1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুম্বই সমুদ্রতট পরিষ্কার রাখার চেষ্টা

মারকুস স্পিকার/এসি১২ মে ২০১৭

মুম্বই মহানগরী ডুবে যাচ্ছে প্লাস্টিক আবর্জনায়, সাগরতীরে যা বিশেষ করে চোখে পড়ে৷ তাই সমুদ্র সৈকতের লাগোয়া বহুতল ভবনগুলির বিত্তশালীরাও নেমেছেন সেই আবর্জনা পরিষ্কার করতে৷

https://p.dw.com/p/2cptI
Indien Müll am Strand von Mumbai
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pillai

সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার রাখার চেষ্টা

আরব সাগরের উপকূলে মহানগরী বলতে যা বোঝায়, দূর থেকে দেখলে মুম্বই ঠিক তাই৷ কিলোমিটারের পর কিলোমিটার বেলাভূমি – কিন্তু শুধু দূর থেকে দেখলে৷ আইনজীবী আফরোজ শাহ দু'বছর আগে এখানে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন, বাড়িতে বসেই সাগর আর বেলাভূমি দেখবেন বলে৷

তারপর স্বপ্নভঙ্গ৷ কারণ জানাতে গিয়ে বললেন, ‘‘ জানলা থেকে তাকিয়ে দেখলাম, শুধু আবর্জনা আর আবর্জনা, প্লাস্টিক আর প্লাস্টিক৷ তাহলে কি এই নিয়ে পৌরসভার কাছে নালিশ করব, নাকি পিটিশন করব? না, নাগরিক হিসেবে আমি নিজেই দায়ী৷ আমি নিজেই কিছু একটা করব৷''

‘আন্দোলন নয়'

সমুদ্রসৈকতকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চান আফরোজ শাহ৷ প্রতি শনি-রবিবার সকালে দু'ঘণ্টা করে ঠিক সেই কাজ করেন আফরোজ শাহ৷ প্রতিবেশীরাও হাত লাগান৷শাহ শোনালেন সেই কাহিনী৷

‘‘প্রথম কয়েক মাস বেশ কঠিন ছিল, আমরা মাত্র চার-পাঁচজন লোক ছিলাম৷ কিন্তু আমি কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইনি৷''

আজ এলাকার প্রায় একশ' স্বেচ্ছাসেবী আফরোজের সঙ্গে যোগ দেন, ময়লা জড়ো করেন, বালি খুঁড়ে প্লাস্টিক বের করেন৷ বলিউডের তারকারাও থাকেন এই স্বেচ্ছাসেবীদের দলে৷ অভিনেতা নরেশ সুরি জানালেন, ‘‘আমি প্রায় সত্তর সপ্তাহ ধরে এদের সঙ্গে আছি৷ আমার বাড়ি তো আর ঢোকার দরজাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, গোটা শহরটা আমার বাড়ি, গোটা দেশটা আমার বাড়ি৷ ঐভাবে ভাবা দরকার৷''

ধীরে ধীরে লক্ষ্যে পৌঁছনো

 গোটা তিন কিলোমিটার স্ট্র্যান্ড ক্রমে আরো পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠছে৷ কিন্তু মুম্বইতে আরো অনেক এ ধরনের স্ট্র্যান্ড আছে৷ এছাড়া অতি নোংরা সব নদীনালা, যা দিয়ে সারা শহরের আবর্জনা সাগরে গিয়ে পড়ে৷

টুরিস্টদের স্বস্তি

প্রতিদিন মুম্বইতে দশ হাজার টন আবর্জনা সৃষ্টি হয়৷ সে ময়লা ফেলার স্তূপ বিশেষ নেই, কেননা, মুম্বই একটি উপদ্বীপ, এখানে জায়গা কম৷ পর্যটনের উপরেও তার প্রভাব পড়ে৷ ট্রাভেল এজেন্ট নলিন কাপাডিয়া জানালেন, আবর্জনার পাহাড় বিদেশি পর্যটকদের ভয় পাইয়ে দেয়৷

