1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেঠো পথে ল্যাপটপ কাঁধে তথ্যকল্যাণী

১৪ জুলাই ২০১০

সাইকেল নিয়ে মেঠো পথে ঘুরে বেড়ান তারা৷ সঙ্গে ল্যাপটপ, মোবাইল৷ কখনো শিশু কিশোরদের কম্পিউটার শেখানো৷ কখনো মানুষকে মানবাধিকার বিষয়ে তথ্য পরামর্শ দেয়া৷ আবার কখনো বা অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা৷ তাদেরই নাম তথ্য কল্যাণী৷

https://p.dw.com/p/OIaN
এর আগে গ্রামীঁণ ব্যাংকের ঋণ গ্রামে টেলিফোন পরিষেবা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছিলছবি: picture-alliance / Godong

আলমডাঙ্গার মুক্তা

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার বাসিন্দা মনসুরা মুক্তা৷ বয়স ২৮, এক সন্তানের জননী৷ গ্রামে গ্রামে তিনি ঘুরে বেড়ান ল্যাপটপ কাঁধে নিয়ে৷ কোন গ্রামে কার কী সমস্যা, কিইবা তার সমাধান – এসব কিছুই মুক্তার নখদর্পণে৷ নিজেই জানালেন, গত দেড় বছরে হাজার দুয়েক মানুষকে সেবা দিয়েছেন তিনি৷ মুক্তা'র কথায়, ‘অনেককে তথ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে৷ বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালোও লাগে৷ বিপর্যস্ত অনেক মানুষ এখান থেকে তথ্য নিয়ে উপকারও পাচ্ছে৷ তাই, এই কাজ ভালোই লাগে৷'

কুলাউড়ার সঞ্জিতা

চলুন শুনি আরেকজনের কথা৷ মৌলভিবাজারের কুলাউড়ার বাসিন্দা সঞ্জিতা পাল৷ কী করেন তিনি? জবাবে সঞ্জিতা, ‘মরিচ ক্ষেতে পোকা, কৃষিতে পোকা - এখন কী করতে হবে? আমার একটি ল্যাপটপ আছে৷ সেটি নিয়ে কৃষকদের কাছে গেলাম৷ তারপর রোগের ধরণ দেখে ওষুধের খোঁজ দিলাম৷'

অবশ্য শুধু কৃষককে সেবা দেয়া নয়৷ সঞ্জিতা শিশু কিশোরদেরও কম্পিউটার শেখান৷ মহিলাদের নানা চিকিৎসায় সহায়তা করেন৷ এছাড়া ইন্টারনেট কেন্দ্রিক অন্যান্য সেবাতো রয়েছেই৷ এসব করে সঞ্জিতা'র আয়ও কিন্তু কম নয়৷ একমাসে নাকি আয় করেছিলেন ১৩ হাজার টাকা৷ গড়পড়তা আয় সাত থেকে আট হাজার টাকা৷

ডি.নেট

তথ্য কল্যাণীদের প্রশিক্ষণ এবং পরে তাদের নানা সহায়তা দিয়ে থাকে বেসরকারি সংস্থা ডি.নেট৷ কয়েকজন তথ্য কল্যাণীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, সংস্থাটির কাছ থেকে গড়পড়তায় ১৫ দিন করে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তারা৷ এখন পর্যন্ত এরকম তথ্য কল্যাণীর সংখ্যা ২৩ জন৷ একেকজন তথ্যকল্যাণীর আওতায় রয়েছে ৪ থেকে ৫টি গ্রাম৷ আগামী দু'মাসের মধ্যে এই তালিকায় যোগ হবেন আরো ২০ জন তথ্যকল্যাণী৷ অবশ্য, ডি.নেট চাইছে সারা দেশেই তথ্য কল্যাণীদের ছড়িয়ে দিতে চান তারা৷ সংস্থাটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘বর্তমানে তথ্যকল্যাণীরা বেশ কয়েকধরণের সেবা মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন৷ প্রয়োজনীয় তথ্য এবং সঙ্গে পরামর্শ দিচ্ছেন৷'

চিকিৎসা সেবা

প্রশ্ন আসতে পারে, তথ্য কল্যাণীরা যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন সেটা কতটা যৌক্তিক৷ বিশেষ করে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ তাদের আছে কিনা সেটিও একটি বড় বিষয়৷ মাহমুদ হাসান অবশ্য জানালেন, তথ্যকল্যাণীরা মূলত রোগীর অবস্থা বুঝে বিভিন্ন হেল্পলাইনে ফোন করেন৷ এরপর হেল্প লাইনই চিকিৎসার পথ বাতলে দেয়৷ আর এই সেবা সীমিত পর্যায়ে৷ তিনি জানান, তথ্য কল্যাণীরা স্বাস্থ বিষয়ক তথ্যগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে৷ একইসঙ্গে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া বিষয়বস্তু তারা জনসাধারণকে দেখিয়ে সচেতনতা তৈরি করছে৷ তাছাড়া তারা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগীর সংযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছে৷

জীয়ন

হেল্পলাইন ছাড়াও ডি.নেট বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সিডিও সরবরাহ করে থাকেন তথ্যকল্যাণীদের৷ বাংলা ভাষায় সিডি'র এই সংকলনকে বলা হয় জীয়ন৷ এর আওতায় রয়েছে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের সিডি৷

শেষ করার আগে আরেকটি তথ্য৷ তথ্যকল্যাণী কিন্তু সীমাবদ্ধ নয় শুধু নারীদের মাঝে৷ নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কেউ কাজ করতে পারেন৷ তবে নারীদের ক্ষেত্রে প্রাধান্যটা একটু বেশি৷ কেননা নিভৃত পল্লির গৃহবধু'র সমস্যা শোনাটা একজন মেয়ের পক্ষে অনেকটাই সহজ, এমনটাই যুক্তি ডি.নেট এর৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক