1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘লা টোমাটিনা’ – বন্দুক নয়, টম্যাটো নিয়ে যুদ্ধ

১৪ অক্টোবর ২০১১

স্পেনের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ভ্যালেন্সিয়া শহর৷ আর তারই অদূরে ছোট্ট, নাম না জানা গ্রাম ‘বুনিওল’৷ অথচ প্রতিবছর অগাস্ট মাসের শেষ বুধবারে হাজারো মানুষের গন্তব্যস্থান হয়ে উঠে গ্রামটি৷ চলে সম্মুখযুদ্ধ...

https://p.dw.com/p/12rid
টম্যাটোই হলো এ যুদ্ধের মূল অস্ত্রছবি: AP

গল্পের শুরু ‘জিন্দেগী না মিলেগি দোবারা' নামের একটা হিন্দি ছবি থেকে৷ মাস তিনেক আগে, এই জার্মানিতে বসেই দেখেছিলাম সিনেমাটি৷ আর দেখার পরই ঠিক করেছিলাম, ‘লা টোমাটিনা' উৎসবে যাবোই যাবো৷ যেমন ভাবা, তেমন কাজ৷

প্লেনের টিকিট কাটার পর ইন্টারনেট ঘেঁটে তথ্য জোগাড় করলাম৷ কখন, কোথায় হয় এই ‘ফেস্টিভ্যাল'৷ কী কী সাথে নিয়ে যেতে হবে, কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, ইত্যাদি৷ তারপর ‘লা টোমাটিনা ২০১১' শুরু হওয়া ঠিক আগে সাদা জামা-কাপড় আর রোদ-চশমা কিনে উড়ে গেলাম ভ্যালেন্সিয়ায়৷ পরের দিন বুনিওল-এ পৌঁছে তো আমার মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা! ছোট্ট সেই গ্রামটিতে আর যেন তিল ধারণের জায়গা নেই৷ কম করেও প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ হবে....আর ঐ সকাল-সকাল সকলেই ছুটছে ‘প্লাজা ডেল পুয়েব্লো'-র দিকে৷

Die Tomatina Tomatenschlacht in Spanien Flash-Galerie
টম্যাটো পিষে ধরে মাখিয়ে দেয় অন্যের গায়ে৷ মেতে ওঠে আনন্দে, উৎসবেছবি: dapd

প্লাজার চার্চ-বেলটায় ঢং ঢং করে সকাল ১০টা বাজলো৷ আর সঙ্গে সঙ্গেই হৈ হৈ করে উঠলো সবাই৷ প্রথম দিকটায় বুঝতেই পারছিলাম না কেন৷ তারপর দেখলাম, তালগাছের মতো লম্বা কাঠের খাম্বায় ঝোলানো মাংসটা নিয়ে টানাটানি করছে এক তরুণ৷ বুঝলাম, এটাই তাহলো ‘খামন' – স্পেনের ঐতিহ্যবাহী মাংস, যেটা টেনে নামানোর পরই শুরু হবে ‘যুদ্ধ'৷

হলোও তাই৷ আপাত শান্ত রাস্তাটা মুহূর্তেই পরিণত হলো যুদ্ধক্ষেত্রে৷ না গোলাগুলি বা বন্দুক নিয়ে নয়৷ এক্সত্রেমাদুরার টন টন টম্যাটোই হলো এ যুদ্ধের মূল অস্ত্র৷ একটার পর একটা ট্রাক থেকে পুষ্প বৃষ্টির মতো টম্যাটো আছড়ে পড়তে লাগলো মানুষের গায়ে, মাথায়, মুখে৷ সেগুলো তুলে নিয়েই একে-অন্যের দিকে টম্যাটো-নিক্ষেপ করতে থাকলো মানুষ তারা৷ আমিও বাদ গেলাম না৷ তবে শুধু টম্যাটোই নয়, রাস্তার আশে-পাশের বাড়িগুলি থেকে মাথার ওপর পড়তে থাকলো ঠান্ডা জলও৷ ঠিক যেন জলকামান!

ওপর থেকে পড়া ঠান্ডা জল যেন আরো উৎসাহিত করে তুললো উপস্থিত জনদের৷ কাছেই বাজছিল স্প্যানিশ মিউজিক৷ তারা তারই তালে-তালে শুরু করে দিল নাচ৷ শন্ডা-গুন্ডার মতো দেখতে কিছু অল্প বয়সি তরুণ নিজেদের জামা ছিঁড়ে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিল ইতিমধ্যেই৷ তাই ট্রাকগুলো চলে যেতে, রাস্তার মধ্যেই গড়াগড়ি শুরু করলো তারা৷ টম্যাটো পিষে ধরে মাখিয়ে দিলো অন্যের গায়ে৷ মেতে উঠলো আনন্দে, উৎসবে৷

Traditionelle Tomatenschlacht von Bunol
ট্রাকগুলো চলে যেতে, রাস্তার মধ্যেই গড়াগড়ি শুরু করে মানুষ...ছবি: picture-alliance / dpa

ততক্ষণে রক্তবন্যার জায়গায় টম্যাটোর বন্যা বয়ে গেছে পুরো রাস্তায়, গলির আনাচে-কানাচে৷ তবে এ যুদ্ধ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলে না৷ এর সময়সীমা মাত্র এক ঘণ্টা৷ তাই এক ঘণ্টা পরেই আর একটা সাইরেন বেজে ওঠে৷ আর তার পরপরই শুরু হয় বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার করার কাজ৷ সে কাজে কোমর বেঁধে লেগে যায়, বাচ্চা-বুড়ো সকলে৷

১৯৪৪ সালে ভ্যালেন্সিয়া থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ‘বুনিওল'-এর এই ছোট্ট গ্রামটিতে শুরু হয়েছিল ‘লা টোমাটিনা' উৎসব৷ অবাক করার বিষয়, এই উৎসব কিন্তু স্থানীয় কোনো ঐতিহ্য নয়৷ নিছকই মজার ছলে গ্রামের দুটি বাচ্চা টম্যাটো ছোঁড়াছুঁড়ির মধ্যে দিয়ে এই টম্যাটো-যুদ্ধ শুরু করেছিল৷ ১৯৫০ সালে এই যুদ্ধ বন্ধ করে দেওয়া হলেও, ১৯৫৭ সালে আবারো তা শুরু হয়৷ এরপর, ২০০২ সালে পর্যটকদের বিপুল উৎসাহ এবং যোগদানের কারণে স্পেনের সরকার একে ‘আন্তর্জাতিক পর্যটন উৎসব'-এর মর্যাদা দেয়৷ ‘লা টোমাটিনা'-কে ঘিরে সৃষ্টি হয় নানা গান, এমনকি হালে বলিউডেও স্থান করে নেয় উৎসবটি৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন