1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মোস্ট ওয়ান্টেড পাকিস্তানি’ হাফিজ সায়ীদের সাক্ষাৎকার

২৬ মার্চ ২০১০

যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, ভারত ও জাতিসংঘের তালিকায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড পাকিস্তানি’র নাম হাফিজ মুহাম্মদ সায়ীদ৷ পশ্চিমের প্রথম সাংবাদিক হিসেবে রবার্ট ফিস্ক মুখোমুখি হয়েছিলেন হাফিজ সায়ীদের৷ ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ সাক্ষাৎকারটি ছেপেছে৷

https://p.dw.com/p/MeNx
মুম্বই হামলার জন্য দায়ী মনে করা হয়ে থাকে পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈইয়্যেবা’কেছবি: AP

অভিযোগ রয়েছে সায়ীদই পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘লস্কর-ই-তৈয়বা'র প্রতিষ্ঠাতা প্রধান এবং শীর্ষ নেতা এবং তিনিই মুম্বই হামলার মূল পরিকল্পক৷ ‘এলইটি' হিসেবে পরিচিত ‘লস্কর-ই-তৈয়বা'কে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এমনকি খোদ পাকিস্তানও৷

কিন্তু, পাকিস্তানের লাহোরে একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবেই ঘোরাফেরা করেন সায়ীদ৷ রবার্ট ফিস্ককে সায়ীদ জানিয়েছেন, লাহোরের উচ্চ আদালতে সম্প্রতি এক মামলায় জিতে এই অধিকার অর্জন করেছেন তিনি৷ ‘লস্কর-ই-তৈয়বা'র প্রতিষ্ঠাতা বা প্রধান হওয়া তো দূরে থাক সংগঠনটির সঙ্গে সায়ীদের কোনো সম্পর্কই প্রমাণ করতে পারেনি আদালত৷ আর মুম্বই হামলায় জড়িত থাকার বিষয়েও তার বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি৷

সায়ীদ জানান, ‘জামায়াত-উদ-দাওয়াহ' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান তিনি৷ প্রায় ২,০০০ শাখা অফিস এবং পর্যাপ্ত তহবিল সমৃদ্ধ এই সংগঠনটি পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ এনজিও৷ ভূমিকম্প এবং বন্যা উপদ্রুতদের উদ্ধার কার্যক্রম এবং সহায়তায় সুনাম রয়েছে তার সংগঠনের৷

ফিস্ক লিখেছেন, লাহোরের শহরতলির একটা এলাকায় ছোট্ট অফিস ও বাসায় সারাক্ষণই দুই সশস্ত্র পুলিশের পাহারায় থাকেন সায়ীদ৷ ওই বাসাতেই ফিস্ককে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি৷ স্পষ্ট ভাষাতেই ভারতের সমালোচনা করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিন্দা জানান সায়ীদ৷ বলেছেন ‘লস্কর-ই-তৈয়বা' এবং তার এনজিও প্রতিষ্ঠার কথাও৷

‘লস্কর-ই-তৈয়বা'র প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে সায়ীদ বলেন, ‘‘রাশিয়া আফগানিস্তানে হেরে যাওয়ার এবং চলে যাওয়ার পরপরই কাশ্মীরে অনেক ধরণের আন্দোলন শুরু হয়৷ ১৯৯০ সালের সেই সময়টাতে ১২টি আলাদা সংগঠন জন্ম নেয় কাশ্মীরে৷'' সায়ীদ বলেন, ‘‘লস্কর-ই-তৈয়বা সেগুলোরই একটি, যারা কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামের যোগ দিয়েছিল৷ আমাদের অনেক লোক ছিল এবং আমরা লক্ষ্য করি যে ‘লস্কর-ই-তৈয়বা' সবচেয়ে বেশি কঠোর পরিশ্রমী এবং সৎ৷''

Lashkar-e-Taiba Afghanistan Taliban
পাকিস্তানের আদিবাসী এলাকা বাজাউরে লস্কর-ই-তৈয়বা’র মিলিশিয়াদের সশস্ত্র উল্লাস৷ছবি: AP

কিন্তু, সেসময়ে তিনি আফগানিস্তানে ছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সায়ীদ বলেন, ‘‘একেবারে শুরু থেকেই আমরা রাশিয়ার দখলদারিত্বের কঠোর বিরোধিতা করেছিলাম৷ যারা দখলদারিত্ব এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল আমরা তাদের সাহায্য করেছিলাম৷''

সায়ীদ আরও বলেন, ‘‘হ্যাঁ আমি আফগানিস্তানে গিয়েছিলাম৷ আমি সফর করছিলাম পরিস্থিতিটা নিজে চোখে সরেজমিনে দেখতে৷ তবে, আমি যোদ্ধাদের দলে ছিলাম না৷''

বেশ আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে হাস্যোজ্জ্বল মুখেই সায়ীদ বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য ‘লস্কর-ই-তৈয়বা'র সংগ্রাম ন্যায়সঙ্গত৷ একইসঙ্গে আমরা ঠিক যেমন মনে করেছিলাম যে,আফগানিস্তানে রাশিয়ার দখলদারিত্ব ঠিক ছিল না, তেমনি আমরা বিশ্বাস করি অ্যামেরিকা এবং ন্যাটোকেও অবশ্যই আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে হবে৷''

আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে কখনও দেখা হয়েছিল কি না এর উত্তরে সায়ীদ জানান, ‘‘আশির দশকের কোনো এক সময়ে হজের সময়ে আমি তাঁকে দেখেছিলাম৷ আমি একবারই তাঁকে দেখেছিলাম৷ ইবাদতের সময় আমি তাঁর কাছাকাছি ছিলাম৷ আমরা কোলাকুলি করেছি৷ এটা ছিল খুবই সাধারণ, অল্প সময়ের সাক্ষাৎ৷ আমরা খুব বেশি কথা বলিনি৷''

রবার্ট ফিস্ক লিখেছেন, সায়ীদের সব কথা শুনেই মনে হচ্ছিল তিনি ‘লস্কর-ই-তৈয়বা'র নেতা৷ কিন্তু সায়ীদ ভারতকে দোষারোপ করে এ বিষয়ে নিজের পক্ষে বলেন, ‘‘এটা অন্যতম বড় মিথ্যাচার যে আমি নাকি প্রতিষ্ঠাতা৷ এটা ভারতের প্রপাগান্ডার ফল৷''

সায়ীদ বলেন, ‘‘২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জইশ-ই-মুহাম্মদ ও আরও কিছু সংগঠন নিষিদ্ধ করে দেয়৷ আমরা জামায়াত-উদ-দাওয়াহ এর ব্যানারে কাজ চালিয়ে যেতে থাকি৷ আমাদের এই সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়নি এবং আমরা এখনও এই নামেই কাজ করে যাচ্ছি৷''

সম্প্রতি দুই দেশের বৈঠকে মুম্বই হামলা নিয়ে পাকিস্তানের কাছে ভারত যে সব নথিপত্র ও তথ্যপ্রমাণ দিয়েছে তার মধ্যে হাফিজ মুহাম্মদ সায়ীদের বিষয়েও তথ্য আছে৷ মুম্বই হামলায় জড়িত অভিযোগে সায়ীদ সহ আরও ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার এবং ভারতের কাছে হস্তান্তরের জন্যও আহ্বান জানিয়েছে ভারত৷

২০০৮ সালের মুম্বই হামলায় ১৬৬ জনের মৃত্যু ছাড়াও ২০০৫ সালে মুম্বইয়ের ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণে ২১১জনের মৃত্যু, ২০০০ সালে ছিত্তিশিংপুরায় ৩৫ শিখের মৃত্যু, দিল্লির লাল কেল্লা এবং পার্লামেন্টে হামলাসহ ভারতে আরও অনেক সন্ত্রাসী হামলার জন্য ‘লস্কর-ই-তৈয়বা'কেই দায়ী মনে করে ভারত৷

প্রতিবেদন : মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা : অরুণ শঙ্কর চৌধুরী