1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুমূর্ষুদের মৃত্যুতে সাহায্য নিয়ে যুগান্তকারী রায়

২৬ জুন ২০১০

জীবন্মৃত কেউ মৃত্যু চাইলে তাতে সহায়তা করা অপরাধ নয়৷ এমন রায় এসেছে জার্মানির উচ্চতর আদালত থেকে৷ মৃত্যুপথযাত্রী একজনের ইচ্ছায় তাঁর লাইফসাপোর্ট খুলে নেওয়া নিয়েই যুগান্তকারী এই রায়৷

https://p.dw.com/p/O3lD
ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/dpa

এর মধ্য দিয়ে আদালত মুমূর্ষু কারো জীবন অবসানের ক্ষেত্রে তাঁর সিদ্ধান্তকেই মূল্য দিলো৷ আর এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজীবী ও চিকিৎসকরা৷

ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে যিনি, তিনি হলেন এরিকা কেলমার৷ পাঁচ বছর ধরে কোমায় ছিলেন তিনি৷ তবে তার আগে তিনি মেয়েকে জানিয়ে গিয়েছিলেন, কোমায় গেলে তাঁর জীবন যেন প্রলম্বিত না করা হয়৷ পাঁচ বছর কাটার পর মেয়ে তাঁর আইনজীবী ভলফগ্যাং পুৎসের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করলেন, মায়ের ইচ্ছা পূরণ করবেন৷ এরপর আইনজীবীকে নিয়ে মায়ের লাইফসাপোর্ট খুলে ফেললেন তিনি৷ তবে তা হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের নজরে এলে তড়িঘড়ি করে আবার লাগানো হয়৷ অবশ্য দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যু হয় কেলমারের৷ আর তখনি ফেঁসে যান পুৎস৷ কারণ জার্মানির আইনে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া অপরাধ৷ আর এর সাজা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড৷

মামলা চললো, গত বছর নিম্ন আদালত সাজাও দিলো পুৎসকে৷ তবে এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে লড়ে শুক্রবার নিজের পক্ষে রায় পেলেন তিনি৷ ফেডারেল কোর্টের বিচারক রুথ রিসিং ভান সান বলেন, ব্যক্তির ইচ্ছায় যে কোনো চিকিৎসার ইতি টানা বৈধ৷ যার অর্থ লাইফসাপোর্ট খুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে পুৎস অপরাধ করেননি৷

এই বিষয়টি নিয়ে জার্মানিতে অনেক দিন ধরেই বিতর্ক চলে আসছে৷ অনেকে বলছেন, যে আইন রয়েছে, তা অস্পষ্ট৷ ১৯৯৪ সালে অন্য একটি মামলায় ফেডারেল কোর্ট আদেশ দেয়, যদি কোনো অসুস্থ ব্যক্তি তার চিকিৎসার ইতি টানতে চায়, তবে তা করার অধিকার তার রয়েছে৷ ওই আদেশকে ভিত্তি ধরেই মামলায় জিতলেন আইনজীবী পুৎস৷ তবে এটা এখনো অস্পষ্ট, কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসায় ইতি টানা অপরাধ বলে গণ্য হবে৷

আইনে আছে, যদি রোগীর অসুস্থতার ব্যাপক অবনতি ঘটতে থাকে, তখন তাঁর মৃত্যুর ইচ্ছা পূরণ অবৈধ হবে না৷ কিন্তু এতে বাধ সেধেছে চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপক উন্নতি৷ কারণ এখন ইচ্ছা করলেই লাইফসাপোর্ট দিয়ে কাউকে বাঁচিয়ে রাখা যায় অনেক দিন৷ আবার ২০০৫ সালে ফেডারেল কোর্টের এক রায়ে বলা হয়, কোনো রোগীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে কৃত্রিমভাবে খাওয়ানো যাবে না৷ গত বছর একটি আইন হয়েছে, সেখানেও বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রোগীর যে কোনো ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দিতে হবে৷ ফলে সব মিলিয়ে বিষয়টি জগাখিচুড়ি পাকিয়ে গেছে৷ এখন এক একটি মামলায় আদালতের রায়েই খুলছে সে জটিলতা৷

শুক্রবার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কার্লসরুয়ে শহরে বিচারক যখন রায় পড়ছিলেন, তখন আদালত প্রাঙ্গণে ছিলো আইনজীবী ও চিকিৎসকদের ভিড়৷ রায় ঘোষণার পরই উল্লাসে ফেটে পড়েন তাঁরা৷ আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে জার্মানির আইনমন্ত্রী সাবিনে লয়েটহয়জার শ্নারেনব্যার্গার বলেন, ‘‘আজকের রায়ে একটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর মিললো৷ এতে কারো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারের স্বীকৃতি যেমন দেওয়া হলো, তেমনি তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার বিষয়টিকেও স্পর্শ করে গেলো৷''

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক