1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক

১৮ জানুয়ারি ২০১১

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ডাব্লিউএইচও’র তথ্য অনুযায়ী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আফ্রিকায় প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে মারা যায় এক জন শিশু৷ এই রোগটিকে প্রতিরোধ করার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনো টিকা বের হয়নি৷

https://p.dw.com/p/zz1N
অ্যান্টিবায়োটিকছবি: AP

প্রচলিত ওষুধগুলির দামও বেশি, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম নয়৷ এক্ষেত্রে এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিপ্লব আনতে পারে৷ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এক বিশেষজ্ঞ টিম গবেষণা করে বের করেছেন যে, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অ্যাজিথ্রোমাইসিন ম্যালেরিয়া থেকে শুধু আরোগ্যই করে না, এই অসুখটির বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধশক্তিও গড়ে তোলে৷ বেশ কয়েক দশক ধরেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে অ্যাজিথ্রোমাইসিন৷ লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ওষুধটি খেয়ে অন্যান্য অসুখ বিসুখ সারিয়েছে৷ কিন্তু ম্যালেরিয়ার জন্য এই ওষুধটির কথা এই প্রথম চিন্তা করা হল৷ বার্লিনের মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউটের গবেষক সংক্রমণ জীববিজ্ঞানবিদ ডাঃ ইওহানেস ফ্রিজেন বলেন, ‘‘অ্যাজিথ্রোমাইসিন কান বা ফুসফুসের সংক্রমণে নেয়া হয়৷ অর্থাৎ যেসব রোগ সচরাচর দেখা দেয়৷ এতে বোঝা যায়, সন্তানসম্ভবা বা বাচ্চাদের জন্যও নিরাপদ এই ওষুধ৷''

Malaria Mücke
এটি একটি নারী মশার ইলেকট্রন মাইক্রোগ্রাফ৷ ম্যালেরিয়ার জন্যে কী এই মশা দায়ী?ছবি: Volker Brinkmann

অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সাধারণত ব্যাকটিরিয়া ধ্বংস করা হয়৷ ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্ল্যাসমোডিয়ামের বিরুদ্ধেও যে যুদ্ধং দেহি করতে পারে এই ওষুধ, সেটাই জানা গেল এখন৷ শুধু তাই নয় এই ওষুধের বলে শরীরে এক ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে, যা জীবাণুগুলিকে কাছেই ঘেঁষতে দেয় না৷ ডাঃ ফ্রিজেন ও তাঁর টিম গবেষণাগারে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এই ওষুধের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন৷ ডাঃ ফ্রিজেন বলেন, ‘‘আমরা প্রথম পরীক্ষায় ম্যালেরিয়ার জীবাণু ইঁদুরগুলির রক্তনালীতে ইনজেকশন করে দিই৷ আরেকটি পরীক্ষায় ইঁদুরগুলিকে অবশ করে তাদের ওপর সংক্রমিত মশা ছেড়ে দিই৷ এই ভাবে ইঁদুরগুলি মশার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়৷''

জীবাণুগুলি প্রথমে যকৃতে ঢুকে পড়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করে৷ এর পরের ধাপে সেগুলি রক্তনালীতে প্রবেশ করে এবং সেখানে রক্তের লোহিত কণিকা ধ্বংস করতে থাকে৷ এই ধাপটিই সবচেয়ে বিপজ্জনক৷ এখানেই রোগটি দেখা দেয়৷ সাধারণত ম্যালেরিয়ার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত ইঁদুরগুলি কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যায়৷ কিন্তু গবেষকরা মশার কামড়ের পর পরই অ্যান্টিবায়োটিকের ইনজেকশন দিয়ে দেন৷ ডাঃ ফ্রিজেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা এই প্রাণীগুলির মধ্যে কোনো সংক্রমণ লক্ষ্য করিনি৷ তারা সুস্থই ছিল বলা যায়৷''

ডাঃ ফ্রিজেন ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘জীবানুগুলিতে ব্যাকটিরিয়াযুক্ত এক ধরনের অরগ্যানেল থাকে৷ অ্যান্টিবায়োটিক সুনির্দিষ্টভাবে এই অরগ্যানেলকে আক্রমণ করতে পারে এবং ধ্বংসও করতে পারে৷''

জীবাণুগুলি তাদের অরগ্যানেল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়ে৷ তবে অ্যান্টিবায়োটিক ইঁদুরগুলিকে সংক্রমণের হাত থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারে না৷ বলা যায় অর্ধেকটা পথে যাত্রা বন্ধ করে দেয়৷ জীবাণুগুলি যকৃতে গিয়ে বিস্তার লাভ করে৷ রক্তনালীতে আসতে পারে না৷ এর ফলে রোগটা দেখা দিতে পারে না এবং দেহের জীবাণু প্রতিরোধী ক্ষমতাও বাড়তে থাকে৷ পরবর্তীতে ইঁদুরগুলির দেহে ম্যালেরিয়া দেখা দেয় না৷

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন মানুষের দেহেও এইভাবে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব৷ ম্যালেরিয়াবহুল দেশগুলিতে এই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ সুফল বয়ে আনতে পারে৷ বিশেষ করে বাচ্চাদের ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে এই ওষুধ৷ ডাঃ ফ্রিজেন বলেন, ‘‘টিকার তুলনায় এই ওষুধের সুবিধা হল এই যে, এতে সুঁইয়ের ব্যবহার করতে হয় না৷ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সুঁই ফোটানো তো মোটেই সহজসাধ্য নয়৷ অ্যান্টিবায়োটিক এক্ষেত্রে সহজ উপায় এনে দিতে পারে৷ আমার মনে হয়, ট্যাবলেট খাওয়ার ব্যাপারে বাচ্চারা তেমন আপত্তি করবে না৷''

ডাঃ ফ্রিজেনের ধারণা, ম্যালেরিয়ার জীবাণু এই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারবে না৷ কেননা এই ওষুধ সব সময় নয়, শুধু রোগ বিস্তারের সময় দেওয়া হবে৷ যেমন বর্ষা বাদলের সময়৷ এই সময় ম্যালেরিয়ার প্রকোপটা বাড়ে৷ গবেষণার ফলাফল থেকে আশা করা যায়, এই ভয়ঙ্কর ব্যাধিটি অচিরেই হয়তো আয়ত্তে আনা যাবে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