1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহিলাদের পিছু নেয়া লঘু অপরাধ?

২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নারীদের পিছু নিয়ে উত্যক্ত করাকে এতদিন তুচ্ছ অপরাধ বলে গণ্য করে এসেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ৷ ভারতের শহরাঞ্চলে এক৷ এ জন্য দায়ী প্রধানত পুলিশ-প্রশাসন ও ভারতের সমাজ ব্যবস্থা৷

https://p.dw.com/p/2QjjO
নারীকে উত্যক্ত করা হচ্ছে
ছবি: picture-alliance/dpa

গত ২০শে সেপ্টেম্বর রাজধানী দিল্লির ব্যস্ত রাস্তায় করুণা নামের ২২ বছরের এক স্কুল শিক্ষিকাকে খুন করে এক যুবক৷ খুন করার আগে বহুদিন ধরে করুণার পিছু নিচ্ছিল সে৷ করুণার দেহে ২২ বার ছরিকাঘাতের পর সে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে এবং মারা যায়৷ অথচ রাস্তার লোকেরা নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে, কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি৷ করুণার একমাত্র অপরাধ, সে পিছু নেওয়া যুবকটির এই ধরনের অভব্যতাকে বরদাস্ত করেনি৷

তবে শুধু করুণাই নন, দুই সন্তানের মা ২৮ বছরের আর এক মহিলা তাঁর উত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে অপরাধীর ছুরিকাঘাতে জীবন দেন৷ একই ধরনের এ ঘটনাটি ঘটে দিল্লি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত নয়ডা শহরে৷ মুশকিল হলো, মেয়েদের পিছু নেওয়াটা এ দেশে একটা মামুলি বিষয় বলে মনে করে পুলিশ-প্রশাসন এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজ৷ ফলে আজ এটা একটা বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে৷

জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, দিল্লি শুধু ধর্ষণের রাজধানী নয়, মেয়েদের পিছু নেবার মতো অপরাধের রাজধানী হওয়ার তকমাও পেয়েছে৷ ভারতীয় ফৌজদারি অপরাধ আইনে ২০১৪ সালে পিছু নেবার ৫৪৫টি অপরাধ নথিভুক্ত করা হয়৷ তারপর ২০১৫ সালে গোটা দেশে মোট ৬২৬৭টি অনরূপ অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়, তারমধ্যে দিল্লিতেই ১১২০টি৷

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মেয়েটির পূর্ব পরিচিত ছিল ছেলেটি৷ শুরুতে সামাজিক মানসম্মান বজায় রাখতে মেয়েটির অভিভাবকরা ছেলেটিকে ডেকে একটা মিটমাট করার চেষ্টা করেন৷ কারণ পুলিশের কাছে গেলে পুলিশও বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিয়ে মিটমাট করারই পরানর্শ দিয়ে থাকে৷ দেখা গেছে, যেসব মেয়েরা এর শিকার হয় বা হয়েছে, তাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৩০-এর মধ্যে৷ আবার এমনও দেখা গেছে যে, লাগাতার পিছু নিয়ে উত্যক্ত করার কথা একটি স্কুল ছাত্রী তাঁর মা-বাবাকে জানানোর পর, তাঁরা মেয়েটির নিরাপত্তার কথা ভেবে মেয়েটিকে বোর্ডিং-এ পাঠিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থেকেছেন৷ বলাই বাহুল্য, অভিভাবকরা কোনো ঝামেলার মধ্যে যেতে চাননি৷ মেয়ে হয়ে জন্মেছে বলে মেয়েদেরই তার দাম চুকাতে হয়েছে দিনের পর দিন৷ আর সে জন্য একটা গ্লানিবোধ মেয়েটিকে খেয়েছে কুরে কুরে৷

কিন্তু মেয়েদের মধ্যেও প্রতিবাদী মেয়ে আছে৷ তাঁরা কিছুতেও এই অসভ্যতা নীরবে মেনে পারেন না৷ তাই জীবন দিয়েও তার দাম চুকাতে চায় তাঁরা৷ এঁদেরই একজন দিল্লির স্কুল টিচার করুণা৷ কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই প্রতিবাদ না করাকে সম্মতির ইঙ্গিত বলে মনে করে আসকারা পেয়ে যায় ঐ সব বখাটে ছেলেরা৷ দিনে-রাতে যখনই মেয়েরা বাইরে যান, ছায়ার মতো তাঁদের অনুসরণ করে মেয়েটিকে উত্যক্ত করতে থাকে ছেলেরা৷ জিজ্ঞাসা করলে বলে মেয়েটিকে সে ভালোবাসে৷ মেয়েটি ভালোবাসে কিনা তার পরোয়া না করেই!

সমাজবিদদের মতে, পপ কালচারে পিছু নেওয়া যুবকদের রোম্যান্টিক তকমা দেওয়া হয়৷ মনস্তাত্ত্বিকদের মতে, মেয়েদের ফলো করা এক ধরনের মানসিক ব্যাধি৷ দিনের পর দিন সে মেয়েটির জন্য রাস্তাঘাটে, স্কুল-কলেজে-অফিসের বাইরে বসে থাকে৷ বাইরে এলেই তাঁকে ফলো করে, যতক্ষণ না সে তাঁর প্রেম গ্রহণ করছে৷ এ নিয়ে বিস্তর সিনেমা হয়েছে৷ আর সেটাও ঐ সব যুবকদের মনে ছাপ ফেলে৷ কিন্তু বাস্তবে কী তাই হয়? উত্যক্ত হবার পর রুখে দাঁডালেই তাঁকে খুন হতে হয় বাস্তবে, হয় ছরিকাঘাতে না হয় অ্যাসিডে৷

মনস্তাত্ত্বিকদের মতে, কোনো মেয়ে প্রত্যাখান করলে ছেলেটির পৌরুষত্বে আঘাত লাগে এবং সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷ রাগে, ঘৃণায় সে হয়ে ওঠে হিংস্র৷ আর সে কারণেই বিষয়টিকে এখন আর লঘু করে দেখার সময় নেই৷ অভিযোগ পেলেই তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে৷ অন্যদিকে অভিভাবকদেরও বুঝতে হবে মিটমাট করে এর ফয়সালা হয় না৷ অপরাধ মনস্তাত্ত্বিক রজত মিত্রের পরামর্শ, ‘‘যেসব মহিলা এই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের উচিত প্রথম ফোনকলেই স্পষ্টভাষায় এবং দৃঢ়তার সঙ্গে না বলে দেওয়া৷ যেসব অপরাধী আইনের তোয়াক্কা করে না, তারা সত্যিই বিপজ্জনক৷ এরা হামেশাই বিকৃতকাম বা স্যাডিস্ট হয়৷ সে কারণেই তারা প্রেমিকাকে দৈহিক বা মানসিক আঘাত দিয়ে সুখ পায়৷''

কোনো বখাটে ছেলে আপনার পিছু নিয়েছে – এমন অভিজ্ঞতা কি আপনার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি

দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য