নলিন কাপাডিয়ার মতে, ‘‘এটা হলো একদিকে মানুষজন, অন্যদিকে সরকারের মনোবৃত্তির ফল৷ বিশেষ করে সরকারি তরফে গাফিলতি অতি দুঃখজনক৷ লোকের মনোবৃত্তি পাল্টাবে, যখন সরকার প্রেরণা জোগাবে৷''

কিন্তু সরকারের কী দায়? বহু গরীব ঐ আবর্জনা ঘেঁটেই বেঁচে থাকে৷ তারাবাঈ যে জাতের মানুষ, তারা অচ্ছুৎ বলে গণ্য হয়, কেননা, তারা ময়লা পরিষ্কার করে৷ তারাবাঈ বাবুরাও ময়লা কুড়োন৷ তিনি বললেন, ‘‘আমি প্রতিদিন দেড়শ' থেকে দুশ' কিলোগ্রাম প্লাস্টিক কুড়াই৷ তারপর প্লাস্টিক ও কাগজ আলাদা করে পাঁচ টাকা কিলোগ্রাম, একটাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি করি৷''

কার কাছে বিক্রি করেন সেটা আর দেখানো গেল না, কেননা, পুলিশ এসে ছবি তোলা বন্ধ করল৷ নইলে যে মুম্বইয়ের বদনাম হবে! 

আবর্জনা সংকট দূর করার একমাত্র পন্থা হলো শিক্ষা৷ ‘কালার ড্রামা' রিসাইক্লিং প্রকল্পের নাতাশা ডি'কোস্টার তা-ই বিশ্বাস৷ নাতাশা পুনর্ব্যবহারযোগ্য আবর্জনা কিনে নিয়ে স্কুলের ছেলেমেয়েদের দেখান, দেখান আবর্জনা থেকে কত কিছু তৈরি করা যায়৷

নাতাশা বললেন, ‘‘ভারতের ঐটাই মজা৷ আমরা রিসাইক্লিংয়ের এক্সপার্ট, ওটা আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ৷ আজ আমরা বড় বেশি আবর্জনা সৃষ্টি করছি৷ আমাদের শিখতে হবে, এই আবর্জনায় কী পরিমাণ ব্যবহারযোগ্য পদার্থ আছে, যা আমরা ফেলে দিচ্ছি৷''

সৈকত না শৌচালয়?

কিন্তু যত আবর্জনা সাগরে গিয়ে পড়ে, তার সব কিছু দিয়েই যে শিল্পকলা সৃষ্টি করা যায়, এমন নয়৷ বিশেষ করে মানুষের বর্জ্য থেকে তো তা সম্ভবই নয়৷ অথচ সমুদ্রসৈকত আবার ‘শৌচালয়ও' বটে, বিশেষ করে যাদের শৌচালয় নেই, তাদের জন্য৷

আফরোজ শাহ বললেন, ‘‘গরীবরা করবেই বা কী, তাদের পায়খানাগুলো এত নোংরা৷ আর আমারই বা কী কর্তব্য? পুলিশ ডেকে ওদের ফাইন করব? পায়খানা পরিষ্কার করাটাই হবে আমাদের কাজ৷ গত তিন মাস ধরে আমরা ঠিক তা-ই করছি৷''

কিন্তু প্রথমে স্ট্র্যান্ড থেকে সব প্লাস্টিক সরাতে হবে, যে কাজটা খুব সহজ নয় – যে কোনো সপ্তাহান্তে এখানে হাত লাগালেই তা বোঝা যায়৷

রবিবার ছুটির দিনে আফরোজ ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা যে ‘ক্লিন স্ট্র্যান্ড' কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, সেটা একটা ঘাম ঝরানো কাজ, আবার খুব গুরুত্বপূর্ণও বটে৷