1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেক্সিকোয় পর্যটনের উদ্যোগ

১৭ মে ২০১৮

পর্যটন ও পরিবেশ – এই দুইয়ের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানো সহজ নয়৷ একদিকে পর্যটন থেকে আয়ের হাতছানি, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণের কালো ছায়া৷ মেক্সিকোর একটি অভিনব দ্বীপে পর্যটকদের এ বিষয়ে সচেতন করে তোলার চেষ্টা চলছে৷

https://p.dw.com/p/2xqii
Global Ideas Kreuzfahrtschiffe Karibikinsel Cozumel
ছবি: A. Warnstedt

মেক্সিকোর পরিবেশবান্ধব পর্যটন

মেক্সিকোর পূর্ব উপকূলে ক্যারিবীয় সাগরে কোসুমেল দ্বীপ৷ গোটা বিশ্বে ক্রুজ জাহাজের পর্যটকদের জন্য সেরা আকর্ষণগুলি মধ্যে একটি৷ প্রতি বছর প্রায় ৫০ লক্ষ পর্যটক সেখানে আসেন৷ বন্দরে একইসঙ্গে সাতটি জাহাজ নোঙর করতে পারে৷ দেখলে মনে হবে, যেন দ্বীপের উপর হামলা শুরু হয়েছে৷

হোসে নিয়েতো বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন৷ প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এই দ্বীপে বসবাস করছেন৷ এই সময়কালে দৈত্যাকার জাহাজগুলির জন্য বন্দরের ক্রমাগত সম্প্রসারণের সাক্ষী হয়েছেন তিনি৷ হোসে বলেন, ‘‘পর্যটন গোটা দ্বীপের জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ এখানে কর্মরত সব মানুষের আয়ের উৎস৷ আমরা পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল৷''

তবে পর্যটকরা সাধারণত দ্বীপের অভ্যন্তরে রেন ফরেস্ট এলাকায় যান না৷ তার প্রায় অর্ধেক অংশই সংরক্ষিত এলাকা৷ জীববিজ্ঞানী হিসেবে ক্রিস্টোফার গনসালেস সেই উদ্যোগ বজায় রাখতে চান৷ তাঁর মতে, দ্বীপটি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে কোসুমেল এ রকম দেখতে ছিল৷ আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ পর্যটকরা দ্বীপের নতুন পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছেন৷ আমাদের এই নতুন কোসুমেল-কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা সেই উদ্যোগেরই অংশ৷''

তিনি আরও বেশি পর্যটকদের এখানে নিয়ে আসতে চান, তাঁদের জন্য ট্রেকিং-এর ব্যবস্থা করতে চান৷ তবে পরিবেশের ক্ষতি এড়াতে কড়া নিয়ম মেনে চলতে হবে৷ এতকাল পর্যটকরা এই দ্বীপের অনবদ্য প্রবাল প্রাচীরের আকর্ষণে এসেছেন৷ কিন্তু সেই প্রাচীর কতকাল অক্ষত থাকবে?

কোসুমেল দ্বীপের কাছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর রয়েছে৷ পাঁচশ'রও বেশি প্রজাতির মাছ সেখানে বসবাস করে৷ তাদের মধ্যে কয়েকটি লুপ্তপ্রায়৷ অত্যন্ত নাজুক এই স্বর্গরাজ্য অমূল্য এক সম্পদ৷

দ্বীপের প্রাচীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেলে বছরে প্রায় ৭ কোটি ইউরো আয় কমে যাবে৷ জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড এক গবেষণার মাধ্যমে এমন পূর্বাভাষ দিচ্ছে৷ ক্রিস্টোফার গনসালেস বলেন, ‘‘পানির মান খারাপ হলে ও মাছের সংখ্যা কমে গেলে বছরে ১২ শতাংশ কম পর্যটক এই দ্বীপে আসবেন৷ তাই কঠিন পরিশ্রম করে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে৷ মানুষ মানে শুধু পর্যটক নয়, ডাইভিং গাইড-দের কথাও বলছি৷ তাঁরাই আমাদের দূত৷ গাইডরা যা করেন, পর্যটকরাও তা নকল করেন৷''

রাইমুন্ডো রামিরেস প্রতিদিন কাজের সময় সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেন৷ পেশায় তিনি ডাইভিং প্রশিক্ষক৷ তিনি বলেন, ‘‘কোসুমেল দ্বীপে ‘এল সিয়েলো' সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান৷ সেখানে টারকয়েস নীল রংয়ের পানি মাত্র দেড় মিটার গভীর৷ চারিদিকে তারা মাছ ছড়িয়ে রয়েছে৷ পর্যটকরা এসে সেগুলি হাতে তুলে নিয়ে সেলফি ছবি তুলে আবার পানিতে ফেলে দেন৷ হয়তো পরের দিনই সেই তারা মাছের মৃত্যু হয়৷ পর্যটকদের এ বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই৷ এখানে কোনো কিছুই ছোঁয়া উচিত নয়৷''

বেশিরভাগ পর্যটকদের এই সচেতনতার অভাবের কারণে রামিরেস ক্ষুব্ধ হন৷ সে কারণে তিনি ছোট দল নিয়ে পানিতে নামেন এবং তাঁদের স্পষ্ট নির্দেশ দেন৷ রাইমুন্ডো বলেন, ‘‘নিজের উৎসাহ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে প্রবাল প্রাচীরের কাছে ডুব দিলে প্রাচীরের সঙ্গে ধাক্কা লাগবে৷ হাত অথবা অক্সিজেন সিলিন্ডার আঘাত করতে পারে৷ প্রাচীর বা স্পঞ্জ সিলিন্ডারের ধাক্কা খেলে বিশাল ক্ষতি হয়৷ তখন সেগুলি ভেঙে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়৷

ক্রুজ জাহাজের পর্যটকরা বড়জোর অর্ধেক দিন দ্বীপে কাটান৷ সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য এই সময় যথেষ্ট নয়৷ মায়া সভ্যতার আমলে এখানে একটি ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল৷ মেয়র পেরলা টুন পেশ নিজে মায়া সম্প্রদায়ের মানুষ৷ পর্যটকরা সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে আরও আগ্রহ নিয়ে দ্বীপে আসুন, সেটাই তাঁর ইচ্ছা৷ তিনি বলেন, ‘‘কোসুমেল দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান সত্যি সুবিধাজনক৷ সে কারণে ক্রুজ জাহাজের পর্যটকদের ছাড়া আমাদের চলবে না৷ তবে তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দিতে সংকোচ করলেও চলবে না৷ আমাদের পরিবেশ দূষণ করলে এখানে আসা চলবে না৷ আমাদের দোকান ও রেস্তোরাঁয় না এলে এখানে আসা চলবে না৷ আমাদের সমাজে কোনো অবদান না রাখলে এখানে তোমাদের স্বাগত জানানো হবে না৷''

সন্ধ্যায় বন্দর ফাঁকা হয়ে যায়৷ কোসুমেল দ্বীপে শান্তি ফিরে আসে৷ তবে কয়েক ঘণ্টার জন্য স্বস্তি পাওয়া যায়৷ কারণ পরের ক্রুজ জাহাজ রওয়ানা হয়ে গেছে৷

ক্রিস্টিয়ান রোমান/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য