1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রাজ্জাককে বাংলাদেশে ফেরত চাই'

২৩ জুন ২০১৫

মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি-র কাছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক এখনো বন্দি৷ ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর এই খবরটিই গুরুত্ব এবং মনোযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশে৷

https://p.dw.com/p/1Fm4y
Symbolbild Gefangene der Liebe gefangen Band Verbindung
ছবি: Fotolia/axentevlad

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের দিনেই এসেছিল খবরটা৷ প্রথমে ফেসবুকে অসংখ্য স্ট্যাটাস, তারপর গণমাধ্যমেও আসে বিজিবির নায়েক রাজ্জাককে বন্দি করে আপত্তিকরভাবে ছবি তুলে সেই ছবি মিয়ানমারের একটি পত্রিকায় প্রকাশ করার খবর৷ ফেসবুকে সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজার লেখার শিরোনাম ছিল, ‘জাতীয় লজ্জা'৷

সেখানে তিনি জানান, ‘‘বার্মিজ ভাষার মিয়ানমার এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি সংবাদে মন খুব বেশি রকমের খারাপ হয়ে গেল৷ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) 'র পোষাক তার শরীরের উপরে অংশে৷ নীচের অংশে লুঙ্গি৷ বুকের বাম দিকে নেম কার্ড, ডান দিকে ব্যাজ৷ একটি ছবিতে সামনে এমএমটু (সম্ভবত) রাইফেল, গুলি, তিনটি মোবাইল ফোন, আরও কিছু জিনিসপত্র পেছনে দাঁড়ানো বিজিবি সদস্য৷ আরেকটি ছবিতে তিনি একটি চেয়ারে বসে আছেন হাতকড়া পরানো অবস্থায়৷ চেহারা উদভ্রান্ত৷ আমাদের ব়্যাব-পুলিশ চোর-সন্ত্রাসী ধরে উত্তম মাধ্যম দিয়ে, হাত বেঁধে যেভাবে ছবি তোলে, ঠিক সেভাবে এই বিজিবি সদস্যের ছবি তোলা হয়েছে৷''

ছবির এই ব্যক্তি যে বিজিবির নায়েক রাজ্জাক এবং তাকে যে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে – এসব তথ্যেরও উল্লেখ ছিল গোলাম মোর্তোজার লেখায়৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সমালোচনাও উঠে এসেছে তাঁর বর্ণনায়, ‘‘১৭ জুন ভোরবেলা নাফ নদী থেকে (রাজ্জাককে) ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী৷ বিজিবি নাফ নদীতে টহল দেয়ার সময় আক্রান্ত হয় মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী দ্বারা৷ বিজিবির একজন গুলিবিদ্ধ হয়, আর নায়েক রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যায়৷ কিন্তু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, নাফ নদীতে ভুল বোঝাবুঝিতে গুলি হয়েছে৷ বিজিবির একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে, আর একজন মাছ ধরার জালে আটকে মিয়ানমারের অংশে রয়ে গেছে৷ তিনি অপহৃত হয়েছেন বা মিয়ানমার বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গেছে, বিষয়টি তেমন নয়৷ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনা হবে৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এটাকে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে বর্ণনা করলেন৷ গতকাল ঢাকাস্থ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হলো৷ তিন দিনেও পতাকা বৈঠক হলো না৷ বলা হলো নায়েক রাজ্জাক ভালো আছেন৷ আজ মিয়ানমারের পত্রিকায় চোর -সন্ত্রাসীর মর্যাদা দিয়ে বিজিবি সদস্য নায়েক রাজ্জাকের ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হলো৷''

সমালোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিক লিখেছেন, ‘‘স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে যা ‘সামান্য ভুল বোঝাবুঝি' বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার কাছে তা চরম লজ্জার৷ আমার ধারণা যারা এই সংবাদটি জানছেন, তাদের কাছেও বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাজনক৷''

যে কোনো মানুষের কাছেই নায়েক রাজ্জাককে আসামির মতো বেঁধে রেখে ছবি তোলা, সেই ছবি পত্রিকায় প্রকাশ করে দেয়াটা লজ্জাজনক, দুঃখজনক৷ মোর্তোজা বিষয়টিকে যুক্তিসংগতভাবে জাতীয় লজ্জা হিসেবেও দেখেছেন৷

