1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লেমুরদের দেশ মাডাগাস্কার

৩০ নভেম্বর ২০১৬

বিবর্তনের ইতিহাসে মাডাগাস্কারের জীববৈচিত্র্য যেমন অনন্য, তেমনই বিপন্ন৷ লেমুর জাতীয় প্রাণীদের ও তাদের বাসস্থানকে বাঁচানোর কাজে লেগেছেন একদল বিজ্ঞানী ও গবেষক, যেমন জার্মান প্রাইমেট সেন্টারের পেটার কাপেলার ও তাঁর সঙ্গীরা৷

https://p.dw.com/p/2TUrQ
Merkel und ein Lemur
জার্মানির একটি পার্কে মাডাগাস্কারের লেমুরের সঙ্গে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলছবি: picture-alliance/dpa/Stefan Sauer

লেমুরদের দেশ

কিরিন্ডির জঙ্গলে রাত ঘনিয়েছে৷ পশ্চিম মাডাগাস্কারের সাভানা অঞ্চলে দিনের বেলায় খুব গরম৷ কাজেই এখানকার অধিকাংশ প্রাণী নিশাচর, তাদের শুধু রাত্রেই দেখতে পাওয়া যায়৷ যেমন রং বদলাতে পারে এমন বহুরূপী গিরগিটি৷ অথবা মাউস লেমুর নামের প্রাণীটি৷ জার্মান প্রাইমেট সেন্টার (ডিপিজেড)-এর পেটার কাপেলার বলেন, ‘‘আমরা যারা দিনের বেলা ভালো দেখি....রাতে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গেলে আমাদের চমকে যেতে হয় যে, কত ধরনের প্রাণী রাতে এখানে ঘোরাফেরা করে৷ তারা কোথায় খাবার পায়, কোন ডালে বসে, কীভাবে তারা এই সম্পূর্ণ অন্ধকারে শিকারী জীবদের চিনতে পারে, ইত্যাদি৷’’

এই জঙ্গলে ন'ধরনের লেমুর বানর থাকে৷ জার্মান প্রাইমেট সেন্টারের বিহেভিওরাল বায়োলজিস্ট পেটার কাপেলার গত ২০ বছর ধরে লেমুরদের নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি তথাকথিত রেড লিস্টের জন্য তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন৷ লেমুরদের প্রায় সব ক'টি প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার পথে৷ প্রতিদিন সকালে গবেষকদের একটি দল কিরিন্ডির জঙ্গলে যায়৷ লেমুরদের সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য তাঁদের তথ্যের প্রয়োজন৷ গবেষকরা লেমুরদের পর্যবেক্ষণ করেন, তাদের যাওয়া-আসার ছকটা বোঝার চেষ্টা করেন, তাদের বিষ্ঠা সংগ্রহ করেন৷

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার বা আইইউসিএন-এর বিপন্ন প্রজাতিদের তালিকা বা রেড লিস্টে তোলার জন্য এই সব তথ্যের প্রয়োজন৷ রেড লিস্ট থেকে কোন প্রজাতি কতটা বিপন্ন, তা জানা যায়৷ পেটার কাপেলার বলেন, ‘‘রেড লিস্টে প্রতিটি প্রজাতি সম্পর্কে দু'টি প্রশ্নের উত্তর থাকে: প্রতিটি প্রজাতির আনুমানিক কত সংখ্যক প্রাণী এখনও জীবিত; তাদের সংখ্যা বিগত কয়েক বছরে কীভাবে বেড়েছে বা কমেছে৷ দ্বিতীয়ত, প্রজাতিটির হ্যাবিটাট বা বাসস্থান হিসেবে কী পরিমাণ জমি বজায় আছে৷''

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রাইমেট

মাডাগাস্কারের লেমুরদের পক্ষে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো মানুষ৷ কেননা লেমুররা যে জঙ্গলে থাকে, সেই জঙ্গল ক্রমে ছোট হয়ে আসার জন্য দায়ী হলো মানুষ৷ মানুষজন এসে জঙ্গল কেটে ফেলে; তার বদলে ভুট্টা আর চীনেবাদামের চাষ করে, যদিও মাটি খুব উর্বর নয়৷ বিজ্ঞানীদের পক্ষে পরিস্থিতি হতাশাজনক৷ জঙ্গল উধাও হবার ফলে কোনো কোনো প্রজাতির লেমুরের দেখা পাওয়াই মুশকিল৷ যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রাইমেট – অর্থাৎ সর্বোচ্চ শ্রেণির স্তন্যপায়ী প্রাণী৷ জীবটির নাম মাদাম বার্টস্ মাউস লেমুর৷

পেটার কাপেলার বলেন, ‘‘গ্রে বা ধূসর মাউস লেমুরের মতো মাদাম বার্টস্ মাউস লেমুরও এই জঙ্গলে পাওয়া যায় – কিন্তু শুধুমাত্র এই জঙ্গলে! সারা বিশ্বে শুধুমাত্র এই কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা হল তাদের বাসস্থান৷ কাজেই এখানে শত শত হেক্টার জঙ্গল কেটে ফেলার ফলে মাদাম বার্টস্ মাউস লেমুর সত্যিই বিপন্ন হয়ে পড়েছে, কেননা তাদের হ্যাবিটাটের দশ শতাংশের বেশি উধাও হয়েছে৷''

কাজেই মাদাম বার্টস্ মাউস লেমুর লাল তালিকার একেবারে ওপরে৷

মাদাগাস্কারের লেমুর বানর

স্ট্রেস হর্মোন

রিসার্চ স্টেশনের একটি ছোট পরীক্ষাগারে লেমুরদের বিষ্ঠা রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে৷ ক্লাউডিয়া ফিশটেল লেমুরদের স্ট্রেস হর্মোন মেপে দেখছেন৷ লেমুরদের বিষ্ঠায় এই সব হর্মোন উচ্চ পরিমাণে পাওয়া গেলে, তা থেকে বোঝা যায়, প্রাণীগুলি কী পরিমাণ চাপের মধ্য রয়েছে৷ ক্লাউডিয়া বলেন, ‘‘ওটা স্বভাবতই একটা সূচক যে, এই প্রাণীগুলির স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি সম্ভবত খুব ভালো নয়, কেননা দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস বা চাপ লেমুরদের ক্ষেত্রে  – মানুষদের মতোই – স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে৷ সে হিসেবে এই তথ্যটাও রেড লিস্টের তোলার সময় বিবেচনা করা হবে৷''

রেড লিস্টের কাজটা সময়সাপেক্ষ৷ গবেষকদের আসল কাজ হলো গবেষণা; রেড লিস্টের কাজটা তাঁদের অতিরিক্ত কাজ৷ কিন্তু প্রজাতিগুলিকে তাদের বিপন্নতার মাত্রা অনুযায়ী পৃথক করা থেকে জীববৈচিত্র্যের একটা আন্দাজ পাওয়া যায়৷ আইইউসিএন-এর রেড লিস্টে ৮৩,০০০ জীবজন্তু ও উদ্ভিদ আছে৷ তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বিলুপ্ত হওয়ার মুখে; মাদাম বার্টস্ মাউস লেমুর এই পর্যায়ে পড়ে৷ কিন্তু বিপন্ন প্রজাতিরা যে আবার ‘সুস্থ' হয়ে উঠতে পারে,তারও দৃষ্টান্ত আছে৷

পেটার কাপেলার-এর স্বপ্ন হলো, কিরিন্ডির জঙ্গলের লেমুরদের ক্ষেত্রেও তা একদিন বলা যাবে৷

প্রতিবেদন: মিশায়েল ভেৎসেল/এসি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য