1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডিক্লোফেনাক

নরমান স্ট্রিগেল/এসি২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪

শকুনি নির্বংশ হচ্ছে বলে কেউ কান্নাকাটি করে না৷ অথচ শকুনিরা পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে৷ ওদিকে ভারতের পর এবার ইউরোপেও – বিশেষ করে স্পেনে – শকুনিদের নির্বংশ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ডিক্লোফেনাক ব্যবহার করে৷

https://p.dw.com/p/1DFBL
Weißrückengeier
ছবি: imago/Anka Agency

কথায় বলে ‘স্ক্যাভেঞ্জার', অর্থাৎ যে সব পশু-পাখি মরা জীবজন্তুর পচা মাংস খেয়ে বেঁচে থাকে৷ যাদের মধ্যে প্রথমেই আসে শকুনি৷ ইউরোপের মধ্যে স্পেনেই শকুনির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ তবে এ দেশেও শকুনিদের জীবনধারণ করা ক্রমেই আরো বেশি শক্ত হয়ে উঠছে৷

এই ‘ব্ল্যাক ভালচার' বা কালো শকুনিটি আর মুক্ত প্রকৃতিতে বাস করে না৷ বিষ দেওয়া মাংসের টোপ খাওয়ার ফলে পাখিটাকে কাস্তিলিয়ার এই অ্যানিমাল শেল্টার বা পশু ত্রাণ কেন্দ্রে আনা হয়েছে – এখানে তাকে খাইয়ে-দাইয়ে আবার সুস্থ করা হচ্ছে৷ শকুনিটা প্রায় মরতে বসেছিল৷ পাখিরা একবার বিষ খেলে তাদের বাঁচানো শক্ত৷ কাস্তিলিয়া প্রদেশের লা মাঞ্চা'য় পশু ত্রাণ কেন্দ্রের কর্মী ভিক্টর দিয়েস বলেন: ‘‘সেটা অবশ্য বিষের উপর নির্ভর করবে৷ এমন সব বিষ আছে, যেগুলো খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে৷ আবার এমন বিষ আছে, যেগুলোর প্রতিক্রিয়া দেরিতে হয়৷ কিন্তু বস্তুত সব বিষই মারাত্মক৷ বিষ খাওয়ার কারণে এখানে যে সব জীবজন্তুদের আনা হয়, তাদের অধিকাংশ বাঁচে না৷''

শুধুমাত্র সিউদাদ রেয়াল প্রদেশেই এ বছর পাঁচটি শকুনিকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গেছে৷ তাদের সকলেই বিষ দেওয়া মাংস খেয়েছিল

‘বিষ সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে'

সিউদাদ রেয়াল থেকে পশু ত্রাণ কেন্দ্রের কর্মীরা বেরিয়েছেন রোঁদে৷ খুঁজছেন মৃত পশুপাখি; বিষপ্রয়োগের হদিশ; যারা বিষ দিয়েছে, তাদেরও খোঁজ করছেন ৷ খুঁজেও পান তাঁরা – অবশ্য না খুঁজে পেলেই বোধহয় ভালো হতো, কেননা তারা খুঁজে পেলেন একটি মৃত ‘বুটেড ইগল' বা বাজপাখি৷ পাখিটা হয়ত বিষ দেওয়া টোপ গিলেছিল৷ বাজপাখিরা তো শুধু শিকারই করে না, তারা পচা মাংসও খায়৷ পশু ত্রাণ কেন্দ্রের লুইস ফিদেল মন্দেখার বলেন:

‘‘আসলে এই বিষ দেওয়া মাংস শকুনি কিংবা বাজপাখির জন্য রাখা হয়নি৷ এগুলোর লক্ষ্য ছিল শেয়াল৷ কিন্তু পাখিরা যখন সেই বিষ দেওয়া মাংস খায়, তখন সেই বিষ সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে এবং পাখিগুলো মারা যায়৷''

