1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহাকাশে অতিকায় নক্ষত্রের সন্ধান

২ আগস্ট ২০১০

সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাকাশে এক বিশাল নক্ষত্রের সন্ধান পেয়েছেন, যেটি সূর্যের চেয়ে এক কোটি গুণ উজ্জ্বল, ভরও ২৬৫ গুণ বেশি৷ মহাকাশ বিজ্ঞানের এতদিনের হিসাবকে বেশ খানিকটা পাল্টে দিল এই নক্ষত্র৷

https://p.dw.com/p/OZm7
মহাকাশে এক বিশাল নক্ষত্রের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরাছবি: AP

ব্রিটেনের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পল ক্রাউথারের নেতৃত্বে ইউরোপীয়ান সাদার্ন অবজারভেটরি সংস্থার একদল বিজ্ঞানী সন্ধান পান এই অতিকায় নক্ষত্রের৷ এর আগেও চিলির আটাকামা মরুভূমিতে স্থাপিত অতি বিশাল টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশের বেশ কিছু অচেনা বস্তুর সন্ধান পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা৷ এবারের অতিকায় নক্ষত্রের অস্তিত্ব সম্পর্কেও জানতে পারলেন তাঁরা এই মহাকাশ অনুসন্ধান কেন্দ্রটি থেকে৷ অধ্যাপক পল ক্রাউথার-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী সূর্যের চেয়ে এই নক্ষত্র ৭ গুণ গরম, এর আলোকরশ্মি সূর্যরশ্মির চেয়ে ১ কোটি গুণ উজ্জ্বল এবং ওজনও সূর্যের চেয়ে ২৬৫ গুণ বেশি৷

সূর্য ও নক্ষত্র সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের এতদিনকার ধারণা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন করে তুলেছে সদ্য আবিষ্কৃত নক্ষত্রটি, আপাতত যার নাম রাখা হয়েছে R136a1৷ মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আগে হিসাব নিকাশ করে দেখেছিলেন, একটি নক্ষত্রের ভর সূর্যের চেয়ে খুব বেশি হলে ১৫০ গুণ হতে পারে৷ নক্ষত্রের ভর এর চেয়ে বেশি হলে তা সুপার নোভায় পরিণত হয়৷ সুপার নোভা অবস্থায় নক্ষত্ররা তীব্র আলো বিকিরণ করতে করতে এক সময় ক্ষয়ে যায়৷ অবশেষে পরিণত হয় ব্ল্যাক হোলে৷ অনুসন্ধানে অংশ নেয়া শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী রিচার্ড পার্কার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এতদিন পর্যন্ত আমাদের বিশ্বাস ছিল, নক্ষত্রের ওজন খুব বেশি হলে সূর্যের ওজনের চেয়ে ১৫০ গুণ হতে পারে এবং সূর্যকে অবশ্যই খুব ছোট নক্ষত্র বলা যায় না৷ আমাদের আবিষ্কারের মাধ্যমে এই সংখ্যাটা এখন দ্বিগুণ হল, যার ফলে বহু নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷''

নতুন নক্ষত্র নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানী মহলে জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে এখন৷ অনেকে মনে করছেন, হয়তো পাশাপাশি অবস্থানরত দুই নক্ষত্রকে এত দূর থেকে একটি বলে ধারণা করা হয়েছে৷

সৌভাগ্যবশত দানব নক্ষত্রটি আমাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সিতে অবস্থিত এবং পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার আলোকবর্ষ৷ মহাবিশ্বের অনেক নক্ষত্রের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের সূর্যকে মনে হবে নিতান্তই মধ্যম আকারের এক নক্ষত্র৷ বিজ্ঞানী পল বলেন, এই অতিদানব নক্ষত্রকে যদি আমাদের সৌরজগতে রাখা হয়, তাহলে তার ঔজ্জ্বল্যের কাছে সূর্যকে চাঁদের মতই নিস্তেজ মনে হবে৷

অধ্যাপক পল ও তাঁর সহকর্মীরা খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করে জানান যে, এই নক্ষত্রের ভেতরে এক ধরনের ঝোড়ো অবস্থা চলছে৷ যার ফলে এটিকে সূর্যের মত গোলাকার দেখায় না৷ এই বিজ্ঞানীর মতে, এই নক্ষত্রের কক্ষপথে কোনো গ্রহের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা খুব কম৷ কেননা এই ধরনের বিশাল নক্ষত্র অন্য বড় নক্ষত্রের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে, ফলে এর কক্ষ পথে কোনো গ্রহ থাকলেও সেখানে অন্য নক্ষত্রের আলোর কারণে রাত হতে পারত না৷

R 136a1 ছাড়াও আরো কয়েকটি বিশাল নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন জ্যেতির্বিজ্ঞানীরা, যেগুলির ভরও সূর্যের চেয়ে ১৫০ গুণ বেশি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সৃষ্টির সময় অতিকায় নক্ষত্রগুলি আরো বড় ছিল৷ ক্রমাগত তেজরশ্মি বিকিরণ করতে করতে অনেকটাই ওজন হারিয়েছে তারা৷ বিজ্ঞানী ক্রাউথার ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, মানুষের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায় এই ধরনের নক্ষত্র স্থূলাকার নিয়েই জন্ম গ্রহণ করে৷ বড় হওয়ার চেয়ে তারা ছোট হতে থাকে৷ R136a1 নক্ষত্রটি এক মিলিয়ন বছরে ভর হারিয়েছে প্রায় ৫০৷ ধারণা করা হয় জন্মের সময় এর ওজন ছিল ৩২০-এর মত৷

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, অতিকায় নক্ষত্রগুলি ৩০ লক্ষ বছর বেঁচে থাকতে পারে৷ অন্যদিকে সূর্যের মত ছোট নক্ষত্রগুলি আরো দীর্ঘদিন টিকে থাকে৷ বিশাল নক্ষত্রের তুলনায় ১০০০ গুণের বেশি আয়ু তাদের৷ আমাদের সূর্য ৪,৫ বিলিয়ন বছর ধরে আলো বিকিরণ করে যাচ্ছে৷ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, আরো ৫ বিলিয়ন বছর টিকে থাকবে এই নক্ষত্র৷ পরে অন্যান্য ছোট নক্ষত্রের মতই ফুলে ফেঁপে উঠে বিস্ফোরিত হবে৷ ধ্বংস হবে সৌরজগতের সব গ্রহ উপগ্রহ৷ অবশিষ্ট থাকবে ক্ষুদ্র এক নক্ষত্র, যাকে ‘হোয়াইট ডোয়ার্ফ' বা শ্বেত বামন বলা হয়৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন