1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লিথুয়ানিয়া যেন শরণার্থীদের তীর্থ!

১ ডিসেম্বর ২০১০

বিভিন্ন অজুহাতে, বিভিন্ন কারণে গত এক শতাব্দী ধরেই লিথুয়ানিয়ায় অভিবাসীদের আনাগোনা বেড়েছে৷ এদের কেউ ১৯৪০’র দিকে সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে পালিয়ে এসেছেন, কেউ সোভিয়েতের পতনের পর, কেউবা এসেছেন নিছক বেঁচে থাকার তাগিদে৷

https://p.dw.com/p/QMWv
বেলারুশ থেকে অনেকেই লিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আসেছবি: Zentrum für Osteuropäische Forschungen in Litauen

আজকাল লিথুয়ানিয়া যেন পৃথিবীর তাবৎ শরণার্থীদের একটি আদর্শ ঠাঁই হয়ে উঠেছে৷ যদিও এই শরণার্থীদের আনাগোনার বিষয়টি স্থানীয়দের মানে লিথুয়ানিয়ানদের ইদানিং খুব একট পছন্দের বিষয় বলে মনে হচ্ছে না৷ কিন্তু তাতে এই শরণার্থীদের কিইবা আসে যায় ? লিথুয়ানিয়ার বিভিন্ন অংশে মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতে এইসব শরণার্থীকেন্দ্রগুলো সংখ্যাতেও বাড়ছে৷

এমনই একটি শরণার্থী কেন্দ্র রয়েছে পাবরাদে নামের একটি শান্ত শহরে৷ রাজধানী শহর থেকে উত্তরের দিকে মাত্র আধঘন্টার ড্রাইভ৷ মানে গাড়ি চালিয়ে পাবরাদে পৌঁছাতে মাত্র তিরিশ মিনিট লাগে৷ একটা পুরোনো মিলিটারি ব্যারাকেই এই কেন্দ্রটির জায়গা করা হয়েছে৷ এর দুইটি বাড়ি নিয়েই শরণার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের কাজ-কর্ম চলছে৷ এর একটিতে যেসব অবৈধ শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো হবে তাদের রাখা হয়৷ আর অন্য বাড়িটিতে যাদের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বা যাদের মামলা এখনো চলছে তাঁরা থাকেন৷

দ্বিতীয় বাড়িটির তিনতলায় থাকে দুই শরণার্থী বালক, এদের বয়স নয় থেকে দশ বছরের মধ্যে৷ আগত শরণার্থীদের মধ্যে এরা একেবারেই নতুন৷ সদ্য এসেছে৷ তারা সময় কাটায় টিভি দেখে৷ তাদের দু'বছরের ছোট্ট বোনটি এই ক্লেশকর জীবনের চালচিত্রে একেবারেই বেমানান, অন্তত এই শরণার্থী জীবনের দুঃখ-কষ্টের বাস্তবতায়৷

Die Grenze zwischen Litauen und Belarus verläuft durch das Dorf Norviliskes
সীমান্ত পেরিয়ে লিথুয়ানিয়ায় যাবার অপেক্ষাছবি: DW

এই দুই বালক আর ছোট্ট শিশুটির বাবার বয়সও খুব বেশি নয়৷ মাত্র পঁয়ত্রিশ৷ অবশ্য এই ক্লেশকর জীবনের ঘানি টানার প্রভাবে তাঁকে দেখতে খানিক বুড়োটেই দেখায়৷ স্বদেশ জর্জিয়া থেকে শরণার্থী হিসেবে এদেশে আসার পর কাজ খুঁজতে খুঁজতে আর সামান্য স্বস্তির জীবনের সন্ধানে তাঁর প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা রাশিয়া ছেড়েছি নিরুপায় হয়ে, সরকার আমাদেরকে এককথায় নিপীড়ন করছিল৷ কেবল রাশিয়ান ফেডারেশনের সরকারই নয়, মস্কোর কাছে তুলা নামের যে অঞ্চলটি থেকে আমরা এসেছি, সেই এলাকার প্রশাসনও বেশ নিষ্ঠুর আচরণই করছিল৷''

জর্জিয়ান এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীও একধরণের নিপীড়ন, অসাম্য আর বঞ্চনার শিকার হন রাশিয়ায়৷ গত বছরেও কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে তাঁরা ঝামেলায় পড়েছিলেন৷ শোনা গেল, ‘‘অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মচারী আমাদেরকে বলতে গেলে অপহরণই করেছিল৷ আর এর পর আমার স্ত্রীর মুক্তিপণ বাবদ চেয়েছিলো বিশাল অঙ্কের টাকা৷ ৫ লক্ষ রাশিয়ান রুবল, প্রায় তেরো হাজার ইউরো৷ আমরা সে টাকাও দিয়ে দিয়েছিলাম৷ কিন্তু এরপরও মনে হয়েছে, থাকাটা নিরাপদ নয়৷ বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য৷ ইউরোপিয় ইউনিয়নের সবচেয়ে কাছের দেশ বলে আমরা লিথুয়ানিয়াতেই চলে আসার চিন্তা করেছিলাম৷''

তো একারণেই জুলাইয়ের মাঝামাঝি একটা সময়ে সপরিবারে ট্রেনে চেপে তাঁরা বাল্টিক সাগরের কাছে রাশিয়ার ছিটমহল কালিলিনগ্রাদ থেকে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী শহর ভিলনিয়াস-এ নেমে পড়েছিলেন৷ কী চান তাঁরা এখন? বললেন, ‘‘আমাদের মুখ্য দাবি হচ্ছে- বৈধভাবে এখানে বেঁচে থাকার একটা সংস্থান করা৷ আমরা এদেশের সরকারের জন্য কোন বোঝা হতে চাই না৷ কাজের অনুমতি পেলে আমরা খেটেই খাবো৷''


সাবেক সোভিয়েতের অংশ লিথুয়ানিয়ার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন৷ ২০০৪ সালে এই দেশটি ইউরোপিয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ সঙ্গত কারণেই এরপর থেকেই অভিবাসী আর শরণার্থীদের দেশটি চুম্বকের অমোঘ আকর্ষণেই কাছে টানছে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোর কথা বিবেচনা করলে রাশিয়াই হচ্ছে প্রধান দেশ, যেখানকার মানুষ-জন অভিবাসী হতে লিথুয়ানিয়াতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পাড়ি জমাচ্ছে৷ গত বছর যে চারশো পঞ্চাশ জন লিথুয়ানিয়ায় অনুপ্রবেশ করেছেন এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষই- রাশিয়ার৷ অবশ্য এদের অধিকাংশকেই আবারো বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ জর্জিয়ার একজন বলছেন, ‘‘আমি মনে করি আমাদের এখানে রাখতে স্থানীয় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাঁদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করবেন৷ আর যদি নেহায়েৎ বিষয়টি ‘না' হয়ে যায়, যদি তারা আমাদেরকে রাজনৈতিক আশ্রয় না দেন, তাহলে আমরা ইউরোপের সর্বোচ্চ আদালতেই যাবো৷ যাতে করে আমরা লিথুয়ানিয়ায় থাকতে পারি৷ আমাদের যে আর অন্য কোন উপায় নেই৷''


লিথুয়ানিয়ার আইন অবশ্য সেখানকার রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের মামলা চলাকালীন সময়ে কাজ করার অনুমতি দেয় না৷ কিন্তু তাদের শরণার্থী কেন্দ্র বা অভিবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট আশ্রয়টি ছেড়ে যেকোন জায়গাতে যাওয়ার স্বাধীনতাটুকু রয়েছে৷ এরফলে অনেকেই এই চৌহদ্দিটুকু ডিঙিয়ে ছড়িয়ে পড়েছেন দেশটির বিভিন্ন অংশে৷ এটা নিশ্চিৎ যে, তাঁরা অন্তত এই ঘেরাটোপের বন্দি জীবনে আর ফিরছেন না৷ অবশ্য লিথুয়ানিয়ার এই কেন্দ্রে তারা চাইলেই ভাষা শিখতে পারেন, কম্পিউটারের বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন৷ স্থানীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের একটি ব্যবস্থাও এখানকার কর্তৃপক্ষ করেছেন৷ ফলে সব মিলিয়ে লিথুয়ানিয়া যেন অভিবাসীদের তীর্থেই পরিণত হয়েছে৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক