1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাফিয়ার বিরুদ্ধে রুপকথার মানুষ পিনো

১১ জুন ২০১০

ইটালির সিসিলিতে, মাফিয়া নামে পরিচিত সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে অর্থ আদায় করে থাকে৷ যা সাধারণত মাসিক ভাতার মত এক স্বীকৃত অথচ নিয়মবহির্ভূত ব্যবস্থা৷

https://p.dw.com/p/Noly
২০০৯-এর মার্চে নেপলস-এ মাফিয়া বিরোধী মিছিলছবি: AP

এই অর্থ প্রদানকে ব্যাবসায়ীরা মনে করেন, মাফিয়াদের লম্বা হাতের আওতা থেকে নিজেদেরকে এবং তাদের ব্যবসাকে সুরক্ষার চাবিকাঠি৷

ইটালির পালেরমো, মা দিবসের সপ্তাহান্ত৷ অর্থাৎ ৯-ই মে রবিবার৷ ৮১ বছরের একজন সিনিওরা, সবাই তাঁকে বলেন, মাদ্রিনা বা গডমাদার, তবে তাঁকে রুপকথার চরিত্রের সঙ্গে তুলনা করলেই ভালো হয়৷ ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাফিয়াদের অর্থ আদায়ের এই নিয়মবহির্ভূত প্রথা মানেন না তিনি৷ তাঁর নাম পিনা মাইসানো গ্রাসি৷ ছোট ছোট চুল, ছোট্ট মানুষটি৷ কিন্তু তাঁর মধ্যে এক আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে বলে মনে হয়৷ তা নাহলে কী কেউ মাফিয়াদের সঙ্গে লড়াই করতে আসে? আর সেই আধ্যাত্মিক আলোতেই যেন আলোকিত এই মানুষটি৷

মাফিয়াদেরকে তুষ্ট না করলে তারা এমনকি যে কারো ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে৷ মাফিয়ারা অর্থ আদায় করতে আসতে চেয়েছে, এই কথা কাউকে বলতে ভয় পায়, এমনও কিছু ব্যবসায়ী আছেন৷ আর এই অর্থ আদায়কে চলতি ভাষায় 'পিজ্জো' বলা হয়ে থাকে৷ অনেকটা মাসিক বখরা আদায়ের মত৷ মাফিয়াদের অন্যায় দাবী না মেনে সঠিক কাজটি করার জন্যে যে ভদ্রমহিলা ব্যাবসায়ীদের সাহস যোগাতে চাচ্ছেন, উৎসাহিত করছেন, সেই গ্রাসিও যদি কোন ব্যবসায়ীর দরজায় কড়া নাড়েন, তার জন্যেও দরজা খুলতে ভয় পায় ব্যবসায়ীরা৷

পাঁচ বছর আগে পালেরমোর কিছু তরুণ ছেলেমেয়ের সঙ্গে পুরো শহরে মাফিয়া বিরোধী স্টিকার সাঁটানোতে অংশ নিয়েছিলেন পিনা৷ ''কেউ যদি পিজ্জো প্রদান করে তবে সে মর্যাদাহীন নাগরিক৷'' এই তরুণ সিসিলীয়রাই জনগণকে বলতে থাকে, ''দেয়ালে লাগানো আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন, সমাজকে বিষাক্ত করতে সহায়তা করবেন কিনা৷'' মাফিয়া বিরোধী কাজের জন্যে পিনা সবার কাছে পরিচিত৷

স্টিকার প্রচারের পেছনে কে আছে জানেন কিনা, পিনাকে একজন সাংবাদিক এই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,''আমি বলি কারা এইসব করেছে সে সম্পর্কে কোন ধারণা নেই৷ তবে এটা যদি তরুণারা করে থাকে তবে তারা আমার নাতি নাতিনই হবে৷ কারণ তারা একদম আমার মতোই চিন্তা করে৷ এবং এর পরের দিন, তিনটি ছোট ছেলে তাঁর দোকানে এসে বলে, আমরা তোমার নাতি৷ এবং ঐ মুহুর্ত থেকেই আমি তাদের সঙ্গে পিজ্জো বিরোধী কাজ শুরু করি৷ ''

তারমানে ''গুডবাই পিজ্জো'' বা বিদায় পিজ্জো৷ যারা এই পিজ্জো বিরোধী স্টিকার আন্দোলন শুরু করে তাদের বয়স কুড়ি বা কুড়ির কাছাকাছি৷ যারা ঘরে ঘরে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পিজ্জো না দেয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে৷ চার শতাধিক ব্যবসায়ী মাফিয়া বিরোধী শপথ নিয়েছেন৷

পিনা প্রথম থেকেই জানেন, পিজ্জো প্রদান না করার বিপদটা কোথায়৷ সেটা জানতে হলে একটু পেছন দিকে তাকাতে হবে৷ ১৯৯০ সাল৷ পিনার স্বামী লিবেরোর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চড়াও হয় মাফিয়ারা৷ তবে লিবেরো তাদের দাবী মানতে অস্বীকার করেন এবং চুপ করে থাকার নিয়ম ভেঙ্গে পুলিশকে জানান৷ কিন্তু অত্যাচার থেমে থাকেনি৷ তার দোকানে ডাকাতি হয়েছে, তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পরিবারের কুকরটিকে৷ কয়েকদিন পরে অনাহারে থেকে প্রায় মৃত অবস্থায় ফিরে আসে কুকুরটি৷ স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তা চান লিবেরো৷ তখনই পিনা সিসিলির শীর্ষ স্থানীয় একটি পত্রিকাতে চিঠি লেখেন এ নিয়ে লেখা৷ তবে কাজ হয়নি তেমন৷

সাত মাস পরে, লিবেরোকে তাঁর বাড়ির বাইরে মাথায় তিনবার গুলি করা হয়৷ পিনা সরাসরি মাফিয়া এবং ব্যাবসায়িক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ফেটে পড়েন৷ তিনি বলেন, ''শহর আমাদেরকে সমর্থন দেয়নি৷ তারা একেবারে কোন কিছুই করেনি৷ হ্যাঁ, নেতারা হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, কিন্তু তাতে কিছুই হয়নি৷''

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার