1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রহস্য খুলছে বরফ মানব

৯ আগস্ট ২০১০

৫ হাজার বছর আগের বরফ মানবের জিনোম আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা৷ এর মধ্য দিয়ে বর্তমান মানুষের সঙ্গে তাদের যোগসূত্রের হদিস মিলবে৷ বিজ্ঞানীদের আশা, জটিল সব রোগের উদ্ভবের কারণও জানা যাবে এর ফলে৷

https://p.dw.com/p/OfFb
এই আল্পস পর্বতেই পাওয়া গিয়েছিল বরফ মানবের সন্ধানছবি: AP

২০ বছর আগের কথা৷ আল্পসে উঠছিলেন দুই জার্মান হেলমুট আর এরিকা সিমন৷ হঠাৎই সেখানে এক আদি মানবের সন্ধান পান তাঁরা৷ অবশ্য জীবন্ত নয়, একটি মমি৷ সেটাই বরফ মানব৷ এই অজানাকে জানার চেষ্টার শুরু সেখানেই৷ হিসেব করে বের করা হলো, আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে এই বিশ্বেই চলাফেরা ছিল বরফ মানবের৷ হোমো স্যাপিয়ন্সের মানে বর্তমান মানবের নিকটতম আদি পুরুষের অন্যতম তারা৷ গত সপ্তাহে জানানো হলো, বরফ মানবের সৃষ্টি রহস্যের কিনারা করা গেছে৷ তার মানে হচ্ছে, তাদের জিনোম আবিষ্কার হয়েছে, কাজ চলছে জেনেটিক ম্যাপ তৈরির৷ কাজটি করছেন জার্মানি আর ইতালির এক দল গবেষক৷ তাঁরা আশবাদী, বরফ মানব শুধু নিজেদের রহস্যই খুলবে না, বর্তমান মানবের সঙ্গে তাদের ছিন্ন সূত্র জোড়াও লাগিয়ে দেবে৷

১৯৯১ সালে বরফ মানবের সন্ধান পাওয়ার পর থেকেই তা ব্যস্ত রেখেছে বিজ্ঞানীদের৷ বিভিন্ন নমুনাও সংগ্রহ করা হয়৷ জোগাড় করা হয় বরফ মানবের ব্যবহার করা বিভিন্ন উপকরণও৷ অন্যদিকে কী জানা গেল, তা শুনতে আগ্রহী ছিল অনেকে৷ যা নিয়ে বলছিলেন গবেষক আলবার্ট জিংক৷ তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চলছে বরফমানব নিয়ে, তাই অনেকে জানতে চাচ্ছিলো, আমরা কী কী পেয়েছি৷ এই কৌতূহল অস্বাভাবিক নয় মোটেই৷''

বরফ মানবের মমিটি রয়েছে ইতালির উত্তরাঞ্চলের দক্ষিণ টিরলের প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে৷ আর এই জাদুঘরটি যে প্রতিষ্ঠানের সেই ‘ইন্সটিটিউট ফর মমি অ্যান্ড দি আইসম্যান' এর প্রধানের দায়িত্বে আছেন জিংক৷ ইতালির ইউরোপিয়ান একাডেমি অফ বোজেনের কর্মকর্তাও তিনি৷ জিনোম আবিষ্কারের পর কী, তা জানালেন জিংক৷ তিনি বললেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো এই যে বরফ মানবের জিনোম আবিষ্কারের পরের ধাপ কী? এখন আমাদের আরো রহস্যের জট খুলতে হবে৷ উত্তর খুঁজতে হবে অনেক প্রশ্নের৷ তার মানে হলো, কাজ বেড়ে গেল এবং তা গুরুত্বপূর্ণও৷ তবে তা মনে করতেই আমার ভালো লাগছে৷''

BdT Italien Ötzi Mann in Bozen Bolzano Todesursache
বরফ মানবের মমিটি রয়েছে ইতালির উত্তরাঞ্চলের এই প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরেছবি: AP

জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করা মানে হলো, বিজ্ঞানীরা এখন বরফ মানবের জিনগত বৈশিষ্ট্যের নকশা পেয়ে গেলেন৷ এই নকশা আলাদা হওয়ার কারণেই প্রত্যেকটি জীব দেখতে আলাদা, তাদের আচরণ আলাদা৷ আধুনিক মানবের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় আগে৷ এরপর বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জিনোম আবিষ্কারের ঘোষণা থেকে থেকেই আসছে৷ এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হল বরফ মানব৷ এর পেছনে শ্রম দেওয়ার প্রসঙ্গ সম্পর্কে জিংক বললেন, ‘‘আমরা দেখতে চাই, বিবর্তনের কোন ধাপে, কীভাবে বরফ মানব এল৷ তারা কী এমন কোনো জীনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে ছিলো, যা কোনো রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত৷ আমরা জানতে চাই, তাদের খাদ্যভ্যাস কেমন ছিল, তারা কি দুধ হজম করতে পারত৷ তাদের বিবর্তনের ধাপগুলো জানতে এইসব প্রশ্নের উত্তর মেলা জরুরি৷''

বরফ মানবের জিনোম বিশ্লেষণে এক সময় উঠেপড়ে লেগেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যানি স্টোন৷ তখন তিনি শিক্ষার্থী ছিলেন, এখন শিক্ষক৷ অ্যানি যে সময়টাতে কাজ করেছিলেন, তখন জিনোম সিকোয়েন্স বের করা ছিল অনেক কঠিন৷ কারণ এখনকার মতো প্রযুক্তি পাওয়া তখন সহজ ছিল না৷ তাই সফল হতে পারেননি অ্যানি৷ এখন জিনোম আবিষ্কারের খবরে তিনিও খুশি৷ তবে সেই সঙ্গে একটু সতর্কবার্তাও দিলেন৷ অ্যানি জানালেন, ‘‘এটা বরফ মানবের মাত্র একটি নমুনা৷ এ থেকে এই জনগোষ্ঠী সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যেতে পারে৷ তবে ওই সময়টাকে পুরোপুরি ধরতে হলে আরো নমুনা চাই৷ অন্তত ২৫ থেকে ৫০টি নমুনা৷''

Eismumie Ötzi
৫ হাজার বছর আগের এই বরফ মানবের জিনোম আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরাছবি: AP

তবে আশাবাদী জিংক৷ তিনি মনে করছেন, একটি নমুনা থেকেও মিলতে পারে অনেক প্রশ্নের উত্তর৷ ডায়াবেটিসের মতো রোগ কীভাবে এলো, তার তার কারণও বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন জিংক৷ তা হলে এই রোগের নিরাময় অনেকটা সহজ হয়ে যাবে৷ জিংক বলছেন, হয়তো দেখা যাবে আলপাইন অঞ্চলের মানুষ এখনো বরফ মানবের ডিএনএ-এর কিছু বৈশিষ্ট্য ধারণ করছেন৷ তাহল সেটা হবে বিজ্ঞানীদের জন্য একটা দারুণ খবর৷ জিংক আরো জানান, ‘‘এটা খুবই মজার হবে যে এই বরফ মানবের জীনের সঙ্গে যদি অপেক্ষাকৃত দূরের অন্য কোনো আদি মানবের জিনের সমরূপতা মেলে৷ এমনও হতে পারে ওই জীনের কিছু গঠনবৈশিষ্ট্য বর্তমান যুগেও পরিবাহিত হচ্ছে৷''

সৃষ্টি রহস্য আবিষ্কার হয়েছে৷ এখন চলছে জেনেটিক ম্যাপ তৈরির কাজ৷ এতে হাত লাগিয়েছন হাইডেলব্যার্গের জীনতাত্ত্বিক আন্দ্রেয়াস কেলারও৷ তিনি বললেন, ‘‘আমরা জানি, তিনশ কোটি ডিএনএ নিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে৷ কাজের আধেকটা প্রায় হয়ে গেছে৷ আগামী চার মাসের মধ্যে বাকিটাও হয়ে যাবে, সেই আশাই করছি৷''

আর মানে হলো, আর মাত্র কয়েকটা মাস, ৫ হাজার বছরের রহস্যের অবগুণ্ঠন খুলছে বলে৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক