1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানবাধিকার রক্ষায় শিভা নাজার আহারি এক সোচ্চার কন্ঠ

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০

গত বছরের ২০শে ডিসেম্বর থেকে ঈশ্বর অবমাননার দায়ে তেহরানের এক কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় ২৬ বছর বয়সি নাজার’কে৷ আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সমিতি ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ শিভা নাজারকে বাঁচানোর জন্য বিশ্বব্যাপী তৎপরতা চালাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/PMV5
শিভা নাজার আহারি (বামে)ছবি: DW

শিভা নাজার'এর মা শাহারজাদ কারিমন নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন৷ কিছুদিন আগে তেহরানের কারাগারে মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি৷ বেদনার্ত কন্ঠে শাহারজাদ জানান, ‘‘সেটা ছিল সাক্ষাৎকারীদের ছোট্ট এক কেবিন৷ আমার সামনে মনের জোর দেখানোর চেষ্টা করছিল শিভা, নিজের অবস্থা নিয়ে কোনো অভিযোগও করেনি৷ কয়েক মাস অপেক্ষা করার পর বিচারের দিন ধার্য করা হয়েছে৷ কিন্তু শিভার আইনজীবীকে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি৷''

শিভা নাজারি ইরানের মানবাধিকার সংগঠন ‘কমিটি অব হিউম্যান রাইটস রিপোর্টাস'-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য৷ এই সংগঠনের ওয়েব সাইটে ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে লেখালিখি করতেন তিনি৷ বিশেষ করে কারাবন্দি, শরণার্থী, নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন শিভা৷ ২০০৯ সালে বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর মানবাধিকার সংগঠনটির ওপর সরকারের চাপ বেড়েই চলেছে৷ এমনকি এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে দণ্ডযোগ্য অপরাধ বলেও গণ্য করা হয়৷ শিভার মা শাহারজাদ কিছুই বুঝে উঠতে পারছেননা৷ তিনি বলেন, ‘‘শিভা পাঁচ বছর ধরে নারী ও পথশিশুদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট৷ দরিদ্রদের এলাকায় পথশিশুদের নিয়ে অবসর সময়েও ব্যস্ততায় কাটতো তার৷ এসব আমাকে কিছুটা উদ্বিগ্ন করত৷ কিন্তু মানবাধিকার রক্ষায় তার কাজকর্ম আমাকে তেমন চিন্তায় ফেলেনি৷ কেননা আমি জানতাম সে আইনকানুন মেনে চলবে এবং এসব কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত কিছু করবেনা৷''

Flash-Galerie Wochenrückblick Iran
ইরানের এক পথশিশু, যাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করেন আহারি

তবুও ইরানি কর্তৃপক্ষ এই মানবাধিকার কর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করার একটি অজুহাত বের করেন৷ ইরান সরকারের কঠোর সমালোচক আয়াতোল্লাহ মোনতাজেরির শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চাইলে ২০০৯ সালের ২০শে ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় শিভা নাজারকে৷ তাঁর আইনজীবী মোহাম্মদ শরিফ এ ব্যাপারে খুব উদ্বিগ্ন৷ আল্লার সঙ্গে বৈরিতার যে অভিযোগ আনা হয়েছে শিভার বিরুদ্ধে, সেটাই তাঁকে বেশি দুর্ভাবনায় ফেলেছে, জানান মোহাম্মদ শরিফ৷ কেননা ঐ অপরাধের কারণে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি এই আইনজীবী৷ তাঁর মতে বিচারের আগে এবিষয়ে কিছু বলাটা হবে খুব বিপজ্জনক৷ বিশেষ করে শিভা নাজার যখন ইরান সরকারের কাছে বিরাট এক চক্ষুশূলের মত৷

২৪শে আগস্ট থেকে ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স' ইরান সরকারের কাছে শিভা নাজারের দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তির আবেদন জানিয়ে অনলাইনে এক সাক্ষর অভিযান শুরু করেছে৷ সংগঠনের ইরান শাখার মুখপাত্র রেজা মনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের জার্মান শাখা এবং বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা আবেদনপত্রটি তৈরি করতে সাহায্য করেছে৷ গত বছর শিভা নাজার'কে অকারণে দুইবার কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে যে অপরাধের কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ন অযৌক্তিক৷ তিনি কারাগারে গত কয়েকমাসে অনেকবার অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ সুচিকিৎসারও কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে৷ উকিলকে তাঁর নথিপত্রও দেখতে দেওয়া হয়নি৷''

শিভা নাজারের সহকর্মী ও বন্ধু বান্ধবরাও তাঁর মুক্তির জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন৷ এ প্রসঙ্গে ইরানের ‘কমিটি অব হিউম্যান রাইটস রিপোর্টার্স'এর মুখপাত্র পারিসা কাকাই বলেন, ‘‘তাঁকে যে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই৷ আমরা তাঁর দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তি চাই৷ এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়ব না আমরা৷''

আশার কথা, ১২ সেপ্টেম্বর ৪০ হাজার ইউরোর বিনিময়ে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে শিভা নাজার আহারিকে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