1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মুসলিম – দ্য নেক্সট জেনারেশন’

২২ জুলাই ২০১০

জার্মানিতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কম নয়৷ মুসলিম অভিবাসী পরিবারের যেসব সন্তান জার্মানিতেই জন্মগ্রহণ করেছে, জার্মানই যাদের মূল ভাষা – তারা এক অভিনব পত্রিকা প্রকাশ করছে৷

https://p.dw.com/p/ORcj
জার্মানিতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কম নয়ছবি: AP

সাংবাদিকদের বয়স ১৯ থেকে ৩০৷ ব্লগার হিসেবে এই সাত জনেরই লেখার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ ফেব্রুয়ারি মাসে অনলাইন পত্রিকা হিসেবে চালু হলেও ‘মুসলিম – দ্য নেক্সট জেনারেশন' এখন পত্রিকার আকারে ছাপা হচ্ছে৷ ধর্ম ও সমাজ সংক্রান্ত অনেক বিষয় নিয়ে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান পত্রিকার উদ্যোক্তারা৷ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী পরিবারের এই তরুণ প্রজন্ম একমাত্র জার্মান ভাষায় ভাবের আদান-প্রদান করতে পারে৷

Deutschland Muslime Treffen Essen
মুসলিম ও অ-মুসলিম তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মত-বিনিময় অনেক ভুল ধারণা দূর করতে পারেছবি: picture-alliance/ dpa

‘এখন নয় তো কখন? আমরা নয় তো কারা' – এবার আমাদের কথা বলার পালা!'' – এটাই পত্রিকার স্লোগান৷ জার্মানির তরুণ মুসলিম প্রজন্ম এভাবেই নিজেদের কথা বলতে চায়, শুনতে ও শোনাতে চায়৷ আজকের যুগের যে কোনো তরুণ-তরুণীর মতো তারাও ইন্টারনেটের জগতে সাবলীলভাবে বিচরণ করে৷ সেখানেই তাদের আলাপ পরিচয়৷ সেখানেই শুরু হয় পত্রিকা শুরু করার ভাবনা-চিন্তা৷ ইয়াসমিনা আবদাল কাদের এক ফোরামে এমন তরুণ-তরুণীর খোঁজ শুরু করেন, যারা লিখতে আগ্রহী৷ পেয়েও যান কয়েক জনকে৷

Flash-Galerie Nationalspieler Mesut Özil
মেসুত ও্যজিল জার্মান অভিবাসী তরুণ প্রজন্মের কাছে বিশাল অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেনছবি: AP

২০০৯ সালের জুন মাস থেকে এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন ফতমা কামুর৷ ডুইসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ মাধ্যম সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চশিক্ষার দৌলতে ২০ বছর বয়সী ফতমা এমনিতেই মিডিয়া জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন৷ তবে জার্মানির সংবাদ মাধ্যমের মূল ধারায় তিনি নিজের কণ্ঠ খুঁজে পান নি৷ ফতমা বললেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সমাজ সম্পর্কে সংবাদ মাধ্যমে অনেক কিছু লেখা হয়৷ আমাদের বিষয়ে অনেক লেখা হয়েছে৷ এবার আমরা নিজেরাই নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে চাই৷ এখনো পর্যন্ত এমন কোনো মঞ্চ ছিলো না, যার মাধ্যমে মুসলিম তরুণ-তরুণীরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে৷ পত্রিকার দপ্তরে আমরা সবাই মুসলিম – তবে তার থেকেও বড় পরিচয় হলো, আমরা জার্মান মুসলিম৷ সেজন্যই পত্রিকার নাম রাখা হয়েছে ‘মুসলিম – দ্য নেক্সট জেনারেশন'৷ আমরা এই প্রজন্মেরই প্রতিনিধি৷ আমরা কিন্তু যে কোনো প্রজন্ম নয় – দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্ম নয় – আমরা হলাম ‘নেক্সট' বা পরবর্তী প্রজন্ম, যারা জার্মানিতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে চায়৷ আমাদের মধ্যে যোগসূত্র হলো জার্মান ভাষা৷''

Muslime in Deutschland Frau mit Computer p178
বোরখা বা হেজাব নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিয়ে জোরালো বিতর্ক চলছেছবি: AP

উদ্দেশ্য কিছুটা পরিবর্তন আনা – যেমনটা করতে পেরেছেন মেসুত ও্যজিল৷ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতারাও এমন কিছু করতে চান৷ ফুটবল তারকা মেসুত ও্যজিল যেভাবে জার্মান জাতীয় দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে দিয়েছিলেন, সেবিষয়ে ফাতমা কামুর অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত৷ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে বিশ্বকাপ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন বেরিয়েছে৷ তাতে লেখা হয়েছে, হিজাব পরা মেয়ে বা কালো কোঁকড়ানো চুলের ছেলেরা যেভাবে আজকাল জার্মান টিমের জন্য গলা কাঁপাচ্ছে, এটা সত্যিই নতুন, অভিনব ও অসাধারণ ঘটনা৷ অর্থাৎ তারা জার্মানিকেই নিজের দেশ হিসেবে অনুভব করছে৷ পত্রিকায় বিষয়ের বৈচিত্র্যের অভাব নেই৷ বিশ্বকাপ ফুটবল, বোরখা নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ অথবা ইউরোপে মুসলিম হিসেবে পরিচয় সন্ধান – কী না নেই পত্রিকার পাতায়৷

Muslime in Deutschland Mann mit Gebetsschnur p178
তরুণ জার্মান মুসলিম হিসেবে সমাজ ও ধর্মের মধ্যে সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ছবি: AP

ফাতমা বললেন, ‘‘একদিকে ইসলামী সত্তা – অর্থাৎ ধর্মের বিষয়, অন্যদিকে সামাজিক বিষয় – এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ ইসলাম ধর্মের বিষয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন রয়েছে ঠিকই, কিন্তু অন্যদিকে অনেক সামাজিক প্রকল্প ও সভা-সমাবেশ সম্পর্কেও লেখা হয়৷ তাছাড়া রয়েছে বেশ মজার একটা পাতা, যার নাম রাখা হয়েছে ‘কুকিং উম্মা'৷ এখানে এমন সব খাবারের রেসিপি খুঁজে পাবেন, যা হালাল পদ্ধতিতে তৈরি করা যায়৷''

গোটা জার্মানিতে ছড়িয়ে রয়েছেন পত্রিকার ৭ জন সাংবাদিক৷ সপ্তাহে একবার ইন্টারনেটে স্কাইপে'র মাধ্যমে তাঁরা আলোচনা করেন৷ আগামী সংখ্যার বিষয় নির্বাচন থেকে শুরু করে কাজের বণ্টন, এসব বিষয়ে তাঁরা একসঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন৷ পত্রিকার নিজস্ব কোনো কর্মী নেই বটে, কিন্তু বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ স্বেচ্ছায় তরুণ এই টিমকে প্রযুক্তি বা গ্রাফিক্সের ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকেন৷ ১৩ থেকে ৩০ বছরের মুসলিম ও অ-মুসলিম তরুণ-তরুণীদেরই আকর্ষণ করতে চান ‘মুসলিম – দ্য নেক্সট জেনারেশন'এর উদ্যোক্তারা৷

কিশোর বা তরুণ পাঠকদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে৷ তাদের মধ্যে অনেকেই বিষয়গুলির সঙ্গে একাত্ম বোধ করছেন৷ তাদের বাবা-মায়েরাও এই উদ্যোগ সম্পর্কে বেশ ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন৷ এমনিতে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের কাছে তাঁরা যেসব পত্র-পত্রিকা দেখেন, তার ফলে তাঁদের চোখ প্রায়ই কপালে উঠে যায়৷ কিন্তু একদল তরুণ যেভাবে নিজেদের উদ্যোগে, নিজেদের টাকা খরচ করে ধর্ম, সমাজ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পত্রিকা ছাপছে, তা দেখে অনেকেই বেশ মুগ্ধ হচ্ছেন৷ তবে এই পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে হলে অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে হবে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