1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লাদাখে জার্মান বাড়ি

টোমাস ক্লাইন/এসি১২ এপ্রিল ২০১৪

জার্মানির আখেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যদি হিমালয়ের শীর্ষে লাদাখে বাড়ি তৈরি করার সুযোগ পান, তবে সেটা দেখতে কেমন হবে? আর তাতে নতুনত্বই বা থাকবে কতটা?

https://p.dw.com/p/1Bg8h
লাদাখছবি: Getty Images/Daniel Berehulak

সে স্কুলবাড়ি কি লাদাখ অঞ্চলের অন্যান্য বাড়িগুলোর মতোই দেখতে হবে? নাকি তাতে ইউরোপীয় কায়দার ছাদ কিংবা জানলা থাকবে? সব মিলিয়ে গড়ে উঠবে লাদাখবাসীদের মনপসন্দ স্কুলভবন৷

গরম, ধুলোবালি, এত উঁচুতে বাতাসও পাতলা – হিমালয় মানুষ বা যন্ত্র, কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না৷ ২০১৩ সালের জুলাই মাসে জার্মানির আখেন শহরের একদল ছাত্র ভারত যাত্রা করেছিল৷ উদ্দেশ্য ছিল, এমন এক ধরনের বাড়ি তৈরি করা, যা চরম আবহাওয়ার মধ্যেও টিকে থাকবে, আবার প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিজেই তৈরি করবে৷

আখেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক জো রুয়ফ বলেন: ‘‘এ ধরনের এলাকার জন্য বাড়ির নকশা বানানো স্বভাবতই একটা চ্যালেঞ্জ৷ এলাকাটা অপরিচিত; কোথায় বাড়ি বানানো হবে; খরচ কী ধরা হয়েছে; জ্ঞান কতটা; কারা সে কাজ করতে পারে ইত্যাদি৷''

Grenzkonflikt Indien China Ladakh
লাদাখে যাওয়ার রাস্তাছবি: Reuters/Danish Ismail

লাদাখ যাত্রার এক বছর আগেই পরিকল্পনা শুরু হয়৷ ছাত্ররা তাঁদের সব আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করেন, নকশা আঁকেন৷ এই সব উঠতি স্থপতিদের সামনে আসল চ্যালেঞ্জ হলো, ভারতীয় সংস্কৃতি ও আধুনিক নির্মাণ-পদ্ধতির মধ্যে সমন্বয় সাধন – তাও শুধুমাত্র প্রথাগত মালমশলা দিয়ে৷ এ কাজে তারা সাহায্য পান বাড়ি তৈরির ঠিকাদার সোনাম গিয়াৎসো-র কাছ থেকে৷ সোনাম ঠিক সে জন্যেই ভারত থেকে জার্মানিতে এসেছিলেন৷ সোনাম জানান:

‘‘আমাদের যখন একটা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা থাকে, তখন এক বছর আগে থেকেই সব কিছু যোগাড়যন্ত্র করে ৫০০ কিলোমিটার দূরে সাইটে পাঠাতে হয়৷ ট্যাক্সিতে যেতে সময় লাগে দু'দিন, ট্রাকে পাঁচ থেকে ছ'দিন – সেটাই হলো সমস্যা৷''

হিমালয়ের কোলে স্কুলবাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায় মে মাসেই৷ তবে অনেক কিছুই যন্ত্রের বদলে হাতে করা হয়, কেননা বাজেট যৎসামান্য৷ অন্যদিকে সারা গ্রামের মানুষ হাত লাগায়! কুড়িয়ে পাওয়া পাথর ও সিমেন্ট দিয়েই দুই তলা বাড়ির ভিত্তি তৈরি হবে৷

প্রথম কয়েক সপ্তাহ বেশ ভালোই কাজ চলে: নীচের তলা তৈরি প্রায় শেষ, জানলা-দরজা লাগানো হয়ে গেছে৷ ১৪ জন মজদুর সপ্তাহে সাতদিন দশ ঘণ্টা করে কাজ করেছেন৷ প্রচুর কাজ, কেননা বাড়ি তৈরিতে ২০ হাজার ইট বসাতে হবে – হাতে তৈরি করা ইট৷ ঠিকাদার সোনাম গিয়াৎসো সন্তুষ্ট: সব কিছু পরিকল্পনা মতো চলেছে৷ ছাত্ররাও সাহায্য করছে৷ তবে জার্মান ছাত্র গেয়র্গ শেন্ডশিলর্ৎস যেমন বলেন: ‘‘৩,৭০০ মিটার উচ্চতায় কাজ করাটা খুবই কষ্টকর – আমি এখনও হাঁপাচ্ছি৷ প্রথমদিকে তো এ রকমভাবে কাজ করার কথা ভাবাও যায়নি; অ্যাক্লিমেটাইজেশন, অর্থাৎ অভ্যস্ত হবার প্রশ্ন ছিল৷''

একতলার ছাদ তৈরির ভিত্তি হল দুমা বা মোটা কাঠের লক্কড়৷ প্রতি ঘরে বেজোড় সংখ্যার দুমা লাগাতে হবে: সেটাই হলো এই অঞ্চলের মানুষদের সংস্কার৷ দুমার উপরে পাতলা পাতলা থালু বসাতে হবে৷ এগুলো হলো ছাদের নীচের দিকের অংশ, যার উপর ছড়িগুলো বসানো হয়৷ পরে এর ওপর কাঠের মেঝে বসে৷ দুমা, থালু, তার উপর ছোট ছোট ডালপালা৷ সবশেষে মাটি লেপে ছাদটি নিশ্ছিদ্র করা হয়৷

স্কুলভবনের মূল ছাদটি তৈরি আখেনের ছাত্রদের পক্ষে আরো সমস্যাকর, কেননা এই এলাকার জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে৷ ক্রমেই আরো বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে প্রথাগত সমান্তরাল মাটির ছাদে আর কাজ চলে না৷ কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার রাইনার লেৎসিউস ব্যাখ্যা দিলেন: ‘‘মাটির ছাদ বৃষ্টিধারার আঘাত সইতে পারে না৷ কাজেই সামান্য একটু ঢালু টিনের ছাদ দিয়ে জল যাতে ভালোভাবে বয়ে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে৷ কিন্তু আপাতত লাদাখের প্রথাগত বাড়ির আকৃতি বজায় রাখতে হবে, যাতে জনসাধারণ তা মেনে নেয়৷''

বাড়িটি যাতে সূর্যের তাপ ধরে রাখতে পারে, সে জন্য সেটা সূর্যের দিকে মুখ করে বানাতে হবে৷ মোটা দেওয়ালগুলো তাপ ধরে রাখে, সেই সঙ্গে জার্মানির মতো ডবল কাচের জানলা বসিয়ে বাইরের ঠাণ্ডা রোখা হয়৷ শুধু ‘পেন্ট রুফ' বা ওপরের ছাদটি ইউরোপীয় কায়দায় তৈরি হচ্ছে৷ ছ'মাসের মধ্যেই স্কুলের বাড়ি তৈরি শেষ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য