1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রাম-শহরের বিত্তের ব্যবধান

সাক্ষাৎকার: গাব্রিয়েল ডোমিঙ্গুয়েজ/জেকে২০ জুন ২০১৪

মিয়ানমার সরকার অর্থনীতির চাকায় গতি আনতে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিলেও, তাতে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের জীবনমানে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ এমনই ধারণা এক অর্থনীতিবিদের৷

https://p.dw.com/p/1CLyx
Symbolbild Lebensmittelmangel
ছবি: Getty Images

সামরিক জান্তার অধীনে বছরের পর বছর ধরে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধ ও কড়াকড়ির কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি কখনোই দারিদ্র্য কাটিয়ে উঠতে পারেনি৷ ২০১১ সালে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরুর পর মিয়ানমারে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের সূচনা হয়৷ সেই সঙ্গে উঠতে শুরু করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা৷

সাবেক সেনা শাসক জেনারেল থিয়েন সেনের সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে গত তিন বছরে যেসব পদক্ষপ নিয়েছে, তাতে মিয়ানমারে কর্মসংস্থান বেড়েছে, অবকাঠামোগত কিছু উন্নতিও হয়েছে৷ এতে অনেকেই মিয়ানমারকে আগামী দিনের এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসাবে বিবেচনা করতে শুরু করেছেন৷

Lex Rieffel Porträt
অর্থনীতিবিদ লেক্স রিফেলছবি: brookings.edu

তবে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ লেক্স রিফেল মনে করেন, মিয়ানমার সরকারের সংস্কার পরিকল্পনায় বড় ধরনের দুর্বলতা রয়ে গেছে৷ ডয়চে ভেলেকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মিয়ানমার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অনেক বেশি মনোযোগ দিলেও পল্লী উন্নয়ন কিংবা কৃষি ব্যবস্থার সংস্কারের তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, ফলে সাধারণ মানুষ কোনো সুফল পাচ্ছে না৷

ডয়চে ভেলে: প্রায় পাঁচ দশক সামরিক শাসনের পর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে সাবেক জেনারেল থিয়েন সেন যেসব সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে গত তিন বছরে মিয়ানমারের অর্থনীতির কতটা উন্নতি হয়েছে?

লেক্স রিফেল: প্রেসিডেন্ট থিয়েন সেনের অধীনে এ সব সংস্কার কর্মসূচির ফলে মূলত অর্থনীতির বাইরের কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন এসেছে৷ যেসব খাতে আগে অনেক বেশি কড়াকড়ি ছিল, তা কমে এসেছে৷ জাতীয় বাজেটেও অনেকটা স্বচ্ছ্বতা তৈরি হয়েছে৷

তবে ওই উপরিকাঠামোর ভেতরে অর্থনীতির গভীরে পরিবর্তন এসেছে খুবই কম৷ বিশেষ করে মিয়ানমারের ৭০ শতাংশ নাগরিক, যাঁরা মূলত গ্রামে বাস করেন, তাঁদের জীবনমানে উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি৷ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়াটা মিয়ানমারের মতো একটি দেশের জন্য খুব একটা কল্যাণ বয়ে আনবে না৷ যেসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তাঁরা প্রবৃদ্ধি হিসাব করছে, তা নিতান্তই অপ্রতুল৷ তাছাড়া মিয়ানমার যে ধরনের রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাতে প্রবৃদ্ধির ধারা বোঝার জন্য তিন বছর মোটেও যথেষ্ট সময় নয়৷

গত তিন বছরের রাজনৈতিক সংস্কারে সাধারণ জনগণ হয়ত উপকৃত হচ্ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কারের সুফল তাঁদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না৷ প্রধান শহরগুলোর মানুষ অর্থনৈতিক উদারিকরণের কিছুটা সুবিধা নিতে পারলেও গ্রামের মানুষের কাছে উন্নয়ন এখনো অনেক দূরের স্বপ্ন৷

ডয়চে ভেলে: অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকার কতটা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে বলে মনে করেন?

