1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদী-ট্রাম্প বৈঠকে চাওয়া-পাওয়ার খতিয়ান

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৮ জুন ২০১৭

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম শীর্ষ বৈঠকে একটা আন্তরিক আবহ গড়ে উঠেছিল৷

https://p.dw.com/p/2fY75
ছবি: Reuters/K. Lamarque

রেড কার্পেট অভ্যর্থনা, উষ্ণ আলিঙ্গন, হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে একান্ত বৈঠক, গোলাপ বাগিচায় মিডিয়ার সামনে বক্তব্য রাখা, বিদেশি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মোদীর সম্মানে প্রথম নৈশভোজ৷ সব মিলিয়ে কূটনৈতিক মহলের মতে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে এক অনুকুল রসায়ন তৈরি হয়েছে৷

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের ষ্ট্র্যাটিজিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য, বিশেষ করে চীন যখন ভারতের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে৷ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় প্রথমেই উঠে আসে সন্ত্রাসবাদ৷ যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্রাস কোনো দেশ বা অঞ্চলের নয়৷ সন্ত্রাস গোটা দুনিয়ার উদ্বেগের বিষয়৷ সর্বশক্তি দিয়ে তা নির্মূল করাই হবে মোদী-ট্রাম্পের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার৷ পাকিস্তানকে এই প্রসঙ্গে কড়া বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে পাকিস্তানের মাটিকে যেন আর ইসলামি জঙ্গি সংগঠনেগুলির আখড়া বানাতে দেওয়া না হয়৷ ২৬-১১ মুম্বাই হামলা, পাঠানকোট হামলার অপরাধীদের বিচার পর্ব দ্রুত শেষ করে শাস্তি ঘোষণা করতে হবে৷

উল্লেখ্য, বৈঠকের প্রাক্কালে পাকিস্তানে ঘাঁটি গাড়া হিজবুল মুজাহিদিনের পান্ডা সৈয়দ সালাউদ্দিনকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করা হয়৷ তারই অঙ্গুলি হেলনে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে মদত দিচ্ছে সংযুক্ত জেহাদি কাউন্সিল৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক্তিয়ারে থাকা সালাউদ্দিনের যাবতীয় পরিসম্পদ আটক করা হয়েছে এবং অ্যামেরিকানদের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হবে৷

ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাত্রা৷ যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ভারতের কাছে চালকবিহীন ২২টি নজরদারি ড্রোন বিক্রি করবে৷ হেলিকপ্টার ও মালবাহী বিমানও বিক্রি করবে৷ এসবের মোট দাম প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার৷ ট্রাম্পের মতে, এতে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বাড়বে৷ স্ট্র্যাটেজিক্যালি গুরুত্বপূর্ণ ভারত মহাসাগরের ওপর ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি করতে ভারতের সুবিধা হবে৷

আসন্ন মালাবার নৌ-মহড়া সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে ভারত মহাসাগরের বৃহত্তম এই নৌ-মহড়ায় যোগ দেবে জাপানও৷ পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উভয় দেশ৷ আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দিল্লির মানবিক সাহায্য ও সহযোগিতার প্রশংসা করা হয়৷ এক্ষেত্রে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ও পরামর্শের ওপর জোর দেওয়া হয়৷

অনুরূপভাবে উত্তর কোরিয়ার সমরসজ্জা ট্রাম্প এবং মোদীর কপালে ভাঁজ ফেলেছে৷ পিয়ংইয়ংয়ের এই যুদ্ধংদেহী ভাব প্রতিহত করা জরুরি৷ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনে ভারতের নিষেধাজ্ঞা জারিকে স্বাগত জানানো হয়েছে৷ ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যে একটা ভারসাম্য রাখার কথা বলা হয়৷ তবে উভয় দেশই প্যারিস জলবায়ু বা ভারতীয়দের জন্য বি-ওয়ান ভিসা নিয়ে একটি কথাও খরচ করেনি কেন ? ট্রাম্পকে অস্বস্তিতে ফেলতে চায়নি দিল্লি৷ এই দুটি বিষয়ে ট্রাম্পের কড়া অবস্থান অজানা নয়৷

‘ভারতকে সঙ্গে না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপায় নেই’

মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফর কতটা সফল হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতকে সঙ্গে না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপায় নেই৷ ভারতের বাজার অর্থনীতি যেভাবে গড়ে উঠছে, তাতে ভারতকে উপেক্ষা করা ওয়াশিংটনের পক্ষে সম্ভব নয়৷ অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদ বিশ্বে একটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে, সেটা তুলে ধরা হলেও সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ মদত থাকা সত্বেও পাকিস্তানের নাম উচ্চারণ করা হয়নি৷সমরাস্ত্র ব্যবসা যুক্তরাষ্টের বাণিজ্যিক নীতির স্তম্ভ৷ মোদী-ট্রাম্প বৈঠকে সেটাই ঘুরে ফিরে এসেছে৷ দক্ষিণ এশিয়ায় অস্ত্রভান্ডার গড়ে তোলাই যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য৷ কাজেই মোদীর এই সফর একটা রুটিন মাত্র৷’’ ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মোদীর প্রথম বৈঠক৷ অনেক কিছুই আশা করা হয়েছিল কার্যত তা পূরণ হয়নি, ডয়চে ভেলেকে বললেন অধ্যাপক ইমন কল্যান লাহিড়ি৷