1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রাজধানীর শিশুদের ফুসফুসের সক্ষমতা কমছে'

সমীর কুমার দে ঢাকা
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বায়ু দূষণের প্রভাব নিয়ে সর্বশেষ গত বছর প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খানের তত্ত্বাবধানে রাজধানীর ৬টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপর জরিপ করা হয়৷ সেই জরিপে উঠে এসেছে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ফুসফুসের সক্ষমতা দ্রুত কমছে৷

https://p.dw.com/p/2Wy0U
ইট ভাটার কারণে বায়ু দূষণ
ছবি: Pavel Rahman/AP/dapd

ওই জরিপ কমিটিতে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার মালেক ও প্রফেসর নুরুজ্জামান৷ এই গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্যের কথা জানান বাপা'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব৷ তিনি বলেন, ‘‘এই গবেষণা থেকেই বোঝা যায় আমরা কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছি এবং সামনে আরো কতটা খারাপ সময় আসছে৷''

তিন বছরের মধ্যে দূষণ অনেক বেড়েছে:

গত তিন বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার বায়ু ধারাবাহিকভাবে অস্বাস্থ্যকর হয়ে চলেছে৷ খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের (ডিওই) তথ্যে এ কথা বলা হয়েছে৷ ২০১৪ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি বাতাসের মান নির্ণয়ে দেখা যায় ১৭২ একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স), ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি একই মাপে দেখা যায়, একিউআই'র পরিমাণ ৩৬১৷ স্ট্যান্ডার্ড ফর বাংলাদেশেরের (এনএএকিউএস) পরিমাপে এই তথ্য পাওয়া গেছে৷ ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিউএইচও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ১৬০০ শহরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বাতাসের শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ২৩ তম৷

এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদফতর সংবাদপত্রে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে৷ সেখানে অধিদফতরের মহাপরিচালক উল্লেখ করেন, নির্মল বায়ু সুস্থ জীবনের পূর্বশর্ত৷ ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ু দূষণজনিত স্বাস্থ্যহানি ও এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ মূলত দেশে শিল্পায়ন, নগরায়ন ও অবকাঠানো নির্মাণ হচ্ছে৷ ফলে বায়ু দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে৷ নরওয়ে ভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পরিবেশ অধিদফতর গবেষণা করে দেখেছে, বায়ু দূষণের জন্য ইটভাটা ৫৮ শতাংশ, রোডডাস্ট ও সয়েল ডাস্ট ১৮ শতাংশ, যানবাহন ১০ শতাংশ, বায়োমাস পোড়ানো ৮ শতাংশ এবং অন্যান্য উৎস ৬ শতাংশ দায়ী৷

দূষণের কারণে বাড়ছে রোগ-ব্যাধি:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগের জন্য একটি বড় কারণ একটি বায়ু দূষণ৷ দীর্ঘ মেয়াদে ধূলার মধ্যে থাকার কারণে অ্যাজমা, সিওপিডি, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসনালী সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ৷ এই ধরনের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পরিবার, এমনকি রাষ্ট্রও৷

ABM abdullah - MP3-Stereo

অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে ৮৫ লাখ মানুষ শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমায় ভুগছে৷ ৭৫ লাখ মানুষ ব্রঙ্কাইটিস এবং সিওপিডিতে আক্রান্ত৷ এসব শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগের জন্য ধূলার দূষণ যে অন্যতম কারণ এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক জিয়াউল হক ঢাকার একটি দৈনিককে বলেছেন, ‘‘সিএএসই (ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভারনমেন্ট) এর অধীনে দূষণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন৷ দূষণ ঝুঁকি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বাতাসের মান নিয়ে প্রতি মাসে চার্ট প্রকাশ করা হয়ে থাকে৷ ডিওই মহাপরিচালক মনে করেন, বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখতে সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে৷ এজন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনগণকে কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ভাল মানের জ্বালানি ব্যবহার করে, যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা করে, গাছ লাগিয়ে আমরা এই বায়ু দূষণ অনেকাংশে কমাতে পারি৷''

Abu rahhan - MP3-Stereo

দূষণ রোধে পদক্ষেপ:

সম্প্রতি বায়ু দূষণ কমাতে ভারত ও চীনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশ তেমন কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জিয়াউল হক বলেন, ‘‘বায়ু দূষণ কমিয়ে আনতে সরকার কাজ করে চলেছে৷ ইট ভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া রাজধানীর বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ৷ পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইট ভাটাগুলোকে সরানোর পরিকল্পনা যথাযথভাবে কাজ করছে না৷ আর সবচেয়ে বড় কথা ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি৷ জিয়াউল হকের মতে, অর্থনীতি ও পরিবেশ দু'টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বায়ু দূষণে সরকারকে নতুন কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷’’

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড মিটফোর্ড হাসপাতালের স্টোরেড অ্যান্ড মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু রায়হান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বায়ু দূষণের কারণে আমাদের অন্তত ১০ শতাংশ রোগী বেড়ে গেছে৷ পাশাপাশি ধূমপানের কারণে যে ধরনের সমস্যা দেখা দেয় অধূমপায়ী নারীদের সেই ধরনের সমস্যা ধরা পড়ছে৷ এটা আসলে বায়ু দূষণের কারণেই হচ্ছে৷ নানা রোগব্যাধির পাশাপাশি আয়ুও কমে যাচ্ছে৷''

দূষণ রোধে রাজশাহীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত:

BAPA Iqbal - MP3-Stereo

দুই বছর আগে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি৷ অন্য জরিপ বলছে, দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে, নদী-খালে মাছ বা প্রাণিও টিকতে পারছে না৷ পরিবেশ সংগঠনগুলোর জরিপ বলছে, মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে রাজধানীর চারপাশে অবস্থিত নদীগুলোর মাছসহ অন্যান্য জীবের অস্তিত্ব এখন বিপন্ন৷ স্থানভেদে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে৷ এর মধ্যেই বসবাস করছে দুই কোটির ওপর মানুষ৷

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘‘বাংলাদেশের একটি শহর রাজশাহী৷ শহরটি দেড় বছরের মধ্যে বায়ু দূষণের মাত্রা ৬৭ শতাংশ কমিয়ে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে৷ চীনের গুয়াংজু ও সাংহাই শহরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে রাজশাহী দ্রুত বায়ু দূষণ রোধে সেরা হয়েছে৷ অথচ সেই দেশের রাজধানীর এই অবস্থা! সেই সময় বিবিসি, সিএনএস রিপোর্ট করে রাজশাহীর মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলীয় ভূয়সী প্রশংসা করেছিল৷ রাজশাহী প্রমাণ করেছে কীভাবে বায়ু দূষণ কমানো যায়৷ আমরা সেই প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে ভালো ফল পেতে পারি৷''

বায়ু দূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য