লেক্স রিফেল: একেবারে শুরু হিসাবে মিয়ানমার সরকার ভালোই করেছে বলতে হবে৷ আমার দৃষ্টিতে তাঁদের নেয়া সবচেয় বড় সংস্কারমূলক পদক্ষেপটি হলো – মুদ্রার মান নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া৷ আগে সরকার কিয়েতের মান ঠিক করে দিত বলে তা হতো অতি মূল্যায়িত৷ তার বদলে কিয়েতকে এখন ভাসমান মুদ্রায় পরিণত করা হয়েছে, অর্থাৎ বাজারের লেনদেনের ভিত্তিতে এর মান ঠিক হবে৷

দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সরকার করেছে, তা হলো মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিনর ও ওরেডুকে লাইসেন্স দেয়া৷ এর পরেই আমি ব্যাংক খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনামূলক পদক্ষেপের কথা বলব৷ এগুলোর সঙ্গে আরো অনেক ভাল সিদ্ধান্তের কথাই আমরা যোগ করতে পারি৷

ডয়চে ভেলে: সেক্ষেত্রে এই সংস্কার কর্মসূচির দুর্বলতাগুলো কী?

লেক্স রিফেল: আমার বক্তব্য কিছুটা প্রথাবিরোধী মনে হতে পারে, কিন্তু আমি মনে করি থিয়েন সেন সরকার বিদেশি বিনিয়োগ ও সাহায্য টানতে অনেক বেশি মনোযোগ দিচ্ছে৷ অথচ জাতিগত সংঘাত বন্ধে বা কৃষি খাতের উন্নয়ন ঘটিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধির কোনো পদক্ষেপ আমি দেখছি না৷

ডয়চে ভেলে: বিশ্বব্যাংকের ২০১৩ সালের প্রতিবেদন বলছে, ব্যবসা করার পরিবেশের বিচারে মিয়ানমারের অবস্থান বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৮২তম৷ নতুন ব্যবসা শুরু কিংবা ঠিকাদারির চুক্তি করার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের অবস্থান ইরিত্রিয়া, কঙ্গো, লিবিয়া কিংবা দক্ষিণ সুদানেরও নীচে৷ এর পেছনে মূল কারণ কী?

লেক্স রিফেল: আমার মনে হয়, বিশ্বব্যাংক আর মিয়ানমার সরকার – দুই তরফেই ভুল ছিল৷ এতে মিয়ানমারের ভাবমূর্তি ভালো হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ সেখানে ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়নে এই জরিপ কোনো ভূমিকা রাখবে না৷

Myanmar Wirtschaft Rangun
মিয়ানমার সরকারের সংস্কার পরিকল্পনায় বড় ধরনের দুর্বলতা রয়ে গেছে৷ছবি: Getty Images

ডয়চে ভেলে: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে মিয়ানমারের হাতে এখন কী কী করার আছে?

লেক্স রিফেল: আমি মনে করি, মিয়ানমার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, সেটাই অনেক বেশি৷ এখন সরকারের উচিত দেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করা৷ মিয়ানমারে এসে ব্যবসা করার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ কোনো সুবিধার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না৷

ডয়চে ভেলে: এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের জন্য মিয়ানমাররের কী করা উচিত?

লেক্স রিফেল: আপনি যদি সম্প্রসারণ বলতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর কথা বোঝান, তাহলে আমি বলব – ওই পথে হাঁটা মিয়ানমারের জন্য হবে বোকামি৷ তার বদলে উন্নয়নের পথে সরকারি বাধাগুলো দূর করে দেশের জনগণকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা হবে অনেক বেশি ‘স্মার্ট' পদক্ষেপ৷

(লেক্স রিফেল ওয়াশিংটভিত্তিক সংস্থা ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ৷ এর আগে তিনি ইউএস ট্রেজারির অর্থনীতিবিদ এবং ইন্সটিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী হিসাবেও কাজ করেছেন৷)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য