1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্ত জীবনেও বন্দিত্বের রেশ

১২ জুন ২০১০

মাত্র ১১ মাস, আর তাতেই পুরো অন্য রকম হয়ে গেলো লিডিয়া আর আনা হেন্টশেল এর জীবন৷ জার্মান এ দুই শিশু ছিলো ইয়েমেনে৷ তবে মুক্ত জীবন নয়, অপহরণকারীদের হাতে বন্দি অবস্থায়৷

https://p.dw.com/p/Np6I
ফাইল ফটোছবি: picture alliance / dpa

মুক্তি মিলেছে, তবে তা আক্ষরিক অর্থে, বন্দি জীবন কেড়ে নিয়েছে তাদের দুরন্ত শৈশব৷

হেন্টশেল এর পরিবারের বাস জার্মানির সাক্সোনি রাজ্যের বাউসেন শহরের কাছের মেশভিৎস এলাকায়৷ সাবিন এবং সিমন দুজনেই কাজ করতেন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থায়৷ তাদেরই মেয়ে চার বছরের আনা ও ছয় বছরের লিডিয়া৷ ছোট আরেকটি ভাইও আছে আনা-লিডিয়ার৷ তবে অন্য শিশুটিসহ হেনৎশেল দম্পতির কী অবস্থা, তা এখনো অজানা৷

২০০৪ সালে ইয়েমেনে যান সাবিনে ও সিমন৷ একজন নার্স, অন্যজন প্রকৌশলী৷ সাদা প্রদেশের একটি হাসপাতালে কাজ করতেন তাঁরা৷ ২০০৯ সালের ১২ জুন কাল হয়ে আসে পরিবারটির জীবনে৷

অফিসের অন্য কয়েকজনের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন হেনৎশেল দম্পতি৷ তিন সন্তানকেও সঙ্গে নিয়েছিলেন৷ তবে বেড়ানো শেষে আর ফেরা হয়নি ঘরে৷ তার আগেই পড়তে হয় অপহরণকারীদের কবলে৷ এর পর অনেক খোঁজ করেও সন্ধান মেলেনি তাদের৷

এ বছরের ১৭ মে সৌদি পুলিশ ইয়েমেন সীমান্ত থেকে উদ্ধার করে আনা ও লিডিয়াকে৷ এর দুদিন পর জার্মানিতে উড়িয়ে আনা হয় তাদের৷ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে৷

কিন্তু এখন কেমন আছে তারা- জানতে চাইলে শিশু দুটির মামা রাইনহার্ড পয়েৎশকে যা বললেন, তাতে বোঝা গেলো, ভালো নেই তারা৷

মুক্তির পর মাস গড়াতে চললেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি আনা ও লিডিয়া৷ নিজেদের নামও ভুলে গেছে তারা৷ একজন নিজের পরিচয় দেয় ফাতিমা বলে৷ অন্য জন বলে, তার নাম সারাহ৷ কথা বলে কম, যে টুকু বলে, তাও আরবিতে৷

রাইননহার্ড বলেন, ‘মনে হয়, বন্দি অবস্থায় দীর্ঘ সময় শিশু দুটিকে বাবা-মার কাছ থেকে আলাদা রাখা হয়েছিলো৷ তাই তারা বাবা-মার কথাও ভুলে গেছে৷ তাদের কথা জানতেও চায় না৷'

তার ধারণা, বন্দি অবস্থায় শিশু দুটি ছিলো ইয়েমেনের কোনো আদিবাসী পরিবারের সঙ্গে৷ যার প্রভাব এখনো কাটছে না৷ আর বন্দিদশায় কারো সঙ্গে খুব একটা মিশতে দেওয়া হয়নি তাদের৷

তবে আনা ও লিডিয়ার শারীরিক কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন তাদের মামা৷ তিনি বলেন, তারা পুতুল নিয়ে খেলে৷ আর ছবি আঁকতে পছন্দ করে৷

শিশু দুটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরা৷ স্থানীয় গির্জায় প্রার্থনার আয়োজনও করা হয়৷ তবে কাজটি যে কঠিন তা মানছেন রেইনহার্ডও৷

উত্তর ইয়েমেনের যে এলাকায় অপহরণের ঘটনাটি ঘটে, তা শিয়া আদিবাসীদের শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত৷ তবে অপহরণের কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি আজও৷

সেদিন হেন্টশেল দম্পতির সঙ্গে অপহৃত হয়েছিলেন দুজন জার্মান নার্স, একজন দক্ষিণ কোরিয়ান শিক্ষক এবং একজন ব্রিটিশ প্রকৌশলী৷ দু নার্স এবং শিক্ষকের সন্ধান কয়েকদিনের মধ্যেই পাওয়া যায়, তবে জীবিত নয়, মৃত৷

আনা ও লিডিয়াকে পেয়ে খুশি তার স্বজনরা৷ তবে এর মধ্যেও বিষাদের সুর, কারণ বাকি তিন জনের খোঁজ যে এখনো মেলেনি৷ তাঁরা বেঁচে নেই বলেই অনেকের ধারণা৷ তবে তা মানতে স্বজনদের মন সায় দিচ্ছে না৷ রাইনহার্ড বলেন, ‘আমরা এখনো আশা করি৷ তাঁরাও ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে৷ আনা আর লিডিয়ার মতো৷'

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার