1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত্যুর পর স্বদেশে ফেরা

নেমানজা রুজেভিচ/আরবি৮ ডিসেম্বর ২০১৩

অভিবাসীদের অনেকেই মৃত্যুর পর স্বদেশে সমাহিত হতে চান৷ কয়েক দশক জার্মানিতে থাকার পরও ফেলে আসা মাতৃভূমির প্রতি টানটা থেকেই যায়৷

https://p.dw.com/p/1AUez
মৃত্যুর পর স্বদেশে সমাহিত হতে চান অনেক প্রবাসীছবি: Fotolia/Kzenon

অভিবাসীদের এই আকাঙ্খা থেকেই ব্যবসা গড়ে তুলেছেন রাদিসা মিহাজলোভিচ দ্রান্ডা৷ সার্বিয়ার শহর পোসারেভেচে অবস্থিত তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘দ্রান্ডা ইন্টারন্যাশনাল' বিদেশ থেকে মৃতদেহ নিয়ে আসার কাজটি করে থাকে৷ এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এটি৷ যে সব অভিবাসী সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন ও জার্মানিতে বসবাস করছেন তাদের অনেকেই মৃত্যুর পর স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷ বলে যান তাদের সন্তান-সন্ততিদের৷

‘‘তবে মা-বাবা, নানা-নানি ও দাদা-দাদিরা তাদের অন্তিম ইচ্ছাটা প্রকাশ করে না গেলে জার্মানিতেই তাদের সমাহিত করা হয়৷ কেননা তাহলে তাঁদের কবর বংশধরদের কাছাকাছি হয়,'' বলেন মিহাজলোভিচ৷

Islamische Bestattung Grab nach der Beisetzung
কোলোন শহরের একটি ইসলামি কবরস্থানছবি: DW/U. Hummel

সঠিক সংখ্যাটা জানা যায়নি

অভিবাসীদের মধ্যে কতজন এই আকাঙ্খা প্রকাশ করেন, তার সঠিক সংখ্যাটা জানা যায়নি৷ এজন্য প্রয়োজন মৃতদেহের পাসপোর্ট৷ এটি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তালিকাবদ্ধ না হওয়ায় পরিসংখ্যানও ঠিকমত পাওয়া যায় না৷

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সংক্রান্ত জার্মানির বৃহৎ ইন্টারনেট পোর্টাল-এর ফাবিয়ান শাফ-মেখটা অনুমান করেন, বছরে ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ মৃতদেহ জার্মানি থেকে বিদেশে পাঠানো হয়৷

অনেকে ২০-৩০ বছর জার্মানিতে বসবাস করলেও পরিবার পরিজনের সবাইকে এখানে আনতে পারেন না৷ তাই তারা পুরানো স্বদেশেই সমাহিত হতে চান৷ এছাড়া কেউ কেউ শেকড়ের কাছেই ফিরে যেতে চান মৃত্যুর পরে হলেও, বলেন ড্যুসেলডর্ফের ইসলামি দাফন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিখাম-এল-ফাউন্টি৷ তাঁর ভাষায় ‘‘এতে বোঝা যায় মাতৃভূমির প্রতি নিবিড় টানটা৷ মানুষ সেখানেই সমাহিত হতে চায়, যেখানে পূর্বপুরুষরা চিরনিদ্রায় শায়িত৷''

মুসলিম কবরের রীতিনীতি ভিন্ন

অবশ্য মুসলিমদের ক্ষেত্রে স্বদেশে সমাহিত হওয়ার এটাই একমাত্র কারণ নয়৷ ইসলাম ধর্মমতে, পবিত্র তীর্থস্থান মক্কার দিক অনুযায়ী কবর দেওয়া উচিত৷ জার্মানিতে সেটা সবসময় সম্ভব হয় না, জানান এল-ফাউন্টি৷ এছাড়া ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী কবর দিতে হয় কফিন ছাড়া৷ এক্ষেত্রেও অসুবিধা রয়েছে জার্মানিতে৷

যদিও নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কফিনে কবর দেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয় এখানে৷ জার্মানির অনেক কবরস্থানে ইসলামি প্রথা অনুযায়ী কবর দেওয়া হচ্ছে৷ তবে সব কবরস্থানে এই ব্যবস্থা রাখা হয় না বলে জানিয়েছে মুসলিম সমিতিগুলি৷

কবরস্থানগুলির নিজস্ব নিয়মকানুন আছে

নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের ৬,০০০ থেকে ৮,০০০ কবরস্থানের নিজস্ব নিয়মকানুন রয়েছে৷ এক্ষেত্রে খরচপাতিও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে৷ প্রক্রিয়াটা অনেক সময় ব্যয়বহুল হয়ে থাকে৷ এল-ফাউন্টি জানান, জার্মানিতে একটি অস্থায়ী কবরের জন্য ১,০০০ থেকে ৫,০০০ ইউরো খরচ হতে পারে৷ এক্ষেত্রে সমাহিতরা কেবলমাত্র ‘ভাড়াটে'৷ ২০ বছর পর আত্মীয় স্বজনদের কবরটিকে নবায়ন করার জন্য আবেদন করতে হয়৷ ‘‘তাই ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি৷ প্রায় ক্ষেত্রেই সমাহিত করার জন্য লাশ স্বদেশে পাঠিয়ে দেওয়াটাই সস্তা পরে,'' বলে জানান এল-ফাউন্টি৷

উল্লেখ্য ‘দ্রান্ডা ইন্টারন্যাশনাল' মৃতদেহ পরিবহণের জন্য প্রতি কিলোমিটারে এক ইউরো করে নেয়৷ অর্থাৎ ১৫০০ কিলোমিটার দূরের কোনো স্থানে কবর দিতে হলে ১৫০০ ইউরো ব্যয় হয়৷ দূরত্ব বেশি হলে মৃতদেহ প্লেনে পাঠানো হলে খরচ কম পড়ে৷

হিন্দু ধর্মের প্রথা অনুযায়ী শবদাহ করার পর সেই ভস্ম পবিত্র নদী গঙ্গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়, বলেন শাফ মেখটা৷ শবদাহের প্রক্রিয়াটা জার্মানিতেই করা হয়৷ ছাইটা গঙ্গা নদীতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আত্মীয়-স্বজনরা ভস্মের পাত্রটি প্লেনে হাতব্যাগে করেই নিয়ে যেতে পারেন৷ অথবা তা পাঠাতে পারেন ডাক মারফত৷ সমস্ত প্রক্রিয়াটা সুলভ মূল্যেই করা সম্ভব৷ জার্মানিতে মৃতদেহের ভস্ম নদীতে ছড়ানো দণ্ডনীয়৷