1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যৌনরোগ মানেই অপরাধ?

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৮ মার্চ ২০১৬

এইডস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বাংলাদেশে৷ সরকারি হিসেবে ৫ হাজার বলা হলেও, বাস্তবে এইডস রোগীর সংখ্যা অন্তত ২০ হাজারের মতো৷ জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দীপক কুমার দাস৷

https://p.dw.com/p/1IKwV
যৌনরোগের প্রতীকী ছবি
ছবি: picture alliance / CTK

প্রবীণ এই চিকিৎসকের মতে, যৌনরোগ মানেই মারাত্মক কোনো অপরাধ বলে মনে করা হয়৷ তাই তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সামাজিক এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে৷ কারণ নানাভাবে একজন মানুষের যৌনরোগ হতে পারে৷ একজন রোগীর এক্ষেত্রে হয়ত কোনো দায় নেই৷ তারপরও তাঁকে চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে হয় গোপনে৷''

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে নানা ধরনের যৌনরোগ আছে৷ এর মধ্যে এইডস একটি রোগ৷ আপনি যেমনটা বললেন, অনেকক্ষেত্রেই এই রোগের জন্য রোগী দায়ী নন৷ অথচ তারপরও তাঁকে নানাভাবে ভুগতে হয়৷ এটা কেন?

ডা. দীপক কুমার দাস

ডা. দীপক কুমার দাস: কারুর এইডস রোগ হওয়া মানেই তাঁকে সামাজিকভাবে পরিহার করা হয়৷ তাঁর প্রতি কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য দেখানো হয় না৷ ধরেই নেয়া হয় যে, সে একটা চরম অপরাধ করেছে৷ আর তাঁর সেই অপরাধের কারণেই এইডস রোগ হয়েছে৷ সবাই এতটাই ভীত হয়ে যায় যে, ধরেই নেয়া হয় এইডস রোগীকে স্পর্শ করলে আরেকজনের এইডস হয়ে যাবে৷ অথবা তাঁর খাবার খেলে বা পোশাক ছুলেই এইডস হয়ে যাবে৷ ফলে সামাজিকভাবে সেই এইডস রোগী চরমভাবে অবহেলিত হয়৷

অনেক ক্ষেত্রে যৌনরোগে আক্রান্তদের গোপনে চিকিৎসা করাতে হয়৷ এমনটা কেন হয়?

যৌনরোগীরা নিজেরা দায়ী কি দায়ী নন, এটা তো সমাজের লোকজন বুঝবে না৷ তারা তো এটা মানতে চায় না৷ তাই ধরেই নেয়া হয় যে, যৌনরোগে আক্রান্ত রোগী মারাত্মক কোনো অপরাধ করেছে, যে কারণে তাঁর এই অবস্থা৷

আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলানো সম্ভব নয়?

একদিনে তা কখনোই সম্ভব নয়৷ তাই আস্তে আস্তে এটা করতে হবে৷ আমরা তো নানাভাবে প্রচারণা করে থাকি৷ বলে থাকি যে, এইডস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়৷ আসলে এই রোগীদের প্রতি ভালো ব্যবহার করতে হবে৷ মানুষ হিসেবে তাঁদের চিকিৎসা করতে হবে৷ এ ধরনের প্রচার-প্রচারণা তো চলছেই৷

যৌনরোগ মানেই কি খারাপ কিছু?

যৌনরোগ মানেই খারাপ কিছু, এটা তো বলা যাবে না৷ এখানে রোগীকে কোনো দোষ দেয়া যাবে না৷ যে কোনো রোগের কারণে রোগীকে দোষ দেয়ার পক্ষে আমি নই৷

তাহলে যৌনরোগ কী?

দু'ধরনের যৌনরোগ আছে৷ একটা ছোঁয়াচে, অন্যটা ছোঁয়াচে নয়৷ যেটা ছোঁয়াচে সেটা অনিরাপদ যৌনমিলন বা মেলামেশার কারণে হয়৷ একজন নারী বা পুরুষ অপর একজন মানুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়লে, একজনের থেকে অন্যজনের যৌনরোগ হতে পারে৷ তবে সেক্ষেত্রে অন্তত একজনের যৌনরোগ থাকলে তবেই সেটা সম্ভব৷ আবার যৌনরোগ শুধুমাত্র মানসিকও হতে পারে৷ এই যেমন, ঠিকমত ‘সেক্স' হচ্ছে না বা যৌনমিলনে অসুবিধা হচ্ছে – এ সবও কিন্তু যৌনরোগের মধ্যে পড়ে৷ তবে এটা ছোঁয়াচে নয়৷

আমাদের দেশে যে ধরনের যৌনরোগের কথা আমরা জানি, তার ওষুধ কি সচরাচর পাওয়া যায়?

সব ওষুধই পাওয়া যায়৷ দুনিয়ার সব জায়গায় যৌনরোগের যে চিকিৎসা পাওয়া যায়, আমাদের এখানেও পাওয়া যায়৷ অবশ্য যেটা পাওয়া যায় না, যেমন এইডস-এর স্থায়ী চিকিৎসা দুনিয়ার কোথাও নেই৷ তাই সেটা আমাদের এখানেও নেই৷

আমরা জানি এইডস শুরু হয়েছে অনেক বছর আগে৷ তা বাংলাদেশে এইডস-এ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে?

