মানববন্ধনের সংস্কৃতি
৭ ডিসেম্বর ২০১০ক্রিসমাস শব্দটি বাংলায় কী করে বড়োদিন-এ রূপান্তরিত, হদিস নেই কোনো শব্দকোষে৷ হুতোম ওঁর নকসায় (হুতোমপ্যাঁচার নকসা) ১৯ শতকের প্রথমার্ধের কলকেতার হুযুগে বাবুরা বড়দিনে যে বেলেল্লেপনা, মচ্ছব করতেন, তার সুচারু নকশা এঁকেছেন৷ প্রায় একই নকশা ১৬ শতকে ইংল্যান্ডেও, তথা ইউরোপেও৷ তৎকালীন সময়ে খুব সাহসের সঙ্গে এর ছবি এঁকেছেন চসারও, ক্যান্টারব্যারি টেল্সে৷ এখন এইসব নকসা অবশ্য চোখে পড়েনা৷ ইউরোপসহ খ্রিষ্টধর্মীয় দেশে গোটা ডিসেম্বর মাসই পবিত্র৷
রাস্তাঘাট চোখ ধাঁধানো আলোয় উদ্ভাসিত৷ নানা পণ্য সাজিয়ে খোলা হাটবাজার৷ চকলেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন সসেজ৷ পানীয়৷ গানবাজনা৷ শিশুদের জন্যে নাগরদোলা৷ রকমারি খেলনার পসরা৷ আনন্দ, হৈচৈ৷ রাত্রি যেন অধিক আলোকিত৷ বার্লিনের আলোকসজ্জা অতিশয় বাহারি৷ আলোকসজ্জার জন্যেই খরচ করা হয়েছে ১৫ মিলিয়ন ইউরো৷ এই বিশাল খরচায় জনগণের আপত্তি নেই৷ বরং তাঁরা খুশি৷
বার্লিনের আলোকমালা দেখতে, মনমাতানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় অংশ নিতে পৃথিবীর নানাপ্রান্তের মানুষ হাজির৷ বাংলাদেশের তাহমিনা আখতার দুই বছর আগে বার্লিনে এসেছেন৷ এক সন্তানের জননী৷ সন্তানের জন্ম গত বছর ডিসেম্বরে৷ কিন্তু মাইনাস শীতে, প্রচণ্ড তুষারেও সন্তানকে নিয়ে ক্রিসমাসের খোলাবাজারে ঘুরতে যান৷ দীর্ঘ সময় কাটান৷ আলোকসজ্জায় তিনি চমৎকৃত৷ রুমানিয়া, ইসরায়েল, ভেনেজুয়েলা থেকে তিন যুবতী বার্লিনে এসেছেন শুধুমাত্র বার্লিনের ঝলমলে টুনিবাতির আলোর কারুশিল্প দেখতে৷ সাংস্কৃতিক উজ্জীবনে ধনী হতে৷ রুমানিয়া, ভেনেজুয়েলা খ্রিস্টধর্মীয় দেশ হলেও বড়দিন উপলক্ষে বাহারি আলোকমালার রূপারোপ নেই৷ ডিসেম্বরেই ইসরায়েলে ইহুদিদের হানোকা উৎসব৷ ইসরায়েলে তুষারপাত হয়না৷ ইসরায়েলের যুবতী বলেন, আমি এখানে, হানোকা-উৎসবের দিনে বার্লিনে তুষারপাত হচ্ছে, চমৎকার অনুভূতি আমার৷ খুব উপভোগ করছি৷ ক্রিসমাসের মাসে তুষারপাত হবে, হাড়-কাঁপানো ঠান্ডা পড়বে, ক্রিসমাসের বাজার বসবে হরেক পণ্য সাজিয়ে, গ্লু ওয়াইনসহ নানা পানীয়, খাবার থাকবে, শহর দিনের চেয়ে বেশি আলোকিত হবে, ক্রিসমাস ট্রি, মোমবাতি, রংবেরঙের টুনিবাতি দিয়ে ঘর সাজাবে, জাতিধর্মনির্বিশেষে মানুষ নিয়ে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ করবে, এই মানসেই বার্লিনের বাসিন্দারাও বড়দিনের মাসে একাত্ম৷
প্রতিবেদন: দাউদ হায়দার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক