1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত্যুদণ্ড রোধ করতে জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন

৩ মার্চ ২০১০

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হল মৃত্যুদণ্ড রোধ করতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন৷ প্রতি তিন বছর পর পর আয়োজন করা হয় এই সম্মেলনের৷ ২০০১ সালে প্রথম এ ধরণের সম্মেলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়৷

https://p.dw.com/p/MI2z
জেনেভার সম্মেলনের পোস্টার

ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত জেনেভায় অনুষ্ঠিত হল মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ বিশ্ব সম্মেলন৷ উপস্থিত হয়েছিল জাতিসংঘের ১৯২টি দেশ৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদেশগুলো থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেয়া হয়েছে অনেক আগে৷ ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ইটালিই মৃত্যুদণ্ড নির্মূলে এগিয়ে রয়েছে৷ দু'শো বছরেরও আগে অর্থাৎ ১৭৮৬ সালে ইটালির টাসকানি এলাকা থেকে প্রথম মৃত্যুদণ্ড তুলে দেয়া হয়৷ এই সম্মেলনে ইটালির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে ইটালির রাষ্ট্রদূত লাউরা মিরাকিয়ান৷

তিনি জানান, ‘‘ইটালির সমাজের অন্তঃস্থল থেকে মৃত্যুদণ্ডকে তুলে নেয়া হয়েছে৷ আমাদের সমাজে, সংস্কৃতিতে মৃত্যুদণ্ডের কোন জায়গা নেই৷ এবং সেটা আজ থেকে নয় অষ্টাদশ শতাব্দী থেকেই৷ টাসক্যানি অঞ্চলই প্রথম মৃত্যুদণ্ড তুলে নেয়৷ ১৭৮৬ সালের যুদ্ধই ছিল মূল কারণ৷''

Todesstrafe für Kinder im Iran Protest von Amnesty International
মৃত্যুদণ্ড রোধ করতে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সোচ্চারছবি: picture-alliance/dpa

আধুনিক ইটালি অবশ্য মৃত্যুদণ্ড না দেয়ার প্রথা মেনে চলছে ১৯৪৮ সাল থেকে৷ একই বছর জাতিসংঘ গ্রহণ করে মানবাধিকার সংক্রান্ত সার্বজনীন ঘোষণাপত্র৷ সেখানেও মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়৷ কোন অবস্থাতেই কোন মানুষ যেন অমানবিক শাস্তির শিকার না হয় সে বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়৷ ১৯৪৯ সাল থেকে জার্মানিতে আইন প্রণয়ন করে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়৷ এরপর আসে ১৯৬৬ সালের দুটি অঙ্গীকারমূলক প্রস্তাব৷ সেখানে সদস্যদেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয় মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার৷ মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছেন ইটালির মারিও মোরাৎসিটি৷ তিনি জানান, ১৯৭০ সালের মধ্যেই অন্তত ২৩টি দেশ থেকে মৃত্যুদন্ড তুলে নেয়া হয়৷

১৯৮০ সাল থেকে জাতিসংঘের প্রায় ১৯২টি দেশের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড তুলে নেয়ার মনোভাব লক্ষ্য করা যায়৷ মোরাৎসিটি আরো জানান, গত ৩০ বছরে মৃত্যুদন্ড তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা অগ্রগতি লক্ষ্য করেছি৷ এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন৷ বিশ্বে, ইউরোপ হচ্ছে প্রথম মহাদেশ যেখান থেকে মৃত্যুদণ্ড পুরোপুরি তুলে নেয়া সম্ভব হয়েছে৷

Italien Rom Kolosseum Symbol gegen Todesstrafe
দু’শো বছরেরও বেশি সময় ধরে ইটালিতে কেউ মৃত্যুদণ্ডের সাজা পায়নিছবি: AP

শুধু ইটালি নয় ইউরোপের অন্যান্য দেশও মৃত্যুদণ্ড তুলে নেয়ার জন্য নানা দেশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে৷ চেষ্টা করা হয়েছে জাতিসংঘের মাধ্যমে, জাতিসংঘের মানাবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে৷ নিউ ইয়র্কের সাধারণ পরিষদে ১৯৯৮ সালে ইউরোপীয়দের এই প্রচেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়৷ কারণ চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আফ্রিকা এবং এশিয়ার বেশ কিছু দেশ ‘মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োজন রয়েছে' বলে জানায়৷ মোরাৎসিটি এ বিষয়ে আরো বললেন, যেহেতু সে সময় বেশ কিছু দেশ মৃত্যুদণ্ড তুলে নেয়ার বিপক্ষে ছিল সেকারণেই কোন প্রস্তাব পাশ করানো সম্ভব হয়নি৷ অপত্তি ওঠানো হয়েছিল এই বলে যে, এটা হচ্ছে মানবাধিকার রক্ষার নামে আর এক ধরণের নব্যউপনিবেশবাদী পন্থা৷ অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা৷

তবে ২০০৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মত মৃত্যুদণ্ড তুলে নেয়ার পক্ষে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়৷ সেখানে পরিস্কার করে বলা হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা কোন রাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যাপার বলে গণ্য হবে না৷ বরং মানবাধিকারের চূড়ান্ত লংঘন বলেই তা ধরে নেয়া হবে৷

ইতিমধ্যে সারা বিশ্বের প্রায় ১৪১ টি দেশ মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে৷ এর মধ্যে ৯৩টি দেশ কোন অবস্থাতেই শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিতে নারাজ৷ এমনকি যুদ্ধ চলা অবস্থাতেও নয়৷ তবে ৫১টি দেশ এবং পাঁচটি ভূখন্ডে এখন পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড টিকে আছে৷ দেশগুলোর মধ্যে চীন, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, ইরান এবং উত্তর কোরিয়া উল্লেখযোগ্য৷

Symbolbild Todesstrafe Todeszelle
টেক্সাসে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়ছবি: AP

জেনেভার এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল এই ৫১টি দেশকে ধীরে ধীরে মৃত্যুদণ্ড নির্মূলে উদ্বুদ্ধ করা৷ জাতিসংঘ এ বছরই সাধারণ পরিষদে মৃত্যুদণ্ড নির্মূল করতে একটি প্রস্তাব পাশ করার চেষ্টা করছে৷ ২০০৭ সাল থেকে সারা বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষায় তৎপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, বেড়েছে তাদের সক্রিয়তা৷ মৃত্যুদণ্ড নির্মূল করতে যে প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে তাতে অ্যামেরিকা আর চীন হয়তো সরাসরি ‘না' বলতে পারবে না, তারা হয়তো ভোট দেয়া থেকেই বিরত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে৷

তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যাপারে যেদেশটি সবার নজর কাড়ে সে হল চীন৷ পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় না যতটা হয় চীনে৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনাল একটি জরিপে জানিয়েছে ২০০৮ সালে চীনে প্রায় ১৭ শ' মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ ২০০৯ সালে কতজন মানুষকে মৃত্যুদণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল তা যদিও চীন সরকার জানায়নি তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে ২০০৮ সাল থেকে সে সংখ্যা কমেছে বলে মনে হয় না৷

China Todesstrafe
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে চীন রয়েছে শীর্ষেছবি: picture-alliance/dpa

জার্মানিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যালের পক্ষে কাজ করছেন ডির্ক প্লাইটার৷ তিনি জানালেন,

‘‘চীনা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জানায়নি ২০০৯ সালে ঠিক কতজন মানুষকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছে৷ এর মূল কারণ হল এসব মৃত্যুর সংখ্যা সরকার সবসময়ই গোপন রাখতে চায়৷ তাই নিজস্ব প্রতিনিধির কাছ থেকেও এসব সংখ্যা বের করা কঠিন৷ কি কারণে, কাকে, কোথায়, কখন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে - সে তথ্য শুধুমাত্র সারকারের হাতেই থাকে৷''

চীনে অনেক ধরণের আইনের সংস্কার করা হয়েছে কিন্তু তারপরেও মৃত্যুদণ্ড বহাল তবিয়তে টিকে রয়েছে৷ চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিল মৃত্যুদণ্ডবিরোধী বিশ্বজোট সে সংস্থায় কাজ করছে অরেলি প্লাকেই৷ তিনি জানান, ‘‘তিব্বত ছাড়াও উইগুর সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘর্ষে কজন মারা গেছে বা কতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি৷ এছাড়া ২০০৯ সালে গ্রীষ্মে সিনজিয়াং প্রদেশে সংঘর্ষের কারণেও অনেক প্রাণহানি হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘তিব্বতে এবং উইগুর সম্প্রদায়ের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে নেমে এসেছিল মৃত্যুদণ্ডের খড়্গ৷ খুব অল্প সময়ে এবং দ্রুত এসব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ সিনজিয়াং প্রদেশে সংঘর্ষের কারণে জুলাই মাসে প্রথম মৃত্যুদণ্ডটি কার্যকর করা হয়েছে অথচ সে খবর নভেম্বর মাসে প্রচার করা হয়েছিল৷ এ কারণেই পাঁচ মাসে আইনজীবির কাছে যাওয়া, ক্ষমা প্রার্থনার কথা শোনা যায়নি৷ এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস করি অভিযোগ বা মামলার শুনানি কোন অবস্থাতেই নিরপেক্ষ ছিল না৷''

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক: আবদুল্লাহ আল-ফারূক