বিষ দেওয়া পচা মাংসের টোপ ফেলে খামারচাষিরা তাদের গৃহপালিত পশুদের শিকারী জীবজন্তুর হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন৷ আশির দশক অবধি আইনে যার কোনো বাধা ছিল না৷ আজ এভাবে বিষ দিলে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে৷ মনেখারের মতে: ‘‘এই বিষ দেওয়াটা একটা খারাপ অভ্যাস, যা চাষিদের মধ্যে এখনও পুরোপুরি দূর হয়নি৷ আমাদের ও নিয়ে আরো কাজ করতে হবে৷ কেননা এ কথা সত্যি যে, গত কয়েক বছরে বিষ দেওয়ার ঘটনা আরো বেড়েছে৷''

মরাপচা জীবজন্তুর লাশ পরিষ্কার করে যে সব স্ক্যাভেঞ্জার পাখি, তারাও যে সেই বিষে মরছে, তা নিয়ে খামারচাষিদের কোনো মাথাব্যথা নেই৷ খামারচাষি ভিক্টর মার্টিন বলেন যে, তিনি নিজে বিষ প্রয়োগ করেন না বটে, কিন্তু তাঁকেও সে-কথা মাঝে-মধ্যে ভাবতে হয়েছে৷ সেগোভিয়া প্রদেশে তাঁর খামারে প্রায় শ'দুয়েক গরু-বাছুর আছে৷ তিনি নিজে দেখেছেন, শকুনিরা কী ভাবে একটি বাছুরকে আক্রমণ করছে: ‘‘পাঁচটা শকুনি মিলে বাছুরটার নাড়িভুঁড়ি ঠুকরে খেয়েছে৷ আমি তাদের দিকে পাথর ছুঁড়েছি; মা-গরুটা শিং দিয়ে শকুনিগুলোকে তাড়িয়েছে৷ তাও বাছুরটাকে বাঁচানো যায়নি৷ এর আগেও ওরা আরেকটা বাছুরকে মেরেছে – যদিও আমি জানি না, বাছুরটা তার আগেই মারা গেছিল কিনা৷ তবে আমার ধারণা বাছুরটা বেঁচেই ছিল৷''

‘শকুনিরা ডিক্লোফেনাক সহ্য করতে পারে না'

খামারচাষিরা শকুনিদের বিশেষ সুনজরে দেখে না এবং সেই কারণে তারা বিষ দেওয়া টোপ রাখে – ইউরোপের শকুনিদের সেটাই একমাত্র সমস্যা নয়৷ তাদের নতুন সমস্যা হলো: স্পেন এবার শূকর ও গরুবাছুর পালনের জন্য ডিক্লোফেনাক নামের একটি অ্যাস্পিরিন গোত্রীয় ওষুধ বাজারে আসতে দিয়েছে: অথচ ভারতে এই ডিক্লোফেনাক-এর কারণেই শকুনি বংশ প্রায় নির্বংশ হতে চলেছে৷ লেইদা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী আন্তোনি মারগালিদা বলেন: ‘‘এটা একটা বড় বিপদ৷ কেননা এ ধরনের ওষুধ খাওয়া মরা জীবজন্তু মাঠে-ঘাটে পড়ে থাকতে পারে৷ মারা যাওয়ার সাত ঘণ্টার মধ্যে শকুনিরা যদি সেই মাংস খায়, তাহলে তাদের নিজেদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে – কেননা শকুনিরা ডিক্লোফেনাক সহ্য করতে পারে না৷ এর ফলে তাদের কিডনি ফেল করে ও তারা সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়৷''

স্পেনে আজও প্রায় ৮০ হাজার শকুনি আছে৷ তারা প্রতি বছর দশ হাজার টন জীবজন্তুর লাশ পরিষ্কার করে৷ এভাবে তারা একটা বড় জনস্বাস্থ্যগত সমস্যার সমাধান করে – সে-কথাটাও কি ভেবে দেখা দরকার নয়?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য