বাড়ছে৷ সরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ৫ হাজার৷ আমাদের ধারণা, এই সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ আসলে সব তো আর রিপোর্ট করা হয় না৷ সেই কারণে সরকারি হিসেবের চেয়ে বাইরের হিসেব অনেক বেশি৷

অবস্থার উন্নতি করার জন্য আমাদের সরকার বা রাষ্ট্রের কী করা উচিত?

বাংলাদেশে জাতীয় এইডস কমিটি আছে৷ তারা নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ডাক্তারদের জন্য, রোগীদের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের নানান ধরনের প্রচারণা আছে৷

এতে কতটা কাজ হচ্ছে?

সেটা বলা মুশকিল৷ তবে কিছু যে হচ্ছে না, সেটা তো বলা যাবে না৷ সুনির্দিষ্ট করে কতটা হচ্ছে সেটা বলা আসলেই বলা কঠিন৷

আমাদের দেশে যে ধরনের যৌনরোগ হয়, তার মধ্যে প্রধান রোগ কী কী?

প্রধান রোগের মধ্যে সিফিলিস, গনোরিয়া, মূত্রনালীর প্রদাহ – এ সব রয়েছে৷ এ সবের জন্য বাংলাদেশে এক ধরনের ভাইরাল ওয়ার্ড আছে৷ আজকাল কিন্তু আমরা এই ভাইরাল ওয়ার্ডে রোগী প্রচুর পাচ্ছি৷

এই রোগগুলো ছড়ায় কিভাবে?

যৌনরোগের মধ্যে যেটা সংক্রামক, সেটা একজনের থেকে অন্যজনে ছড়ায়৷ এ সব রোগই মূলত অনিরাপদ যৌনমিলন বা মেলামেশা থেকে ছড়ায়৷

এছাড়া অন্য কোনোভাবে কি এই রোগ ছড়াতে পারে?

সম্ভবনা খুবই কম৷ তবে হ্যাঁ যৌনসঙ্গম ছাড়াও যৌনরোগ ছড়াতে পারে৷ যেমন ধরুন, সিফিলিস বা এইডস রোগীর রক্ত যদি অন্য কাউকে দেয়া হয়, তাহলে এই রোগগুলো ছড়াতে পারে৷ তারপর যদি মায়ের এমন কোনো রোগ থাকে, তবে বাচ্চার তা হতে পারে৷

এই রোগগুলো প্রতিরোধে আমাদের চিকিৎসকদের ভূমিকা কতখানি?

আমি যৌনরোগের চিকিৎসা করি৷ অর্থাৎ আমার কাছে যখন রোগী আসে, তখন তাঁকে সাধ্যমত চিকিৎসা দেই এবং যে পরামর্শগুলো আছে, সেগুলো দেই৷ এ সব রোগের ভালো-মন্দ তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করি৷ তাছাড়া সার্বিকভাবে পরামর্শের জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ আছে, তারাও কাজ করে যাচ্ছে৷

আগে আমরা দেখতাম, এই ধরনের রোগ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা রোগীকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখেন৷ সেই দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলেছে?

আমার মনে হয়, এই দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বদলেছে৷

এরপরও তো এখনও অনেকেই যৌনরোগের চিকিৎসা করতে চিকিৎসকের কাছে যেতে লজ্জাবোধ করেন৷ তাঁদের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?

এখন কিন্তু এ ধারণা অনেকটাই কমে গেছে৷ বরং আমার তো মনে হয়, আজকাল বহু রোগীই বেশ স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসকের কাছে আসেন৷

কোন রোগের রোগী সবচেয়ে বেশি আসেন?

আমাদের কাছে আসার আগেই কিন্তু রোগীরা চিকিৎসা পেয়ে থাকেন৷ আমরা তো পার্শিয়ালি চিকিৎসা করি৷ যেমন ভাইরাল ওয়ার্ডের বা গনোরিয়ার রোগীদের সাধারণ ডাক্তাররা চিকিৎসা দিতে পারে না৷ তখন তাঁরা আমাদের কাছে আসেন৷

স্কিন সমস্যা নিয়ে বলুন?

পরিবেশ দূষণ, ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় বসবাস, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অভাবের কারণে দেশে চর্মরোগীর সংখ্যা বাড়ছে৷ যদিও চিকিৎসকের সংখ্যাও বাড়ছে৷

সব মিলিয়ে চর্ম ও যৌনরোগীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

আমাদের পরামর্শ হলো, এই ধরনের রোগ ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া৷ পাশাপাশি আমরা তো আছিই৷ আমাদের কাছে কেউ এলে তাঁদের আমরা বলে দেই যে, কী করতে হবে আর কী করা যাবে না৷ খাবারের ক্ষেত্রেও আমরা বলে দেই, কী খেলে অ্যালার্জি বাড়ে৷ অবশ্য আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন যে, কী খেলে আপনার অ্যালার্জি বাড়ছে৷ সেটা তখন পরিহার করতে হবে৷ এভাবেই আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি, যাতে রোগীরা নিজেরাই সচেতন হয়ে নিজের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেন৷

বন্ধু, ডা. দীপক কুমার দাসের সাক্ষাৎকারটি আপনার কেমন লাগলো? জানান মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান