1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রুহুলের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় মানুষ’

৬ এপ্রিল ২০১১

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে যোগ দেন ১৯৫৩ সালে৷ শুরুতে তিনি ছিলেন জুনিয়র ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার৷ ১৯৬৮ সালে রুহুল আমিনকে বদলি করা হয় চট্টগ্রামে৷ সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এই বীর সেনা৷

https://p.dw.com/p/10o4b
ভবিষ্যত প্রজন্ম বিজয়ী সেনাদের সম্পর্কে জানুকছবি: AP

দেশমাতৃকার টান

রুহুল আমিনের জন্ম নোয়াখালীর বাঘচাপড়া গ্রামে, ১৯৩৫ সালে৷ ছোটবেলায় অভাব-অনটন তেমন একটা অনুভব করেননি তিনি৷ তবে, রুহুল যখন তরুন, তখন তাঁর বাবা ক্রমশ আর্থিক স্বচ্ছলতা হারাতে থাকেন৷ তাই হাইস্কুল পাস করেই চাকরি শুরু করেন তিনি৷

পারিবারিক কারণেই এই চাকরিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল রুহুল'এর জন্য৷ কিন্তু দেশমাতৃকার টান তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি৷ তাই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷ ২ নং সেক্টরে থাকাকালীন অনেকগুলো সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন এই সেনা৷

গবেষণা

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনকে নিয়ে গবেষণা করছেন তাঁর বড় নাতি মোহাম্মদ সোহেল চৌধুরী৷ তাঁর কাছে জানতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে পদাতিক বাহিনীতে ছিলেন রুহুল৷ সেখান থেকে নৌবাহিনীতে তিনি কিভাবে যোগ দিলেন ? তিনি বলেন, একাত্তরের সেপ্টেম্বরে তিনি নৌবাহিনীতে যোগদান করেন, তখন সিদ্ধান্ত হয় যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী তৈরি করা হবে৷ তখনই কলকাতার মেয়রের কাছ থেকে দুটি টাগবোট উপহার দেওয়া হয়৷ সেই টাগবোট দুটোকে যুদ্ধজাহাজে রুপান্তরের জন্য নৌ বাহিনীর সদস্যরা যাঁরা, বিভিন্ন রনাঙ্গনে যুদ্ধরত ছিলেন, তাঁদেরকে ডাকা হয়৷ তাঁরা কলকাতার গার্ডেন রিজ ডক ইয়ার্ডে গিয়ে বোট দুটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ যুদ্ধ জাহাজ দুটির নাম দেওয়া হয় পদ্মা এবং পলাশ৷

Unabhängikeitsfeier in Bangladesh
ছবি: AP

বিমান হামলা

ডিসেম্বরের দশ তারিখ গানবোট পলাশ নিয়ে রুহুল পৌঁছে যান মংলা বন্দরে৷ শত্রুসেনার কবল থেকে মংলা দখলের উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের৷ কিন্তু হঠাৎই বিমান হামলার মুখে পড়েন তাঁরা৷ সোহেল চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, যে বিমান হামলায় গনবোট পলাশসহ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একাধিক গানবোট ধ্বংস হয়েছিল, সেই হামলা আসলে তখন কারা চালিয়েছিল ? তিনি জানান‘‘আসলে এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য আমিও খুঁজেছি৷ রুহুল আমিনের সহযোদ্ধারা জানিয়েছেন, তাঁরা যখন রূপসা নদী দিয়ে খুলনা থেকে মংলা বন্দরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তিনটি জঙ্গিবিমান হামলা চালায়৷ সেসময় যুদ্ধ জাহাজ থেকে সিগন্যাল দেওয়া হয় এবং তাঁরা বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে যাচ্ছিলেন৷ কিন্তু সিগন্যাল দেওয়ার পরেও ভারতীয় জঙ্গি বিমান তাঁদের উপর বোমা ফেলার কথা নয়৷ রুহুলের সহযোদ্ধাদের মতে, পাকিস্তানের জঙ্গি বিমান থেকেই নৌ বাহিনীর জাহাজে বোমা ফেলা হয়েছিল৷''

আহত রুহুলকে হত্যা

১০ই ডিসেম্বরের সেই হামলার সময় সাহসিকতার সঙ্গে পলাশ-এ অবস্থান করছিলেন রুহুল৷ সহযোদ্ধারা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ রক্সা করলেও, তিনি চেষ্টা করেন পলাশকে রক্ষা করতে৷ কিন্তু একসময় ব্যর্থ হয় সেই চেষ্টা৷ আহত রুহুল পানিতে লাফিয়ে পড়েন৷ তারপর কি হল ? সোহেল চৌধুরীর কথায়, ‘‘বোমার আঘাতে রুহুলের একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ এই অবস্থায় সাঁতরে তিনি যখন পাড়ে আসেন, তখন স্থানীয় রাজাকাররা তাকে বেয়নিট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে৷''

মরদেহ কি উদ্ধার হয়েছিল ?

বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেসময় রুহুল আমিন-এর লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়নি৷ এই তথ্যের সঙ্গে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন রাখা হয়েছে সাইটটিতে৷ সোহেল চৌধুরী জানালেন, ‘‘রুহুলকে হত্যার ছয় দিন পরে স্থানীয় মানুষ তার মরদেহ উদ্ধার করেন এবং দাফন করেন৷ বর্তমানে সেখানে সমাধি সৌধ তৈরি হয়েছে৷'' বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন-এর পরিবারের সদস্যরা চান রুহুল আমিন এর নানা স্মৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসুক সরকার৷ যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম এই বিজয়ী সেনা সম্পর্কে জানতে পারে৷ বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের চাওয়া এই টুকুই৷''

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