷ মানসিকভাবে আমার মালিক আমাকে চিরকালের জন্য পঙ্গু করে দিয়েছে৷ আমি এসব কিছুতেই ভুলতে পারবো না৷ আমার ওপর যে সব অত্যাচার করা হয়েছে তা আমি কোনদিনই ভুলবো না৷ আমার মালিক আমাকে অনুভূতিহীন এক জড় পদার্থ বানিয়ে ফেলেছে৷''

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সৌদি আরবে এধরণের মেয়েদের সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছে৷ তারা জানিয়েছে, সৌদি আরবে প্রায় পনের লক্ষ মেয়ে বাড়িতে কাজ করছে৷ তাদের মধ্যে অন্তত ৯ লক্ষ মেয়ে নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের অত্যাচারের মুখে পড়ছে৷ রিয়াদ সরকারের ওপর হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ চাপ দিচ্ছে এসব কর্মীদের মানবাধিকার রক্ষায় নতুন আইন প্রণয়নের জন্য৷ সংস্থার পক্ষ থেকে ক্রিস্টফ উইলকে জানান,‘‘ বাসা-বাড়িতে কাজের মেয়েদের ওপর অত্যাচারের এই সমস্যা শুধু সৌদি আরবেই সীমিত নয়৷ বরং বিশ্বের অনেক দেশেই এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ তবে মধ্য-প্রাচ্যের দেশেই এর মাত্রা সবচেয়ে বেশি৷ তার মধ্যে সৌদি আরব, কুয়েত এবং আরব আমিরাত এগিয়ে৷ সৌদি আরবে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি, এর মূল কারণ হল এই দেশটিতে কাজের মেয়েদের মানবাধিকার রক্ষায় কোন আইন নেই৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক