1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবৈধ রক্তের ব্যবসা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৫ জুলাই ২০১৩

ঢাকায় প্রায় শতাধিক অবৈধ ‘ব্লাড ব্যাংক’ আছে৷ আর এই সব ব্যাংকে নেই কোনো ডাক্তার বা টেকনিশিয়ান৷ হাতুড়ে লোকজনরা নিজেরাই রক্ত সংগ্রহ করেন, প্রধানত মাদকাসক্তদের কাছ থেকে৷ সেই রক্তই শেষ পর্যন্ত বিক্রি করা হয় নামি হাসপাতালে৷

https://p.dw.com/p/19DoT
ছবি: DW Hindi-Metali Listeners Club

ঢাকার লালমাটিয়া এলাকায় ধানমন্ডি ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন সেন্টার৷ তবে সামনে কোনো সাইনবোর্ড নেই৷ লিফলেটের মাধ্যমেই এর প্রচার কাজ চলে৷ ভবনের দ্বিতীয় তলার চারটি রুম নিয়ে ছয় মাস হলো গড়ে তোলা হয়েছে এই ব্লাড ব্যাংকটি৷ প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. ইব্রাহিম সবুজ এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন৷ তিনিই এই ব্লাড ব্যাংকের ডাক্তার, টেকনিশিয়ান সব কিছু৷

বুধবার দুপরে ব়্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের সঙ্গে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদকও যান এই ব্লাড ব্যাংকে৷ গিয়ে দেখতে পান সবুজ নিজেই মোহাম্মদ মানিক নামে এক মাদকাসক্তের রক্ত নিচ্ছেন৷ হাতে নাতে ধরা পড়ে গেলে সবুজ স্বীকার করেন যে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কোনো লাইসেন্স নেই৷ আগে একটি ব্লাড ব্যাংকে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেই একটি ব্লাড ব্যাংক খুলে বসেছেন তিনি৷ সব কাজ সবুজ নিজেই করেন৷

সবুজের ব্লাড ব্যাংকে অভিযান চালিয়ে মোট ৩০ ব্যাগ রক্ত এবং প্লাজমা উদ্ধার করা হয়, একটি সাধারণ ফ্রিজে যা রাখা ছিল৷ সবুজ স্বীকার করেন যে বুধবার সকালেও তিনি তাঁর ওখান থেকে দুটি হাসপাতালে রক্ত সরবরাহ করেছেন৷ জানান, ঢাকার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল তাঁর কাছ থেকে রক্ত নেয়৷

সবুজ বলেন, তিনি নিজে প্রতি ব্যাগ রক্ত ৩০০ টাকায় কিনে ৮০০ টাকায় বিক্রি করেন৷ আর হাসপাতালগুলো রোগিদের কাছ থেকে প্রতি ব্যাগ রক্তের জন্য নেয় ৩,০০০ টাকা৷ রক্ত দাতা মানিক নিজে মাদকাসক্ত বলে স্বীকার করেন৷ তিনি জানান যে, তাঁরা বেশ কয়েকজন দু-এক সপ্তাহ পরপরই এখানে এসে রক্ত বিক্রি করেন৷ এছাড়া, সবুজের লোকজনও মাদকাসক্তদের খুঁজে বের করে৷ তবে তাঁদের প্রতি ব্যাগ রক্তের জন্য ২৫০ টাকার বেশি দেয়া হয় না৷

ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা ডয়চে ভেলেকে জানান, সবুজকে এর আগেও ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তখন তাঁর ব্যবসা ছিল এক ব্যাগ রক্তের সঙ্গে স্যালাইনের পানি মিশিয়ে ২/৩ ব্যাগ বানিয়ে বিক্রি করা৷ তখন তাঁকে দু'বছরের জেল দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ছয় মাস পরই সবুজ জামিন পান৷ সবুজের নিজের কথায়, জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসতে তাঁর প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. যোগেশ চন্দ্র রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, যে পদ্ধতিতে এই অবৈধ ব্লাড ব্যাংকগুলো রক্ত সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করে, তা ভয়াবহ৷ তার ওপর মাদকাসক্তদের রক্ত কোনোভাবেই আরেকজনের শারীরে সঞ্চালন করা ঠিক না৷ এই রক্ত রোগিকে সুস্থ না করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়৷ তিনি বলেন, অবৈধ ব্লাড ব্যাংক বন্ধে তারাও ভ্রাম্যমান আদালতকে সহায়তা করেন৷

এদিকে ব়্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মেজর হিমাদ্রি শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে জানান, তাদের কাছে তথ্য আছে যে রাজধানীতে এরকম শতাধিক অবৈধ ব্লাড ব্যাংক আছে৷ তারা পর্যায়ক্রমে ভ্রাম্যমান আদালত নিয়ে অভিযান চালাবেন৷

কিন্তু ঢাকার হাসপাতালগুলো যে অবৈধ ব্লাড ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিম্নমানের রক্ত নিচ্ছে, তা বন্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. যোগেশ চন্দ্র রায় বলেন, তারা এ ব্যাপারেও নজরদারি বাড়াবেন৷ তাঁর কথায়, আইনে আছে মানসম্পন্ন রক্ত ব্যবহার করতে হবে৷ তাই কেউ এটা অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য