1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানসিক রোগাক্রান্ত অভিবাসীদের জন্য বিশেষ থেরাপি

২ নভেম্বর ২০১০

মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে তার চিকিত্সার ব্যাপারে ক্রমেই সচেতন হচ্ছে জার্মানির মানুষ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন এখানকার অভিবাসীরা৷ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধার কারণে মানসিক চিকিত্সকের কাছে যেতে দ্বিধাবোধ করেন তারা৷

https://p.dw.com/p/Pw3L
মানসিকভাবে অসুস্থদের জন্যে বিশেষ থেরাপিছবি: AP

জার্মানিতে মানসিক ব্যাধির চিকিত্সার সুব্যবস্থা থাকলেও অভিবাসীরা কিন্তু তা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত৷ কেননা এক্ষেত্রে প্রচলিত চিকিত্সা ব্যবস্থায় নিজেদের তেমন খাপ খাওয়াতে পারেননা ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষরা৷ এই সব মানসিক রোগীর সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে জার্মানির ডুইসবুর্গ শহরের একটি হাসপাতাল৷ সেখানে মানসিক চিকিত্সকদের একটি টিম অভিবাসীদের উপযোগী চিকিত্সা দিয়ে আসছেন ২০০৭ সাল থেকে৷

মরক্কো থেকে আসা মোস্তফাও এই হাসপাতালের চিকিত্সায় আজ প্রায় সুস্থ৷ নতুন মেরামত করা এক আলোকোজ্জ্বল বাসায় উঠে এসেছেন তিনি৷ নতুন করে কর্মজীবন শুরু করার ইচ্ছা তাঁর৷ বাড়িঘর রঙ করার প্রশিক্ষণ নেবেন কিছুদিনের মধ্যে৷ কিন্তু তিন বছর আগেও নানা সমস্যায় জর্জড়িত ছিল তাঁর জীবন৷ বিবাহ বিচ্ছেদ ও চাকরি হারানোর ব্যথা তাকে মানসিক অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল৷ মোস্তফা জানান, ‘‘আমি কোনো কিছুতেই মনযোগ দিতে পারছিলাম না৷ বাসা থেকে বেরুতে বা কারো সঙ্গে দেখা করতেও ইচ্ছে হতনা৷ তার ওপর কাজের জায়গায় অনুপস্থিত থাকতে শুরু করলাম৷ এ ব্যাপারে কারো সঙ্গে কথা বলতেও পারতামনা৷ অবশেষে কিছু তুর্কি বন্ধুবান্ধবকে খুলে বললাম, আমার অবস্থার কথা৷''

এই সব বন্ধুবান্ধব ডুইসবুর্গের মারিয়েন হাসপাতালে অভিবাসী মানসিক রোগীদের জন্য বিশেষ চিকিত্সার কথা তাঁকে জানান৷ যেখানে ডাঃ মিশায়েল শট ও তাঁর টিম ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা মানসিক রোগীদের উপযোগী বিশেষ ধরনের চিকিত্সা দিয়ে থাকেন৷ ডাক্তার মিশায়েল শট তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানান এভাবে, ‘‘আমাদের চিকিত্সাটা কিছুটা ভিন্ন ধরনের৷ আমরা রোগের লক্ষণগুলি নয়, গোটা মানুষটাকে ঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করি৷ সামাজিক নানা রকম সমস্যাই তাঁদের মানসিক অসুখের দিকে ঠেলে দেয়৷ কোন কোন বিষয় তো একেবারে ট্যাবু, যা নিয়ে সরাসরি কথাও বলা যায় না তাদের সঙ্গে৷ যেমন ডিপ্রেশন বা বিষাদগ্রস্ততা নিয়ে৷''

মোস্তফাও প্রথমে মনোযোগের অভাব, কাজে অনীহা এসব যে ডিপ্রেশন নথেকে হচ্ছে তা বুঝতে পারেনি৷ বন্ধুদের পরামর্শ মত মানসিক চিকিত্সকের কাছে যেতে তাঁর কয়েক মাস লেগে যায়৷ এ প্রসঙ্গে মোস্তোফা বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে কারো মানসিক সমস্যা থাকলে তাকে পাগল বলে দেখা হয়৷''

মুসলিম দেশগুলিতে মনোরোগ চিকিত্সকের কাছে যাওয়াটাও তেমন প্রচলিত নয়৷ জার্মান ভাষাজ্ঞানের অভাব, জার্মান প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভীতি, সুযোগ সুবিধার বিষয়ে অজ্ঞতা এসব কারণেও অভিবাসীরা মানসিক রোগের চিকিত্সার ব্যাপারে পিছিয়ে আছেন৷ মোস্তফা তাঁর নিজের সমস্যার কথা খুলে বলেন, ‘‘২০০৭ সালের শেষ নাগাদ আমি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাই৷ তাঁর ও আমার মা বাবার মধ্যে অনেক দিন ধরেই ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল, এর ফলে আমাদের সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়৷ আমি এ জন্য অনেক মানসিক অশান্তিতে ভুগেছি৷''

প্রচলিত মানসিক রোগের চিকিত্সায় সাধারণত অসুখের লক্ষণগুলির ওপর জোর দেওয়া হয়৷ কিন্তু আন্তঃসাংস্কৃতিক দিকটা মাথায় রেখে যে চিকিত্সা দেয়া হয়, তাতে রোগের চেয়ে রোগী ও তাঁর পারিপার্শ্বিকতার ওপর জোর দেয়া হয় বেশি৷ ডঃ মিশায়েল শট ও তাঁর টিমও এই ভাবে মানসিক রোগাক্রান্ত অভিবাসীদের চিকিত্সা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এমনকি তাঁর চেম্বারে একটি কোরান শরীফও রাখা আছে৷ মুসলিম রোগীদের সঙ্গে অসংখ্যবার কথাবার্তা বলে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণাও হয়েছে তাঁর৷ তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিতে যে একেবারে পারদর্শী হতে হবে এমন কোনো কথা নেই৷ এ প্রসঙ্গে ডঃ মিশায়েল শট বলেন, ‘‘প্রায় সব সমস্যারই মূল কারণ হল পারিবারিক সংকট৷ অসুখের কোনো নিজস্ব সংস্কৃতি নেই৷ রোগের চেয়ে রোগীকে আমরা গুরুত্ব দেই বলে রোগীর মনে এই অনুভূতি হয় যে, তাঁর সাংস্কৃতিক পারিপার্শ্বিকতাকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছেনা৷''

ডাঃ মিশাইল শটের ছয় জনের টিমটি প্রতি চার মাসে ৩৯০ জনের মত মানসিক রোগীর চিকিত্সা করছে৷ ৮৫ শতাংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ বাকিরা এসেছেন বিভিন্ন দেশ থেকে৷ আভিবাসী রোগীদের মধ্যে আবার মেয়েদের সংখ্যাই বেশি৷ মাত্র ৩০ শতাংশ পুরুষ৷ মোস্তফার চিকিত্সার জন্য বেশ কয়েকবার থেরাপি নিতে হয়েছে৷ তিনি জানান, ‘‘যে অল্প কয়েকটা থেরাপি আমি নিয়েছি, তাই আমার খুব কাজে লেগেছে৷ যদিও এখনও আমার কোনো চাকরি নেই, তবু আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি আমি৷ তাই আমি এখন অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক