1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিত্রতা আর টানাপড়েনে জার্মানি-তুরস্ক

৭ এপ্রিল ২০১০

জার্মানিতে সবচেয়ে বৃহৎ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী তুর্কিরা৷ দুই দেশের মধ্যে রয়েছে নানা অভিন্ন স্বার্থ৷ তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে আগ্রহী তুরস্ক বেশ জোর দিয়েই সহযোগিতা চাই জার্মানির৷ অবশ্য দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েনও কম নয়৷

https://p.dw.com/p/Moqv
জার্মানি-তুরস্ক সম্পর্কের একটি প্রতীকি ছবিছবি: AP GraphicsBank/DW Fotomontage

সালাদ, সস আর একটু টক ঝাল মেশানো ডোনার কাবাবের কথা শুনলে জিভে জল আসবে বৈ কি৷ তবুও বলতেই হচ্ছে, সবচেয়ে সুস্বাদু ডোনার কাবাবের কৃতিত্ব তুরস্কের৷ আর তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান অভিবাসী মাহমুত আইগুনের হাতেই বিশ্বের প্রথম ডোনার তৈরি হয়েছিল বার্লিনে ১৯৭১ সালে৷

এর প্রায় ৪০ বছর পর বিশ্বের প্রথম ডোনার রোবোটটিও উদ্বোধন করা হলো বার্লিনে৷ এফএফডিআর-ভি১০০৪ নামের এই রোবটটি তৈরি করেছেন ৩৪ বছর বয়সি সাইপ্রিয়ট আহমেত কালিওনসু৷ বর্তমানে গোটা জার্মানি জুড়ে এই কাবাবের দোকান রয়েছে ১৫ হাজার৷ এগুলোতে কর্মরত রয়েছে প্রায় ৭৪ হাজার কর্মী৷ তবে শুধু জিভের স্বাদই নয়, তুরস্ক আর জার্মানিকে একে অপরের কাছাকাছি এনে দিয়েছে আরো অনেক ঘটনা৷ ইউরোপের চলতি বছরের অন্যতম সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে সম্মানিত ইস্তানবুল শহর৷ আর একই সম্মানে ভূষিত যৌথভাবে জার্মান নগরী এসেন৷

Angela Merkel mit Dönerspieß Flash-Galerie
ডোনার কাবাব কাটছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলছবি: picture-alliance/dpa

এতদিন পর্যন্ত ইস্তানবুল শহরের যে ভবনটি জার্মান রাষ্ট্রদূতের গ্রীষ্মকালীন আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, সেটিকে রূপান্তরিত করা হচ্ছে জার্মান-তুর্কি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে৷ ১৮৬৮ সালে ইস্তানবুলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জার্মান বিদ্যালয়৷ এখনও সেখানে সগৌরবে জার্মান ভাষায় এবং জার্মান পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বজায় রয়েছে উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম৷ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর স্বগতোক্তি, ‘‘তুরস্কের বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইস্তানবুলে জার্মান বিদ্যালয়টিই সবচেয়ে ভালো৷ আর সেজন্যেই আমি সেখানে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাই, তবে সেটি সম্ভব হবে কিনা এখনও জানিনা৷''

এই বিদ্যালয়েই লেখাপড়া করেছেন বর্তমান তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রী আহমেত দাভুটোগলু৷ এবার যোগ হলো জার্মান-তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা৷ গত সপ্তাহে তুরস্ক সফরে গিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বললেন, ‘‘আমি আশা করি যে, সংসদে এই পরিকল্পনা অনুমোদিত হবে এবং এই জার্মান-তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের প্রত্যাশা অনেক৷''

শুধু তাই নয়, জার্মানিতে বর্তমানে বসবাস করে প্রায় ৩০ লাখ তুর্কি অভিবাসী৷ তুর্কিরাই জার্মানিতে বসবাসকারী সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী৷ এছাড়া জার্মানিই হচ্ছে তুরস্কের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার৷ ২০০৮ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন দাঁড়ায় ২৫ বিলিয়ন ইউরো৷ চার হাজারেরও বেশি জার্মান প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে তুরস্কের সঙ্গে৷

Deutsche und Türken in Kreuzberg
রাজধানী বার্লিনে বসবাস করছে অসংখ্য তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষছবি: Bilderbox

দুই দেশের মধ্যে এতসব স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বলেই সম্ভবত জার্মানির নতুন জোট সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে তুরস্ক সফর সেরে ফেলেন বছরের শুরুতেই৷ আর গত সপ্তাহে ইস্তানবুল ঘুরে আসলেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ তবুও কিছু বিষয়ে বিপরীত অবস্থান এখনও রয়েই গেছে বার্লিন আর ইস্তানবুলের মধ্যে৷ জার্মানিতে তুর্কি ভাষার স্কুল প্রতিষ্ঠা, ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের সদস্যপদ লাভ, ইরানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নাকি কূটনীতি, কোনটা শ্রেয় - ইত্যাদি প্রশ্নে তো বটেই, এমনকি ১৯১৫ সালে আর্মেনীয়দের উপর তুর্কি গণহত্যার ব্যাপারেও দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য আছে৷

ম্যার্কেলের সফর শুরু হবার আগেই তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান একটি কামান দেগে বসেছিলেন এই বলে যে, তুরস্কে যদি জার্মান স্কুল হতে পারে, তবে জার্মানিতে তুর্কি স্কুল হবে না কেন ? অথচ জার্মানিতে বসবাসকারী তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিকদের জার্মান সমাজে অঙ্গীভূত করার যাবতীয় সরকারি প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগের মূলমন্ত্র হল, তুর্কিদের আরো ভালোভাবে জার্মান ভাষা শিখতে হবে৷ বিষয়টি আরেকটু নরম সুরেই আবারো উচ্চারণ করলেন ম্যার্কেল, ‘‘অন্যান্য দেশে যেমন তুরস্কে যদি জার্মান বিদ্যালয় থাকে, যদিও বিশ্বের আরো দেশেও তা রয়েছে, তবে জার্মানিতেও তুর্কি বিদ্যালয় হতে পারে৷ কিন্তু তাই বলে জার্মানিতে বসবাসকারী তুর্কি জনগোষ্ঠী যেন জার্মান ভাষা না শেখার জন্য এটিকে অজুহাত হিসেবে না দেখে৷''

Angela Merkel Erdogan Geschenk
জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সঙ্গে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানছবি: AP

এর্দোয়ানের এমন প্রশ্ন নতুন নয়৷ ইতিপূর্বেও তিনি জার্মানির তুর্কিদের নিজেদের জাতীয় সত্তা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন৷ কিন্তু দীর্ঘ চার বছর পরে ম্যার্কেলের ইস্তানবুল যাত্রার প্রাক্কালে এরকম একটি বিষয় উত্থাপনের একটি কারণ এই হতে পারে যে, এর্দোয়ান তুরস্কের পক্ষে অপর একটি অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে ম্যার্কেলের কাছ থেকে কিছুটা নমনীয়তা প্রত্যাশা করেন – এবং তা হল তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ৷

জার্মানির বর্তমান জোট সরকারে রয়েছে উদারপন্থি মুক্ত গণতন্ত্রী দল৷ জোটের বড় শরিক হল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন - সিডিইউ ও তার বাভারীয় সহযোগী খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন -সিএসইউ৷ এই সিএসইউ ইইউ'তে তুরস্কের পূর্ণ অন্তর্ভুক্তির পক্ষে নয়৷ সিএসইউ এবং ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীদের কিছু অংশ মনে করে, তুরস্ককে সদস্যপদ দেওয়া উচিত হবেনা৷ বরং তাকে বিশেষ সুবিধার অধিকারী এক ইইউ-সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে৷ অবশ্য, ইইউ-এর সদস্যপদ লাভে তুরস্কের সামনে প্রধান অন্তরায় সাইপ্রাসের সাথে বিরাজমান বিরোধ - এমনটিই জোর দিয়ে উল্লেখ করলেন ম্যার্কেল৷

প্রতিবেদক : হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা : দেবারতি গুহ