টুইটারের নানাভাবে এসেছে খবরটি

এরই মাঝে বাবা হয়েছেন রাজ্জাক৷ সদ্যোজাত সন্তানকে দেখা হয়নি তাঁর৷ বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে, সমুদ্রপথে উদ্ধার হওয়া মালয়েশিয়াগামী ৫৫৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত আনলেই কেবল রাজ্জাককে ফেরত দেওয়া হবে৷

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার লিখেছেন, ‘‘মিয়ানমারের একটা বাংলাওয়াশ খুব জরুরী হয়ে গেছে৷ কিন্তু এই বাংলাওয়াশ কি উপায়ে দেয়া হবে এটা সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে৷ তবে বিজিবি'র নায়েক রাজ্জাককে নিয়ে ইতোমধ্যেই তারা সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছে, কোনো সন্দেহ নেই৷ আমি বলছি না জবাবটা যুদ্ধ কিংবা অস্ত্রের মাধ্যমেই দিতে হবে৷ এই একবিংশ শতাব্দীতে অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতিও একেকটা অস্ত্র৷ সবচেয়ে উপযুক্ত অস্ত্রটাই বার্মিজদের জন্য বাছাই করা হোক৷ আমরা নায়েক রাজ্জাককে জীবিত বাংলাদেশে ফেরত চাই৷''

ব্লগার আরিফ জেবতিক নায়েক রাজ্জাককে নিয়ে লেখা তাঁর একটি পোস্টে কারো কারো প্রতিক্রিয়া দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷ ক্ষোভ থেকে তিনি লিখেছেন, ‘‘মায়ানমারকে শক্ত জবাব দেয়ার দাবি জানিয়ে একটা আহ্বান জানিয়েছিলাম ফেসবুকে, সেখানে অনেকেই ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চেষ্টা করেছেন যে, খামোখাই লাগালাগি কেন, লাগলে কি আমরা পারব, লাগালাগি করলে কত্তো সমস্যা, ধরে নিয়ে গেছে তো দুইদিন পরে এমনিতেই ছেড়ে দেবে৷ এসব মানুষের জন্য আমার এক ধরনের করুণা হয়৷ এদের আত্মবিশ্বাসের অভাব৷ এদের ঘরের কাউকে যদি রাতের বেলা গুন্ডারা তুলে নিয়ে যায়, এরা অন্ধকারে বের হবে না বরং লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে ভাববে, দূর, এমনিতেই সকাল বেলা পাটখেতের পাশে তো পাওয়াই যাবে, খামোখা গুন্ডাদের বিরাগভাজন হব কেন?''

অনেকে যে সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করেন তার একটা কারণও অনুমান করেছেন আরিফ জেবতিক, ‘‘ এটা আমাদের শতশত বছরের গোলামির ডিএনএ বহন করার কারণে হয়েছে৷ আমরা দুর্বল-অন্যরা সবল, এরকম ভাবতে ভাবতে আমরা এটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি৷ এটি খুবই খারাপ মানসিকতা৷''

এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের সুপরিচিত এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘আমাদের এই ভাবনার গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসতে হবে৷ গোটা বাংলাদেশে এই ভাবনার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসার সবচাইতে বড় নজির কাদের, জানেন? আমাদের ক্রিকেট টিমের৷ এদের শারীরিক ভাষা খেয়াল করে দেখেন, তুমি অমুক, তমুক তোমার দেশের বড় স্টার-কিন্তু তোমারে আলাদা করে পুঁছার টাইম নাই সাকিব-মাশরাফির৷ মাঠে এরা সমানে সমানে তর্ক করে, অঙ্গভঙ্গি দিয়ে প্রতিপক্ষকে দুই আনার দাম না দেয়ার আচরণ করে৷ আর জেতার পেছনে এটা একটা বড় কারণ৷ সাহস রাখেন, আত্মবিশ্বাস রাখেন-আপনিও জিতবেন৷ মাশরাফি-সাকিব শুরু করেছে; আমি আপনিই বা পিছিয়ে থাকি কেন?''

সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য