1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

‘২০ ভাগ গর্ভপাত প্রাকৃতিক নিয়মে হয়’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৭ মার্চ ২০১৭

যারা বেশি বেশি গর্ভপাত করায় তাদের ভবিষ্যতে অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ ভবিষ্যতে আর সন্তান নাও হতে পারে৷ জরায়ুতে সংক্রমণ হতে পারে৷ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. নাসিমা বেগম৷

https://p.dw.com/p/2Ydjv
Krankenhaus in Bangladesch
ছবি: picture-alliance/dpa

এছাড়া গর্ভপাত করালে পিরিয়ড নিয়মিত না হওয়াসহ অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান তিনি৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন অধ্যাপক ডা. নাসিমা বেগম৷ তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের সাবেক প্রধান এবং বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের চেয়ারম্যান৷

ডয়চে ভেলে: গর্ভপাত কী এবং এটা কেন হয়?

অধ্যাপক ডা. নাসিমা বেগম: মেয়েরা যখন অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী হয় তখন একশ' জনের মধ্যে ২০ জনের গর্ভপাত হয়ে যায়৷ এটা একটা স্বাভাবিক নিয়ম, প্রাকৃতিক নিয়ম৷ গাছের যেমন ২০ ভাগ ফল পরিপুষ্ট হয় না, তেমনি ২০ ভাগ ভ্রুণ পরিপুষ্ট হয় না৷ এগুলোর প্রধান কারণ হচ্ছে জিনগত, ক্রোমোজমাল অ্যাবনর্মালিটি, মেয়েদের বা ছেলেদের ডিম্বানু বা শুক্রানুর ভেতরে যে ফলটা হয়, সেখানে যদি কোনো ‘ডিফেক্ট' থাকে, তখন এমনটা হতে পারে৷ এটাকেই মেইন কারণ হিসেবে ধরা হয়৷ এছাড়াও অনেক কারণ আছে৷ জরায়ুতে যদি কোনো ডিফেক্ট থাকে বা মহিলাদের ডায়াবেটিস, কিডনিতে, থাইরয়েডে সমস্যা বা ভাইরাল জ্বর হয়, এমনকি মানসিক কারণেও গর্ভপাত হতে পারে৷ অনেক সময় দেখা যায়, গর্ভপাতের কোনো কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না৷ এটা প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারেই হয়ে থাকে৷

Dr. Nasima Begum for Alaap - MP3-Stereo

গর্ভপাতের লক্ষণ কী?

বিশেষ করে তিন মাস বা কারো কারো ক্ষেত্রে ৬ মাসের মধ্যে তলপেটে ব্যথা ও রক্তপাত শুরু হয়৷ আস্তে আস্তে এই ব্যথা বাড়তে থাকে৷ এতে জরায়ুর মুখ খুলে যায় এবং পুরো বা আংশিকভাবে চাকার মতো বা মাংস দলা বের হয়ে আসে ও ব্লিডিং হতে থাকে৷ এগুলোই সাধারণত গর্ভপাতের লক্ষণ৷

গর্ভপাতের শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি কী কী?

গর্ভপাতের শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি অনেকখানি আছে৷ একটা মেয়ে যদি সন্তান চায় এবং তার যদি গর্ভপাত হয়ে যায়, তাহলে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে৷ গর্ভপাতের কারণে রক্ত বের হতে হতে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়৷ কারো যদি বেশি রক্তপাত হয় তাহলে সে শকে চলে যেতে পারে বা মৃত্যুর মুখেও পতিত হতে পারে৷ গর্ভপাতের ফলে সে যদি আনহাইজেনিক অবস্থায় থাকে দীর্ঘদিন, এভাবে থাকলে সেপটিক অ্যাবরশন বা পরবর্তীতে তার অনেক ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে৷

গর্ভপাত কতদিনের মধ্যে হয়?

সাধারণতো তিন মাসের মধ্যে হয়৷ ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে গেছে৷ এছাড়া বাকিদের ছ’মাস বা ২৮ সপ্তাহের মধ্যে হতে দেখা যায়৷ তবে বেশিরভাগই প্রথম তিন মাসের মধ্যে হয়ে থাকে৷

গর্ভপাত কী হত্যার শামিল?

প্রশ্নটা ভিন্ন৷ যেটা অটোমেটিক হয়ে যাচ্ছে, সেটা তো আর হত্যার শামিল বলা যাবে না৷ অ্যাবনরমাল শিশুগুলোই সাধারণত ঝড়ে যায়৷  আমরা ডাক্তাররা কোনো মহিলার শারীরিক কারণ, স্বাস্থ্যগত কারণ, এছাড়া এমন কোনো কারণ আছে যেখানে মেডিক্যাল ইনডিকেশন আছে, সেখানে মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগনেন্সিও আছে৷ এখানে আগে মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি৷ মায়ের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, কিডনির সমস্যা বা লিভারের সমস্যার কারণে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয় যেখানে, সেখানে আমরা মেডিক্যাল টার্মিনেশন করতে পারি৷ কিন্তু যেখানে অবৈধভাবে গর্ভাপাত করায়, সেখানে অনৈতিকতার প্রশ্ন আছে৷

চিকিৎসা বিজ্ঞানে গর্ভপাতকে কতটা সমর্থন করা হয়?

চিকিৎসা বিজ্ঞান গর্ভপাতকে সেভাবে সমর্থন না করলেও মেডিক্যাল টার্মিনেশনে এটা করতে হয়৷ এটাকে আমরা সমর্থন করি৷ যার অনেকগুলো ইন্ডিকেশন আছে৷ সামাজিক কারণও রয়েছে৷ ধরুন, ধর্ষণ বা খারাপ কোনো দুর্ঘটনা অথবা ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের কোনো ফেইলর মেথডেও মেডিক্যাল টার্মিনেশন বা গর্ভপাত এখন অনেক দেশেও সরকারই করার অনুমতি দিয়েছে৷ আমাদের দেশেও আমরা মেডিসিনের মাধ্যমে গর্ভপাত করে থাকি৷ অথবা সার্জিক্যাল এমআরের মাধ্যমেও করা যেতে পারে৷ যেখানে পরিবারপরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যর্থ হয় অথবা আনপ্ল্যান্ড প্রেগনেন্সি বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, সেখানে তো এটার মূল্য কিছুটা থাকেই৷

গর্ভপাত কীভাবে এড়ানো যায়?

গর্ভপাত এড়াতে হলে প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যগত চেকআপ করতে হবে৷ কোনো অসংগতি বা সমস্যা বা রোগ থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে৷ সঠিকভাবে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করলে গর্ভপাত এড়ানো সম্ভব হবে৷ স্বামী বা স্ত্রী শুধু নয়, সমাজের সবার সচেতনতা তৈরি হলে এটা এড়ানো সম্ভব৷

গর্ভপাত হওয়া একজন নারী  কী কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন?

যাদের বেশি বেশি গর্ভপাত হয়, তাদের তো সমাজিক সমস্যা আছেই৷ যাদের সন্তান নেই, তাদের তো সমাজে খারাপ অবস্থার মধ্যে থাকতে হয়৷ আর যারা বেশি বেশি গর্ভপাত করায়, তাদের ভবিষ্যতে অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, ভবিষ্যতে আর সন্তান না-ও হতে পারে৷ যৌন প্রদাহ, জরায়ুতে সংক্রমণ হতে পারে৷ পিরিয়ড নিয়মিত না হওয়াসহ অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ এগুলোকে আমরা সব সময় নিরুৎসাহিত করি৷

গর্ভপাতকে কী উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিত করা উচিত?

যারা অবৈধভাবে গর্ভপাত করান বা আনহাইজেনিকভাবে গর্ভপাত করান, তাদের বা আনসেফ গর্ভপাতকে অবশ্যই নিরুৎসাহিত করা উচিত৷ তবে একটা পার্ট রয়ে গেছে মেডিক্যাল টার্মিনেশন৷ এটা ডক্টরদের কাছে থেকে যাবে৷ এটার প্রয়োজন থাকলে আমরা ডক্টররা সব সময় নেব৷ যারা অনৈতিকভাবে বা অবৈধভাবে এটা করাচ্ছে, সেটা আমরা সব সময় নিরুৎসাহিত করব৷ সেটা সামাজিক অবক্ষয়, শারীরিক বা মানসিক সব দিক থেকেই ক্ষতিকর৷

যারা সন্তান নিতে চান, গর্ভপাত এড়াতে তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

আমার পরামর্শ হলো – তারা সম্পূর্ণভাবে সুস্থ আছেন কিনা তা দেখার জন্য তাদের শারীরিক চেকআপ দরকার৷ যেমন ইউরিনারি ইনফেকশনের চিকিৎসা নিয়ে নেয়াই ভালো৷ ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রোগ থাকলে সেটা আগে থেকেই সারিয়ে নেয়া ভালো৷ এটার জন্য তাকে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে৷ আমরা কিছু ওষুধ দেই, যেমন ফলিক অ্যাসিড, যাতে গর্ভপাত না হয় সেজন্য৷ এই ফলিক অ্যাডিস বা ওষুধটা অনেক কার্যকরী৷ যে সমস্ত কারণে গর্ভপাত হতে পারে, সে জন্য আমরা তাদের পরামর্শ দিতে পারি৷ এর জন্য শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই তাদের এগুনো উচিত৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য