1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোরেলাই সেতু কি বন্ধন গড়বে, না বন্ধনচ্ছেদ

৩০ জুলাই ২০১০

লোরেলাই - অনেকে বলেন জার্মানির সবচেয়ে সুন্দর স্থান এটি৷ রাইনের এই উপত্যকা পর্যটকদের টেনে আনছে বহুকাল ধরে৷ আর ইউনেস্কোও বিশ্বঐতিহ্যের তালিকায় যোগ করেছে লোরেলাইকে৷

https://p.dw.com/p/OY55
লোরেলাই’এর মৎস্যকন্যাছবি: DW/Nelioubin

সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের যেন একটুও ক্ষতি না হয়, সে জন্য সবসময় সজাগ দৃষ্টি রয়েছে ইউনেস্কোর৷

রাইনল্যান্ড প্যালাটিনেট রাজ্যে অবস্থান লোরেলাইয়ের৷ রাজ্য সরকার সেখানে রাইনের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করতে চাইলে তাতে বাধ সাধে ইউনেস্কো৷ তবে এখন তাতে নাকি সায় মিলতে যাচ্ছে৷ এমন দাবি করেছে রাইনল্যান্ড প্যালাটিনেট রাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়৷

কোবলেন্স ও মাইন্সের মাঝে রাইনের ওপর কোনো সেতু নেই, নেই কোনো টানেলও৷ কারণ একটাই, যদি পরিবেশের ক্ষতি হয়৷ তাই লোরেলাইয়ের কাছে মিটেলরাইনব্রুকে সেতু নির্মাণের কথা যখন ওঠে, তখন প্রতিবাদ আসে৷ পরিবেশবাদীরা বলেন, সেইন্ট গোয়ার্সহাউসেনের কাছে সরকার যে সেতু নির্মাণ করতে চাইছে, তাতে সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে৷ সৌন্দর্য হারাবে লোরেলাই৷ তবে এসব আপত্তি উপেক্ষা করেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকে সরকার৷

Welterbe Mittelrhein Loreley (Lorelei)
রাইনের সবচেয়ে সংকীর্ণ এলাকা লোরেলাইয়েছবি: DW/Nelioubin

এখন বলা হচ্ছে, ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্য বিষয়ক এবারের বৈঠকে লোরেলাইয়ে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবটি উঠেছে৷ ব্রাজিলে এখন চলছে সে বৈঠক৷ তাতে শর্ত সাপেক্ষে সেতু নির্মাণের পক্ষে সায় মিলেছে৷ শর্তটি হলো, সেতু নির্মাণের পুরো পরিকল্পনা ইউনেস্কোর কাছে জমা দিতে হবে৷ আর সেতুর কারণে সম্ভাব্য পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবেলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তাও জানাতে হবে সবিস্তারে৷ এসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তবেই মিলবে সেতু নির্মাণের ছাড়পত্র৷

লোরেলাই শব্দের অর্থ শিলারাশির গুঞ্জরণ৷ সুইজারল্যান্ড থেকে উত্তর মহাসাগর পর্যন্ত বয়ে চলা রাইনের সবচেয়ে সংকীর্ণ এলাকা লোরেলাইয়ে৷ তবে গতিধারা সংকীর্ণ হলে কী হবে, স্রোত কিন্তু অন্য স্থানের চেয়ে প্রবল৷ ছোট একটি জলপ্রপাতও রয়েছে৷ আর তার কুলুকুলু ধ্বনি থেকেই লোরেলাই নামের উৎপত্তি৷ লোরেলাইয়ে পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে এঁকে বেঁকে চলেছে রাইন৷ আঁকাবাঁকা সেই পথে প্রবল স্রোতের মধ্যে নৌকা চালানো দুরূহ৷ আর এই নিয়ে রয়েছে কল্পকথাও৷ আর যা পর্যটকেদের আরো আগ্রহী করে তোলে লোরেলাইকে নিয়ে৷ বলা হয়, কোনো এক কালে মৎস্যকন্যা ছিলো লোরেলাইয়ে৷ গানের মায়ায় নাবিকদের সম্মোহিত করে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেত সে৷ ১৮ শতকের গোড়ার দিকে জার্মান কবি ক্লেমেন্স ব্রেনটানো লিখেছেন, পরে প্রেমে পড়ে মৎস্যকন্যার বোধোদয় হয়৷ তবে তাঁর প্রেমিক ছেড়ে যায় তাকে৷ আর প্রেমিককে খুঁজতে গিয়ে উপত্যকা থেকে পড়ে গিয়ে তার সলিল সমাধি ঘটে৷ মতান্তরে এটি আত্মহত্যারই ঘটনা৷ লোরেলাই নিয়ে কবিতা লিখেছেন হাইনরিশ হাইনেও৷ সে কবিতা এখন চিরায়ত এক গান৷

Welterbe Mittelrhein Loreley (Lorelei)
লোরেলাই’এর মৎস্যকন্যার গানের মায়া নাবিকদের সম্মোহিত করে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতছবি: DW/Nelioubin

শুধু প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যই নয়, মধ্যযুগে নির্মিত অনেকগুলো প্রাসাদ ও দুর্গ ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে লোরেলাইয়ের সৌন্দর্যে৷

বলা হয়, রাইন এখনো কলকল শব্দে শুনিয়ে যায় মৎস্যকন্যা লোরেলাইয়ের কথা৷ একটু কান পাতলেই শোনা যায় তা৷ এখন প্রশ্ন হলো, আবকাঠামো উন্নয়নের নামে সেতু নির্মাণ হলে কি আর শোনা যাবে সে শব্দ৷ নাকি সেইসব কল্পকথার সঙ্গে মানুষের বন্ধনচ্ছেদ করবে৷ কল্পকথাগুলো গল্প হয়ে ঠাঁই নেবে শুধু বইয়ের পাতায়৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক